Image description

সিলেট গ্যাস ফিল্ডের সিবিএ নিয়ে প্রদীপ ‘ম্যাজিক’ চলছে। প্রতিদ্বন্দ্বী কর্মচারী লীগ সিবিএ নির্বাচনে অংশ না নেয়ায় এককভাবে বিজয়ী ঘোষণা করা হয়েছে সিলেট গ্যাস ফিল্ড কর্মচারী ইউনিয়নকে। নতুন সভাপতি হয়েছে গ্যাস ফিল্ডের আলোচিত কর্মচারী প্রদীপ কুমার শর্মা। তাকে ঘিরে ক্ষোভ বাড়ছে গ্যাস ফিল্ডের কর্মচারীদের মধ্যে। তাদের অভিযোগ; শ্রমিক দলের অধিভুক্ত সংগঠন হিসেবে কর্মচারী ইউনিয়নের কমিটিতে এবার কর্মচারী লীগের সাবেক কমিটির পদবিধারীদের জায়গা দেয়া হয়েছে। কর্মচারী লীগের প্রায় ৮০ থেকে ৯০ জন সদস্যকে কর্মচারী ইউনিয়নের সদস্যপদ দেয়া হয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে। আর এর প্রতিবাদ করায় দীর্ঘ ১৬ বছর ধরে বঞ্চিত থাকা বিএনপিপন্থি শ্রমিকদের সংগঠন থেকে কয়েকজনকে বহিস্কার করা হয়েছে। সিলেট গ্যাস ফিল্ড লি.-এসজিএফএলে রয়েছে শ্রমিকদের দুটি সংগঠন। সদস্য সংখ্যা দেড় শতাধিক। 

একটি হচ্ছে কর্মচারী ইউনিয়ন ও অপরটি কর্মচারী লীগ। বিগত ১৬ বছরের মধ্যে একটি সেশনের দু’বছর বাদে বাকী সময় কর্মচারী লীগের অধীনের সিবিএ গঠিত হয়েছে। ২০২২ সালে গঠিত কর্মচারী লীগের সিবিএ’র কমিটির মেয়াদ শেষ হয় গত বছরের সেপ্টেম্বরে। কিন্তু পট-পরিবর্তনের কারনে এবার কয়েক মাস পর এবার সিবিএ ঘোষনা করা হয়। এজন্য সিলেট আঞ্চলিক শ্রম অধিদপ্তরের উপপরিচালক অধীর চন্দ্র বালা গত ২০শে এপ্রিল নির্বাচনে অংশ নেয়ার জন্য দুটি শ্রমিক সংগঠনকে চিঠি দেন। শ্রম অধিদপ্তর সিলেট আঞ্চলিক অফিসের সহকারী পরিচালক আবুল বাশার গতকাল বিকালে মানবজমিনকে জানিয়েছেন- নির্বাচনের জন্য তারা চিঠি দিলে কর্মচারী ইউনিয়নের সাড়া মিলে। কর্মচারী লীগের কেউ সাড়া না দেয়ার কারণে ইউনিয়নকে পরবর্তীতে সিবিএ ঘোষণা করা হয়। তিনি বলেন- এসজিএফএল’র সিবিএ গঠনে আইনের কোনো ব্যতয় ঘটেনি। কর্মচারী ইউনিয়ন এককভাবে অংশ নিয়ে বিজয়ী হওয়ার পর ইতিমধ্যে তারা কমিটি ঘোষনা করেন। 

