সচিবালয়ে অগ্নিকাণ্ডে ক্ষতিগ্রস্ত ৭ নম্বর ভবনটি মেরামত করে ব্যবহার উপযোগী করা সম্ভব হবে বলে গণপূর্ত অধিদপ্তরের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে। অধিদপ্তরের উপসহকারী প্রকৌশলী আব্দুল মান্নান ভূঁইয়া গতকাল সোমবার সাংবাদিকদের এ কথা জানান। তিনি বলেন, আগুনে সচিবালয়ের ৭ নম্বর ভবনের চারটি তলার প্রায় ২০০টি কক্ষ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। অন্যদিকে, অগ্নিকাণ্ডে গঠিত তদন্ত কমিটির প্রধান স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব নাসিমুল গনি জানান, তাদের প্রাথমিক তদন্তের প্রতিবেদন আজ মঙ্গলবার প্রধান উপদেষ্টার কাছে জমা দেওয়া হবে। গতকাল স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সম্মেলন কক্ষে তদন্ত কমিটির বৈঠক শেষে তিনি গণমাধ্যমকে এ তথ্য জানান। এ ছাড়া সচিবালয়ের নিরাপত্তা বিভাগের দায়িত্বে থাকা পুলিশের এক উপকমিশনারকে (ডিসি) প্রত্যাহার করা হয়েছে।
নাসিমুল গনি বলেন, ‘সচিবালয়ে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় প্রাথমিক রিপোর্ট দেওয়ার জন্য ৩০ ডিসেম্বর (সোমবার) সময় দেওয়া হয়েছিল। একটু আগেই ক্যাবিনেট থেকে সময় আরেকটু বাড়িয়ে দেওয়ার অনুমতি নিয়েছি। কিছু টেস্ট আজকে রাতেও হবে। কাল আবার বসব। কাল প্রাথমিক রিপোর্ট দিতে পারব আশা করছি। বিকাল ৫টা পর্যন্ত টাইম নিয়েছি। এর আগেই রিপোর্ট দিতে চেষ্টা করব।’
এই সিনিয়র সচিব বলেন, আপনারা জানেন অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় একটি হাই পাওয়ার কমিটি গঠন করা হয়েছে। এখানে অনেকগুলো দলের কাজ হচ্ছে একসঙ্গে। সেনাবাহিনীর টিম কাজ করছে, বুয়েটের টিম কাজ করছে, পিডব্লিউটির লোকজন কাজ করছেন, পুলিশ ও আইসিটি লোকেরাও কাজ করছেন। আমরা সবাই টিম হয়ে কাজ করছি। তাদের থেকে আলামত সংগ্রহ করে সেগুলো আলোচনা করে একটা কনক্লুশনে আসার চেষ্টা করছি যে, প্রাথমিকভাবে কী বলা যায়। সেটা করতে গিয়ে আমরা দেখতে পারছি কিছু জিনিসের ল্যাব টেস্ট করতে হয়েছে। আজ কিছু আলামত নেওয়া হয়েছে সেগুলোও টেস্ট করা হচ্ছে। আমাদের প্রাথমিকভাবে ৩০ ডিসেম্বর পর্যন্ত সময় দেওয়া হয়েছিল। তবে আমরা মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ থেকে কিছুক্ষণ আগে আরও একদিনের সময় চেয়ে নিয়েছি।
জানতে চাইলে সিনিয়র সচিব বলেন, আমরা আশা করছি, আগামীকাল বিকাল ৫টার মধ্যে প্রাথমিক প্রতিবেদন জমা দিতে পারব। যদি পারি এর আগে হয়ে গেলে দিয়ে দেব। তবে আমরা বিকাল ৫টা পর্যন্ত সময় নিয়েছি। প্রাথমিক তদন্তে আপনারা কী দেখতে পেলেনÑ এ বিষয়ে কমিটির প্রধান বলেন, এ ধরনের প্রশ্ন এখন করবেন না। আমি বলতে পারব না। চূড়ান্ত প্রতিবেদন কতদিনের মধ্যে দেওয়া হবেÑ এ বিষয়ে তিনি বলেন, সেটা এই মুহূর্তে বলা যাচ্ছে না। বিদেশে কিছু পরীক্ষা-নিরীক্ষার জন্য আলামত যাবে এবং আসবে, এতে কিছু সময় লাগবে। তবে যত দ্রুত করা সম্ভব আমরা সেটা করব।
ক্ষতিগ্রস্ত ২০০ কক্ষ : গতকাল সচিবালয়ে চত্বরে গণপূর্তের উপসহকারী প্রকৌশলী আব্দুল মান্নান ভূঁইয়া সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে জানান, সচিবালয়ের ৭ নম্বর ভবনের চারটি তলার প্রায় ২০০টি কক্ষ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। তবে কীভাবে আগুন লেগেছে, সেটি তদন্ত শেষেই বলা যাবে। এক প্রশ্নের জবাবে আব্দুল মান্নান ভূঁইয়া বলেন, প্রাথমিকভাবে দেখে মনে হচ্ছে, ভবনটি মেরামত করা যাবে। বাকিটা তদন্ত প্রতিবেদন পাওয়ার পর বোঝা যাবে।
