
কোম্পানীগঞ্জের ভোলাগঞ্জের বাংকার। রেলওয়ের সম্পত্তি। এটি এখন লুটপাটের স্বর্গরাজ্য। বলা হচ্ছে; শতকোটি টাকার বালু ও পাথর এই বাংকার থেকে লুটপাট করা হয়েছে। লুটপাট ঠেকাতে ভোলাগঞ্জের স্থানীয় বাসিন্দারা একাট্টা হয়েছিলেন। বিধিনিষেধ আরোপ করে টহলও বসিয়েছিলেন। কিন্তু ভোলাগঞ্জের আলোচিত দুলা মিয়া মেম্বারের কারণে তাদের উদ্যোগ ভেস্তে যায়। স্থানীয়রা জানিয়েছেন- দুলা মিয়া মেম্বার নিজেকে বিএনপি নেতা পরিচয় দিলেও তিনি কোম্পানীগঞ্জ থানা যুবলীগের সভাপতি আলিম উদ্দিন ও যুবলীগ নেতা ছয়দুরের পার্টনার। বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের সময় তাদের নেতৃত্বেই দুলা মিয়া বাঙ্কার এলাকার লুটতরাজ চালিয়েছেন। আর এখন তিনি নিজেই নেতৃত্ব দিচ্ছেন। সঙ্গে রয়েছেন যুবলীগের দুই নেতাও। এ নিয়ে ক্ষোভ রয়েছে বিএনপিতে। কোম্পানীগঞ্জ বিএনপি নেতারা জানিয়েছেন- বাঙ্কারসহ কোয়ারি এলাকায় বালু ও পাথর লুট বন্ধে তারা একাধিকবার উপজেলা প্রশাসনের সঙ্গে বৈঠক করেছেন। দিয়েছেন স্মারকলিপিও। কিন্তু কাজের কাজ কিছুই হচ্ছে না।
অভিযোগ উঠেছে- দুলা মেম্বার বাঙ্কার থেকে প্রতিদিন ৭-৮ লাখ টাকার চাঁদাবাজি করছেন। পুলিশের নামে করেন চাঁদাবাজি। আর সাজন নামে আরও এক লুটপাটকারী তুলে বিজিবি’র নামে টাকা। সাজনও প্রতিদিন কয়েক লাখ টাকা চাঁদা আদায় করে। ইসলামপুর পশ্চিম ইউনিয়নের ৮ নম্বর ওয়ার্ড এর মেম্বার দুলা মিয়া। স্থানীয় আওয়ামী লীগ লুটেরাদের সঙ্গে সম্পৃক্ত থেকে ‘পাতি নেতা’ হিসেবে ছিল তার পাথর কোয়ারি কেন্দ্রিক অপকর্ম। ৫ই আগস্টের পটপরিবর্তনের পর বালু ও পাথরের খনির অঘোষিত নায়ক বনে যান তিনি। রেলওয়ের মালিকানাধীন রোপওয়ে প্রকল্পের সংরক্ষিত বাঙ্কার এলাকা এবং সাদাপাথর ও নদী সীমান্তের বালু লুটের মহা লুটপাটের কুশীলব এখন তিনি। ভোলাগঞ্জ গ্রামের বাসিন্দারা জানিয়েছেন- গত বছরের ৬ ও ৭ই আগস্ট ভোলাগঞ্জের সাদাপাথর, ১০ নম্বর, ও পর্যটন ঘাট এলাকায় যে গণ-লুটপাট হয় তার নেপথ্যে ছিলেন দুলা মিয়া। সংশ্লিষ্ট এলাকার বিএনপি নেতা এবং ওয়ার্ড মেম্বার হিসেবে ওই সময় সংঘটিত গণ-লুটপাটের বিভিন্ন ভিডিও ফুটেজে দুলা মিয়া এবং তার চাঁদাবাজ পুত্রদের উপস্থিতি ছিল। পরবর্তীতে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে এসব ভিডিও ভাইরাল হয়। ওই সময় ভোলাগঞ্জ স্থলবন্দর নির্মাণে রক্ষিত ১০ কোটি টাকার অধিক মূল্যের রড, সিমেন্ট ও অন্যান্য নির্মাণসামগ্রী লুট হয়। এ ছাড়া সাদাপাথর এলাকা থেকে বড় বড় নৌকা যোগে ৫০ কোটি টাকারও অধিক পাথর লুট হয়। দশ নম্বর পর্যটন ঘাটের দোকানপাটে হরিলুট হয়। এসব লুটের সঙ্গে দুলা মিয়ার সম্পৃক্ততা সেই সময় চাউর হয়।
