
স্বল্প সময়ের মধ্যেই ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশ-টিসিবির উদ্যোগে ট্রাকসেল কর্মসূচির আওতায় ভর্তুকি মূল্যে খাদ্যপণ্য বিক্রির কার্যক্রম পুনরায় শুরু হতে যাচ্ছে। এ তথ্য নিশ্চিত করেছে টিসিবি ও বাণিজ্য মন্ত্রণালয় সূত্র। তবে কবে নাগাদ ট্রাকসেল শুরু হবে এবং এর পরিধি কেমন হবে তা সুনির্দিষ্টভাবে জানাতে পারেনি কোনো কর্মকর্তা।
এ প্রসঙ্গে সরকারি বিপণন সংস্থা টিসিবি আঞ্চলিক কার্যালয় ঢাকার দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা যুগ্ম পরিচালক (অফিসপ্রধান) হুমায়ুন কবির আমার দেশকে বলেন, ট্রাকে করে ভর্তুকি মূল্যে পণ্য বিক্রির বিষয়টি মন্ত্রণালয়ের সিদ্ধান্তের ওপর নির্ভর করে। আমরা শুধু মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনা অনুযায়ী তা বাস্তবায়ন করি। আশা করা যায়, অচিরেই আবার ট্রাকসেল চালু হবে। কবে নাগাদ তা পুনরায় চালু হবে তা সিদ্ধান্ত হওয়ার পর বিষয়টি গণমাধ্যমকে জানানো হবে।
এ বিষয়ে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সচিব মাহবুবুর রহমান বলেন, টিসিবির ট্রাকের মাধ্যমে নিত্যপণ্য বিক্রির জন্য উপদেষ্টা পরিষদের কাছ থেকে অনুমোদন নিতে হয়। অনুমোদনের জন্য প্রস্তাবটি আগামী সভায় তোলা হবে। অনুমোদন পেলেই বিক্রি শুরু হবে বলে আশা প্রকাশ করেন তিনি।
সুনির্দিষ্টভাবে দিনক্ষণের বিষয়ে কোনো কর্মকর্তা মুখ খুলতে না চাইলেও বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের একটি নির্ভরযোগ্য সূত্র জানিয়েছে, দেশের সার্বিক দিক বিবেচনায় ট্রাকসেলের মাধ্যমে ভর্তুকি মূল্যে পণ্য বিক্রির বিষয়ে বাণিজ্য মন্ত্রণালয় ও টিসিবি নীতিগতভাবে একমত হয়েছে। সেহেতু এখন শুধু উপদেষ্টা পরিষদের কাছ থেকে অনুমোদনের অপেক্ষা। ফলে আশা করা যায় জুন থেকেই এ কার্যক্রম শুরু হচ্ছে।
চলতি বছরের ২৮ মার্চের আগে সপ্তাহে ছয় দিন রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় ৫০, চট্টগ্রামে ২০, অন্যান্য বিভাগীয় শহরগুলোতে ১০ এবং ৫৬ জেলা শহরে ৫টি করে ভ্রাম্যমাণ ট্রাকে পণ্য বিক্রি করে টিসিবি। প্রতিটি ট্রাকে ৪০০ জনের পণ্য হিসেবে প্রতিদিন ৪১০টি ভ্রাম্যমাণ ট্রাকে করে এক লাখ ৬৪ হাজার মানুষের কাছে ভর্তুকি মূল্যে পণ্য বিক্রি করত টিসিবি।
এর আগে জুলাই বিপ্লবের পরিপ্রেক্ষিতে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গঠনের পর নিত্যপণ্যের দাম অস্বাভাবিক বেড়ে যাওয়ায় গত বছরের ২৪ অক্টোবর থেকে ঢাকা মহানগরের ৫০টি ও চট্টগ্রাম মহানগরের ২০টি স্থানে ট্রাকের মাধ্যমে পণ্য বিক্রি কার্যক্রম শুরু করে টিসিবি। ৩১ ডিসেম্বরের পর এ কার্যক্রম বন্ধ করে দেওয়া হয়। একমাস ৯ দিন বন্ধ থাকার পর মাহে রমজান উপলক্ষে ১০ ফেব্রুয়ারি থেকে ২৮ মার্চ নাগাদ ভর্তুকি মূল্যে পণ্য বিক্রি করে টিসিবি।
এদিকে দেশে সামগ্রিক দারিদ্র্যতা বেড়ে যাওয়ার ঝুঁকি সত্ত্বেও অজ্ঞাত কারণে ভর্তুকি মূল্যে খাদ্যপণ্য বিতরণ ও বিক্রি কমেছে। টিসিবির উদ্যোগে ট্রাকে করে ঢাকাসহ শহরাঞ্চলে ভর্তুকি মূল্যে ভোজ্যতেল, মসুর ডাল, চিনিসহ নিত্যপণ্য বিক্রি গত ২৮ মার্চ বন্ধের পর দেড় মাসেরও বেশি সময় কেটে গেছে। অন্যদিকে ভিজিএফ ও ভিজিডি কর্মসূচির আওতায় কম আয়ের মানুষের মধ্যে খাদ্য বিতরণও কমেছে। সেই সঙ্গে দেশে দুই বছরেরও বেশি সময় ধরে মূল্যস্ফীতি নয় শতাংশের বেশি। এতে কম আয়ের মানুষের খাদ্য নিরাপত্তাহীনতার ঝুঁকি ক্রমেই বাড়ছে।
ক্রমাগত মূল্যস্ফীতি ও ধীর অর্থনীতির কারণে বিশ্বব্যাংক গত মাসে পূর্বাভাস দেয় যে, ২০২৫ সালে বাংলাদেশের সামগ্রিক দারিদ্র্য বেড়ে ২২ দশমিক ৯ শতাংশ হতে পারে। ২০২২ সালে তা ছিল ১৮ দশমিক সাত শতাংশ।