গত ২৫ ডিসেম্বর বুধবার দিবাগত রাত ১টা ৫২ মিনিটে সচিবালয়ে আগুন লাগার সংবাদ পায় ফায়ার সার্ভিস। এর কয়েক মিনিটের মধ্যে সচিবালয়ে পৌঁছায় ফায়ার সার্ভিসের দল। পর্যায়ক্রমে ১৯টি ইউনিট ঘটনাস্থলে গিয়ে আগুন নিয়ন্ত্রণে কাজ করে। আগুন নিয়ন্ত্রণে আসে ২৬ ডিসেম্বর সকালে। এই ঘটনা তদন্তে আট সদস্যের উচ্চ পর্যায়ের কমিটি গঠন করে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিবকে এ কমিটির আহ্বায়ক করা হয়। সদস্য সচিব হন ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স অধিদপ্তরের মহাপরিচালক।
অন্যদিকে, গতকালও আগুন লাগা ৭ নম্বর ভবন বন্ধ ছিল। এই ভবনে তদন্ত-সংশ্লিষ্ট ব্যক্তি ছাড়া কাউকে প্রবেশ করতে দেওয়া হয়নি।
সাংবাদিকদের প্রবেশ : অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় চার দিন নিষেধাজ্ঞা চলার পর গতকাল সচিবালয়ে প্রবেশের অনুমতি পেয়েছেন সাংবাদিকরা। অস্থায়ী পাসের মাধ্যমে সোমবার থেকে সাংবাদিকরা সচিবালয়ে প্রবেশ করতে পারবেন বলে রবিবার সরকারের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছিল। কিন্তু সকাল থেকে প্রবেশের জন্য সাংবাদিকরা সচিবালয়ের গেটে অবস্থান করলেও তারা সচিবালয়ে প্রবেশ করতে পারেননি। পরে সচিবালয়ে প্রবেশের অনুমতি মিলেছে দুপুর ২টায়। এ সময়ে সচিবালয় কাভার করা সাংবাদিকদের সংগঠন বাংলাদেশ সেক্রেটারিয়েট রিপোর্টার্স ফোরামের দেওয়া তালিকা অনুযায়ী সীমিতসংখ্যক সাংবাদিক ২ নম্বর গেটের মাঝে দর্শনার্থীদের অভ্যর্থনা গেট দিয়ে সচিবালয়ে প্রবেশ করেন।
সকাল থেকে উপদেষ্টা ও সচিব ছাড়া অন্য কোনো গাড়ি সচিবালয়ে প্রবেশ করতে দেওয়া হয়নি। সচিবালয়ের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা ১ ও ২ নম্বর গেটের মধ্যবর্তী দর্শনার্থী কক্ষ এবং ৫ নম্বর গেট দিয়ে হেঁটে প্রবেশ করেন। গাড়ি প্রবেশ করতে না দেওয়ায় সচিবালয়ের ভেতরের চত্বর প্রায় ফাঁকা পড়ে আছে। কর্মকর্তাদের বেশিরভাগ গাড়ি সচিবালয়ের চারপাশের সড়কে পার্কিং করে রাখতে দেখা গেছে। ফলে সচিবালয়ে গাড়ি পার্কিংয়ের স্থানগুলো ছিল শূন্য।
সচিবালয়ে দায়িত্বে থাকা পুলিশ কর্মকর্তা প্রত্যাহার : অন্যদিকে, সচিবালয়ে ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডের পর এর নিরাপত্তা বিভাগের দায়িত্বে থাকা পুলিশের উপকমিশনার (ডিসি) এম তানভীর আহমেদকে সরিয়ে নেওয়া হয়েছে। তাকে ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) পিওএম-দক্ষিণ বিভাগের ডিসি হিসেবে বদলি করে একটি আদেশ জারি হয়েছে। গত রবিবার ডিএমপি কমিশনারের স্বাক্ষরিত এক আদেশ অনুসারে, সচিবালয়ের নিরাপত্তা বিভাগের ডিসি হিসেবে পদায়ন করা হয়েছে পিওএম-দক্ষিণ বিভাগের ডিসি মোহাম্মদ বিল্লাল হোসেনকে।
এ ছাড়া সচিবালয়ে নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকা সেনাবাহিনীর সদস্যদেরও প্রত্যাহার করা হয়েছে। তারা সচিবালয়ের ভেতরে এখন নিয়মিত ডিউটি করবেন না। তবে কয়েক দফায় টহল কার্যক্রম চলমান থাকবে। তবে কী কারণে তাদের প্রত্যাহার করা হয়েছেÑ এ বিষয়ে এখনও কিছু জানানো হয়নি। সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে, এখন থেকে সেনাবাহিনীর সদস্যরা সচিবালয়ে রেগুলার ডিউটি করবেন না। সেনাবাহিনীর সদস্যরা কখন কখন টহল দেবেন, তা ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা ঠিক করবেন।