Image description

পদোন্নতি সংক্রান্ত নিয়ম-নীতি মানছেন না জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) চেয়ারম্যান আব্দুর রহমান খান। ঘনিষ্ঠদের পাশে রাখতে সদস্য পদে গ্রেড-২ এর দুই পদের বিপরীতে চার কর্মকর্তাকে পদোন্নতি দিচ্ছেন তিনি। এনবিআরের অর্গানোগ্রাম অনুযায়ী, সদস্য পদে কাস্টমস-ভ্যাটের ৮ জন কর্মকর্তার বদলে এখন আছেন ১০ জন। নতুন করে পদোন্নতির সুপারিশ পাওয়া কর্মকর্তাদের মধ্যে একজনের বিরুদ্ধে আদালতে বিদেশযাত্রায় নিষেধাজ্ঞাও রয়েছে। এনবিআর বিলুপ্তির অধ্যাদেশ বাতিলের দাবিতে চলমান আন্দোলনের মধ্যে গ্রেড-২ পদে পদোন্নতির সুপারিশ করেছে সুপিরিয়র সিলেকশন বোর্ড বিসিএস (শুল্ক ও আবগারি)। অভিযোগ রয়েছে, এনবিআর আলাদা করার খসড়া অধ্যাদেশ অনুমোদনের পর গড়ে ওঠা কর্মকর্তা-কর্মচারীদের আন্দোলন দমাতে সক্রিয় এনবিআরের তিন সদস্যকে পুরস্কার হিসেবে এই পদোন্নতি দেওয়া হচ্ছে। গত রোববার জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের ঊর্ধ্বতন নিয়োগ-৩ শাখা থেকে উপসচিব তৌহিদ বিন হাসান স্বাক্ষরিত একটি কার্যবিবরণী সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।

সূত্র জানায়, এনবিআর পৃথকীকরণের খসড়া অধ্যাদেশ অনুমোদনের পর থেকে আন্দোলনে নামেন এনবিআরের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা। এরই মধ্যে গত ৮ মে সুপিরিয়র সিলেকশন বোর্ড বিসিএসের (শুল্ক ও আবগারি) সভা বসে। এতে এনবিআরের সদস্য পদে গ্রেড-২-এর দুটি পদের বিপরীতে ৪ কর্মকর্তাকে পদোন্নতির সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। এসএসবি সভায় গ্রেড-২ পদে বিসিএস-১৩ ব্যাচের কাজী মোস্তাফিজুর রহমান ও বিসিএস-১৫ ব্যাচের মুহাম্মদ মুবিনুল কবীর, মোহাম্মদ বেলাল হোসেন চৌধুরী এবং মো. মোয়াজ্জেম হোসেনকে পদোন্নতির সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। কিন্তু এনবিআরের অর্গানোগ্রাম অনুযায়ী, বর্তমানে এনবিআরের শুল্ক ও আবগারি ক্যাডারভুক্ত কর্মকর্তা সদস্যের পদ রয়েছে ৮টি। এর মধ্যে তিনটি গ্রেড-১ আর বাকি পাঁচটি হচ্ছে গ্রেড-২। বর্তমানে এনবিআরে সদস্য গ্রেড-২ হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন তিনজন কর্মকর্তা। অর্থাৎ এনবিআরের কাস্টমস-ভ্যাটে সদস্যের গ্রেড-২-এ পদ রয়েছে মাত্র দুটি। কিন্তু এই দুই পদের বিপরীতে চার কর্মকর্তার পদোন্নতির সিদ্ধান্তে নানা প্রশ্নের জন্ম দিয়েছে।

জানতে চাইলে অভ্যন্তরীণ সম্পদ বিভাগের যুগ্ম সচিব সেলিনা খানম কালবেলাকে বলেন, এসএসবিতে এনবিআরের সদস্য পদে একটি পদোন্নতি হয়েছে। এখনো প্রজ্ঞাপন হয়নি। এনবিআরের সদস্য গ্রেড-২-এর দুই পদের বিপরীতে কীভাবে চার কর্মকর্তাকে পদোন্নতি দেওয়া হয়—এমন প্রশ্নের জবাবে এই যুগ্ম সচিব বলেন, বিষয়টি এখনো আমার কাছে আসেনি। আর খালি পদের বাইরে পদোন্নতির সুযোগ নেই। বিষয়টি এলে আমাকে দেখতে হবে। তবে পদোন্নতির ক্ষেত্রে আইনি ব্যত্যয় হবে না। আইনে যা আছে, সেই অনুযায়ী হবে।