পটপরিবর্তনের পর ভোলাগঞ্জের কোয়ারি এলাকার অবাধে পাথর তোলা শুরু হলে এলাকার ওয়ার্ড মেম্বার দুলা মিয়া দলবল নিয়ে সংরক্ষিত বাঙ্কার এলাকার বিস্তীর্ণ পশ্চিম এলাকার নিয়ন্ত্রণ নিয়ে নেন। তার নেতৃত্বে সেখানে পাথর আহরণকারী শ্রমিকদের থেকে গণহারে চাঁদা আদায় শুরু করেন। এরই ধারাবাহিকতায় তার তত্ত্বাবধানে তারই পুত্র জাকির ও ইকবালকে বাঙ্কার এলাকার কালেক্টর হিসেবে নিয়োগ দেয়া হয়। এরপর থেকে চলছে দুলা বাহিনীর অপকর্ম। সূত্র বলছে- বাঙ্কার এলাকা থেকে নৌকা প্রতি ২ হাজার টাকা করে প্রতিদিন ৭-৮ লাখ টাকা আদায় করে দুলা মেম্বার ও তার বাহিনী। তার ভয়ে এলাকায় কেউ মুখ খুলেন না। বাঙ্কারের পশ্চিম-দক্ষিণের ধলাই নদীর বিস্তীর্ণ এলাকায় প্রতি রাতে অবৈধভাবে বালু উত্তোলন করে সহস্রাধিক নৌকা। এখানেও রয়েছে দুলা মেম্বারের চাঁদাবাজির হাত। এখানে নৌকা প্রতি ১ হাজার টাকা করে আদায় করে চাঁদাবাজ চক্র। দুলা মেম্বারের পুত্র জাকিরের নেতৃত্বে স্থানীয় গুচ্ছগ্রাম এলাকার ধলাই নদীর তীর ঘেঁষে মিনি ড্রেজার তথা সেইভ মিশিন দিয়ে পাথর আহরণকারীদের নিকট থেকে নৌকাপ্রতি ৫ হাজার টাকা করে প্রতিদিন আদায় হচ্ছে কয়েক লাখ টাকা। এ ছাড়া ধলাই ব্রিজ এলাকায় বালি লুটে সম্পৃক্ত লুটেরাদের শেল্টার দিয়ে দুলা মেম্বার প্রতিদিন আদায় করছে আরও লক্ষাধিক টাকা।
পাথর শ্রমিকরা জানিয়েছেন- দুলা মেম্বারের পুত্র জাকির, ইকবাল, দেলোয়ার ও আজমলের নেতৃত্বে বৃহত্তর ভোলাগঞ্জ এলাকায় রয়েছে ২০-২৫ জনের এক চাঁদাবাজ চক্র। চিহ্নিত এসব চাঁদাবাজদের মদতদাতা ও পৃষ্ঠপোষক হিসেবে দুলা মেম্বারের বিভিন্ন ধরনের তৎপরতা প্রকাশ্যেই পরিলক্ষিত হচ্ছে। তারা জানিয়েছে- দুলা মেম্বারের সঙ্গে রয়েছে কোম্পানীগঞ্জ থানা পুলিশের ‘জ্যান্টলম্যান এগ্রিমেন্ট’। প্রতি রাতে দুলা মেম্বারকে থানায় পুলিশ কর্মকর্তাদের সঙ্গে গোপনে মিটিং করতে দেখা যায়। দুলা মেম্বারের সঙ্গে সিলেট জেলা বিএনপি’র কয়েক নেতার সম্পর্ক রয়েছে। অভিযোগ প্রসঙ্গে দুলা মিয়া মেম্বার মানবজমিনকে জানিয়েছেন- তার বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগ মিথ্যা। তাকে বিতর্কিত করতে এলাকার কিছু মানুষ নানা অভিযোগ তুলছে ও বিভিন্ন দপ্তরে দিচ্ছে। নদী ও কোয়ারি এলাকায় সাজনসহ কয়েকজন লোক চাঁদাবাজি করে। এসব ঘটনায় তিনি কিংবা তার কোনো সন্তানও জড়িত নয়। এদিকে কোম্পানীগঞ্জ থানার ওসি উজায়ের আল মাহমুদ আদনান জানিয়েছেন- ভোলাগঞ্জের দুলা মেম্বারের চাঁদাবাজি সম্পর্কে পুলিশের কাছেও নানা খবর এসেছে। এসব বিষয়ে পুলিশের তরফ থেকে খোঁজখবর নেয়া হচ্ছে। তিনি বলেন- কয়েকদিন আগে যৌথ টাস্কফোর্সের টিম বাঙ্কার এলাকায় অভিযানের সময় পাথর লুট ও চাঁদাবাজিতে জড়িত থাকার অভিযোগে তিনজনকে আটক করেছিলেন। আটককৃত ৩ জনের মধ্যে একজন দুলা মেম্বারের ছেলে ছিল। তার বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে।