Image description

সাভার পৌরসভার মজিদপুর এলাকায় গত ৮ মে বৃহস্পতিবার ভোর রাতে নিজ মেয়ের হাতে নৃশংসভাবে খুন হয়েছেন আব্দুস সাত্তার (৫৬)। বাবার মোবাইল ফোনে ভিডিও অন করে এ হত্যাকাণ্ড ঘটায় মেয়ে জান্নাতুল জাহান শিফা (২৩)। ৯৯৯ এ কল পেয়ে পুলিশ ঘাতক শিফাকে গ্রেপ্তার করে আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠায়। পুলিশের নিকট ও ভিডিওতে শিফা জানায় বাবা আবদুস সাত্তার তাকে ধর্ষণ করায় এবং ইতিপূর্বে দায়েরকৃত ধর্ষণ মামলা তুলে নিতে চাপ প্রয়োগ করার কারনে ঘুমের ওষুধ খাইয়ে অচেতন করে ছুরি দিয়ে কুপিয়ে তাকে হত্যা করা হয়েছে।

এ নির্মম হত্যাকাণ্ড সম্পর্কে মুখ খুলেছে নিহতের প্রথম পক্ষের বড় ছেলে হাসিবুর রহমান। শুক্রবার তিনি আমার দেশকে জানান, অনৈতিক ও সমকামীতা দেখে ফেলায় এবং এতে বাধা দেওয়ায় পরিকল্পিতভাবে বাবাকে খুন করা হয়েছে। শিফা নিয়মিত গাজা ও সিগারেট খেত। অনেক মেয়ে বন্ধু তার বাসায় নিয়মিত যাতায়াত করতো। গ্রামের স্কুলে সে দশম শ্রেনী পর্যন্ত পড়াশোনা করেছে।

হাসিবুর রহমান জানান, আমার বাবা অত্যন্ত সৎ ও ধর্মভীরু মানুষ ছিলেন। ৫ ওয়াক্ত নামাজ পড়তেন। মাদরাসা থেকে দাখিল পাশ করা এই মানুষটি একপর্যায়ে সিএনজি ও লেগুনা চালিয়ে জীবিকা নির্বাহ করতেন। পরে কিডনিতে পাথর ধরা পরায় গাড়ি চালানো বন্ধ করে দেন। তিনি মাঝে মাঝে আমাদের সাথে ঢাকায় থাকতেন এবং সাভারেও আলাদা ভাড়া বাসায় থাকতেন। বাবার চলাফেরায় আমি এবং আমার সৎ ভাই খরচ চালাতাম। নিহত আব্দুস সাত্তার নাটোর জেলার সিংড়া থানার ভোগা গ্রামের বাসিন্দা ছিলেন।

তিনি আরও জানান, তার বাবা তিনটি বিয়ে করেছেন। ৩ সংসারে তারা ৩ ভাই ২ বোন। তিনি প্রথম স্ত্রী আসমা বেগমের সন্তান ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ার রাজধানীর মোহাম্মদ পুরে চাকরি করেন বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে। তার দ্বিতীয় সৎ মা পারভীন বেগম জীবিত আছেন তার ঘরে আবদুস সাত্তারের এক পুত্র সন্তান। অভিযুক্ত জান্নাতুল জাহান শিফা আবদুস সাত্তারের তৃতীয় স্ত্রীর মেয়ে। তৃতীয় স্ত্রী মারা যাওয়ার পর শিফাকে নিয়ে ঢাকা থেকে গ্রামের বাড়িতে ফেরেন আব্দুস সাত্তার। কিন্তু শিফার উচ্ছৃঙ্খল জীবনযাপন, অশালীন পোশাক ও দোকানে গিয়ে ধূমপান করার মতো আচরণের কারণে গ্রামের লোকজন বিরক্ত হয়ে পড়ে। এ ছাড়া সে টিকটক করতো এবং ইন্টারনেটে ছেড়ে দিত। এসব নিয়ে পরিবারের সদস্যরাসহ আমার ৬ চাচাও ক্ষুব্ধ হন বাবার প্রতি। আত্মীয়-স্বজন এবং গ্রামের মানুষের বিরুপ মন্তব্যের কারণে প্রতিবাদ করায় ও বাবা তাকে শাষণ করায় ২০২২ সালে শিফা বাবার বিরুদ্ধে ধর্ষণের অভিযোগ করেন।

হাসিবুর রহমানের ভাষায়, সেই মামলা ছিল পুরোটাই মিথ্যা ও সাজানো মামলা। প্রাথমিক প্রমাণও মেলেনি। ফলে ওই সময়ে বাবা দ্রুত সময়ে জামিন লাভ করেন। তিনি আরও বলেন, আমরা জানতাম বাবার সঙ্গে শিফার কোনো যোগাযোগ নেই। তবে বাবার একমাত্র মেয়ে শিফাকে প্রচণ্ড ভালোবাসতো ও আদর করতো। মেয়ের কথা ভেবে অনেক সময় দুঃচিন্তা করতেন তিনি। সে কারনেই হয়তো বাবা শিফাকে খুজে বের করে তার নিকট থাকতেন। তবে শিফার সব অনৈতিক কাজের প্রতিবাদ করতেন বাবা। আমরা মোটেও জানতাম না তাহলে তাকে নিয়ে যেতাম। কিন্তু খুনের পর জানতে পারি, শিফা বাবার সাথেই এক বাসায় থাকত।