এদিকে সিবিএ ঘোষনার পর কমিটির সভাপতি করা হয়েছে কর্মচারী ইউনিয়নের সভাপতি প্রদীপ কুমার শর্মাকে। গত ২৫শে সেপ্টেম্বর সিলেট জেলা শ্রমিক দলের কাছে কর্মচারী লীগ থেকে ইউনিয়নে নিয়ে আসা নেতাদের নাম উল্লেখ করে প্রদীপ কুমার শর্মার অপকর্মের বিচার চাওয়া হয়। এ অভিযোগ দাখিল করে কর্মচারী ইউনিয়নের সাবেক নেতা ও বিএনপিপন্থি কর্মচারী আব্দুর রব খসরু ও আব্দুল মালেক। অভিযোগে তারা জানান, প্রদীপ বিএনপিপন্থি কর্মচারী ইউনিয়নের নেতা হলেও পরবর্তীতে তিনি নির্বাচনে ‘জয়বাংলা-জয় বঙ্গবন্ধু’ স্লোগান দিয়ে পোস্টারিং করেন। এ ছাড়া তিনি লীগ থেকে আসা মো. বশির উদ্দিনকে শ্রমিক ইউনিয়নের কো-অপ্ট সভাপতি, ইলিয়াস আলীকে কো-অপ্ট অর্থ সম্পাদক করেন। একইসঙ্গে কর্মচারী লীগের সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক নজরুল ইসলামকে সদস্য করেন। একইভাবে পটপরিবর্তনের পর কর্মচারী লীগের ৮০ থেকে ৯০ জন সদস্যকে কর্মচারী ইউনিয়নে আনা হয়। তারা জানিয়েছেন- বিএনপি’র কঠিন সময়ে কর্মচারী ইউনিয়নের সদস্য সংখ্যা ছিলেন ৩৭ থেকে ৩৮ জন। কিন্তু প্রেক্ষাপট পরিবর্তনের পর এখন সদস্য সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১২৩ জন।

 এত সদস্য কোথায় থেকে এলো সেটি তদন্ত করলে বেরিয়ে আসবে বলে জানান তারা। বিএনপিপন্থি কর্মচারীরা জানিয়েছেন, কর্মচারী লীগের নেতাদের বিএনপিপন্থি সংগঠনের ছায়াতলে নিয়ে আসার প্রতিবাদ করেন বিএনপিপন্থি কর্মচারী আব্দুল মালেক ও আব্দুর রব খসরু। তারা এ নিয়ে জেলা শ্রমিক দল, জৈন্তাপুর উপজেলা বিএনপি‘র নেতাদের অবগত করলে দলীয় শৃঙ্খলা ভঙ্গের অভিযোগ তুলে প্রদীপ কুমার শর্মা প্রভাব খাটিয়ে তাদের দল থেকে বহিষ্কার করেন। ২০১৮ সালের সিবিএ সভাপতি হয়েছিলেন প্রদীপ কুমার শর্মা। প্রয়াত বিএনপি নেতা ও সিলেট-৪ আসনের সাবেক এমপি দিলদার হোসেন সেলিম হস্তক্ষেপ করায় দীর্ঘদিন পর সিবিএতে জয় পায় কর্মচারী ইউনিয়ন। ফলে প্রদীপ সভাপতি হওয়ার সুযোগ পান।

 আর ওই সময় ডে লেবার হিসেবে ৫৭ জন শ্রমিক নিয়োগ করা হয়। এই নিয়োগে বিতর্কের মুখে পড়েন প্রদীপ। অভিযোগ রয়েছে; তিনি চাকরিপ্রাপ্ত কর্মচারীদের কাছ থেকে  দেড় থেকে দুই লাখ টাকা আদায় করে চাকরির সুযোগ দিয়েছেন। এ নিয়ে সিলেট গ্যাস ফিল্ডে তোলপাড় শুরু হয়। প্রদীপের কর্মকাণ্ডের বিরুদ্ধে হরিপুর এলাকায় ক্ষোভ দেখা দেয়। আওয়ামী লীগ সরকারের সময়ের আন্দোলন সংগ্রামে সক্রিয় থাকা জৈন্তাপুর বিএনপি নেতাদের বিরুদ্ধে মামলা হয়। এ মামলায় আসামি হন বিএনপিপন্থি কর্মচারী ও স্থানীয় বালিপাড়ার বাসিন্দা জালাল উদ্দিন। ওই মামলার কারণে তাকে কর্মচারী ইউনিয়ন থেকে বহিষ্কার করেন প্রদীপ। জৈন্তাপুর উপজেলা ছাত্রদলের সাবেক সহ-সভাপতি ও বর্তমানে গ্যাস ফিল্ডের কর্মচারী জালাল উদ্দিন মানবজমিনকে জানিয়েছেন- ‘শুধুমাত্র বিএনপি করার কারণে আমাদের অবৈধভাবে কর্মচারী ইউনিয়ন থেকে বহিষ্কার করা হয়েছে। তখন আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের সঙ্গে প্রদীপের সবচেয়ে বেশি ঘনিষ্ঠতা ছিল। 