এনবিআর সূত্র জানায়, খসড়া অধ্যাদেশ বাতিলের দাবিতে কর্মকর্তা-কর্মচারীদের আন্দোলনের শুরুতে তাদের সঙ্গে একাত্মতা প্রকাশ করে বিসিএস ট্যাক্সেশন ও বিসিএস কাস্টমস ও ভ্যাট অ্যাসোসিয়েশন। দুই অ্যাসোসিয়েশন আলাদাভাবে বিশেষ সাধারণ সভাও করে। যৌথভাবে খসড়া বাতিলের দাবি জানান তারা। এরই মধ্যে এনবিআর চেয়ারম্যান আন্দোলন না করার জন্য অ্যাসোসিয়েশনের নেতাদের চাপ দেন। একপর্যায়ে তাদের পদোন্নতির বিষয়টিও আলোচনায় আসে। এসব কারণে আন্দোলনের মধ্যেই বিসিএস ট্যাক্সেস অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি ও এক কর কর্মকর্তাকে সদস্য হিসেবে চলতি দায়িত্ব দেওয়া হয়। বিষয়টি না মানায় শুল্ক বিভাগের মহাসচিবসহ দুই কর্মকর্তার ওপর চাপ তৈরি করা হয়। পরবর্তী সময়ে বিষয়টি নিয়ে দুই অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি ও মহাসচিবের সঙ্গে বসেন অর্থ উপদেষ্টা। এতে কাস্টমস-ভ্যাট অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতিও ছিলেন। এরই মধ্যে গত ১২ মে অধ্যাদেশ জারি হওয়ার গুঞ্জন শুনে সকাল থেকে রাজস্ব ভবনে জড়ো হতে থাকেন কর্মকর্তা-কর্মচারীরা। সেদিন বিকেলেও ট্যাক্সেস অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি-মহাসচিব ও কাস্টমস-ভ্যাট অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতির সঙ্গে আলোচনায় বসেন কর্মকর্তা-কর্মচারীরা। সর্বশেষ তারা এনবিআর সংস্কারের পরামর্শক কমিটির প্রতিবেদন প্রকাশের দাবি জানান। কিন্তু অ্যাসোসিয়েশনের নেতারা কোনো সিদ্ধান্ত ছাড়া বেরিয়ে যান। এদিন রাতেই এনবিআরের কাস্টমস-ট্যাক্সের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা মিলে এনবিআর ঐক্য পরিষদ নামে একটি প্ল্যাটফর্ম গঠন করেন। একই সঙ্গে পরদিন অবস্থান ধর্মঘটের ডাক দেন। সেই ১২ মে মধ্যরাতে এনবিআর বিলুপ্ত করে দুটি বিভাগ করার অধ্যাদেশ জারি করে সরকার। এতে ক্ষিপ্ত হন কর্মকর্তা-কর্মচারীরা। তারা গণহারে বিসিএস ট্যাক্সেস অ্যাসোসিয়েশন ও বিসিএস কাস্টমস-ভ্যাট অ্যাসোসিয়েশন থেকে পদত্যাগ করেন। তবে পদত্যাগ করেননি শুধু বিসিএস কাস্টমস-ভ্যাট অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতিসহ এক কার্যনির্বাহী সদস্য। তারা দুজনই এই আন্দোলনের মধ্যে গত ৮ মে গ্রেড-২ হিসেবে পদোন্নতির সুপারিশপ্রাপ্ত হয়েছেন।

বিসিএস কাস্টম-ভ্যাট অ্যাসোসিয়েশনের এই সভাপতির পদোন্নতি আন্দোলন দমনের শর্তে বলেও অভিযোগ করেছেন কর্মকর্তা-কর্মচারীরা। এ ছাড়া এনবিআর চেয়ারম্যান হিসেবে আব্দুর রহমান খান যোগদানের পর থেকে খুবই দাপুটে সদ্য পদোন্নতির সুপারিশপ্রাপ্ত কর্মকর্তা বেলাল হোসেন চৌধুরী। তার বিরুদ্ধে অনিয়মের অভিযোগ জমা পড়েছে দুর্নীতি দমন কমিশনেও (দুদক)। দুদকের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে তার বিদেশযাত্রায় নিষেধাজ্ঞাও রয়েছে। আদালতের এই নিষেধাজ্ঞার পর এনবিআর চেয়ারম্যান তাকে ভ্যাট পলিসি থেকে ভ্যাট বাস্তবায়ন শাখার দায়িত্ব দেন।

এ বিষয়ে বক্তব্য জানতে এনবিআর চেয়ারম্যান আব্দুর রহমান খানকে একাধিকবার ফোন দেওয়া হলেও তিনি ধরেননি।