তাদের ইন্ধনে  প্রদীপ অন্যায়ভাবে তাকে বহিষ্কার করেন। এখনো তার বহিষ্কারাদেশ তুলে নেয়া হয়নি।’ ইউনিয়ন থেকে বহিষ্কৃত বিএনপিপন্থি কর্মচারী আব্দুল মালেক জানিয়েছেন- ‘আমরা রক্তের সঙ্গে বেঈমানি করিনি। দীর্ঘ ১৬ বছর অন্যায়ভাবে রোষানলে পড়েছি। লাঞ্ছনার শিকার হয়েছি। এবার প্রদীপের অপকর্মের প্রতিবাদ করার কারণে আমাদের ইউনিয়ন থেকে বহিষ্কার করা হয়েছে।’ তিনি জানিয়েছেন- ‘এখন যারা সিবিএতে রয়েছেন তাদের বেশির ভাগই হচ্ছেন পূর্বের কর্মচারী লীগের নেতা ও সদস্যরা। বিএনপিপন্থি কর্মচারীরা অবহেলিতই থেকে গেলেন। বিষয়টি তারা জেলা, উপজেলার নেতাদের অবগত করেছেন বলে জানান।’ বহিষ্কৃত বিএনপিপন্থি আরেক কর্মচারী আব্দুর রব খসরু জানিয়েছেন- ‘অন্যায়ের প্রতিবাদ করার কারণে তাদের বহিষ্কার করা হয়েছে। প্রদীপ তার অন্যায়, অবিচার ও দুর্নীতি ঢাকতে এই কাজ করেছে বলে জানান তিনি।’ 

এদিকে গতকাল বিকালে মানবজমিনের সঙ্গে কথা বলার সময় অভিযোগ খণ্ডন করে নতুন সিবিএ সভাপতি প্রদীপ কুমার জানান- ‘তিনি কখনো আওয়ামী লীগের সঙ্গে যাননি। সিবিএ থাকাকালে সরকারি নানা অনুষ্ঠানে আওয়ামী লীগ এমপি, চেয়ারম্যান ও নেতাদের সঙ্গে ছবি তুলতে হয়েছে। ফুল দিতে হয়েছে। এগুলো দিয়েই এখন অপপ্রচার করা হচ্ছে।’ তিনি বলেন- ‘জালাল, খসরু, মালেক গঠনতন্ত্র বিরোধী কাজ করার কারণে তাদের বহিষ্কার করা হয়। ২-৩ বছর আগেই তাদের সর্বসম্মতিক্রমে ইউনিয়ন থেকে বহিষ্কার করা হয়। এ ছাড়া কর্মচারী লীগ থেকে কেউ এসে নতুন করে তার সিবিএতে ঢুকতে পারেনি। ওই সময় বহিষ্কৃতরাও আওয়ামী লীগের লেবাস ধারণ করেছিল বলে জানান তিনি।’ বলেন- ‘যারা এখন সিবিএতে রয়েছে তারা পূর্ব থেকেই ইউনিয়নে রয়েছে। এটা অপপ্রচার করা হচ্ছে বলে দাবি তার।’