
বিগত সরকারের আমলে বঞ্চিত ৭ হাজার ২১৫ কর্মকর্তাকে সুপার নিউমারারি পদোন্নতি দিয়েছে রাষ্ট্রায়ত্ত সোনালী , অগ্রণী , জনতা ও রূপালী ব্যাংক । একসঙ্গে এত কর্মকর্তার পদোন্নতির বিষয় নিয়ে এবার তদন্ত শুরু করেছে আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগ ( এফআইডি ) । এতে পদবিসহ সুযোগ- সুবিধা হারানোর আতঙ্কে রয়েছেন পদোন্নতি পাওয়া ব্যাংকাররা । রাষ্ট্রায়ত্ত এই চার ব্যাংক সূত্রে জানা গেছে , পদোন্নতিপ্রাপ্ত এসব কর্মকর্তা ইতিমধ্যে পদায়নসহ নতুন পদের সুযোগ - সুবিধা পাচ্ছেন ।
সোনালী ব্যাংক প্রথা অনুযায়ী সহকারী মহাব্যবস্থাপক ( এজিএম ) পদমর্যাদার অন্তত ২০০ কর্মকর্তাকে গাড়ির সুবিধা দিয়েছে । আর অগ্রণী, রূপালী ও জনতা ব্যাংক গাড়ির সুবিধা দিতে তৎপরতা চলমান রেখেছে । এখন সুপার নিউমারারি পদোন্নতি » ৭২১৫ কর্মকর্তাকে সুপার নিউমারারি পদোন্নতি দেয় সোনালী , অগ্রণী , জনতা ও রূপালী ব্যাংক । এফআইডির তদন্তে যদি পদোন্নতিতে কোনো অনিয়ম প্রমাণিত হয় , তাহলে পদোন্নতিপ্রাপ্তরা সদ্য পাওয়া সুযোগ - সুবিধা হারাতে পারেন । এ কারণে সংশ্লিষ্ট ব্যাংকারদের মধ্যে আতঙ্ক ও ক্ষোভ বিরাজ করছে বলে জানা গেছে । সুপার নিউমারারি পদোন্নতিপ্রাপ্ত কয়েকজন কর্মকর্তা আজকের পত্রিকাকে বলেন , আওয়ামী লীগের আমলে তাঁরা পদোন্নতিবঞ্চিত ছিলেন । নানা তকমা দিয়ে তাঁদের পদোন্নতি আটকে রাখা হয়েছিল । গত আগস্টে গণ - অভ্যুত্থানের পর প্রশাসন ও পুলিশের কর্মকর্তারা পদোন্নতি পেয়েছেন । সম্প্রতি স্বাস্থ্য খাতে বিদ্যমান পদের অতিরিক্ত সুপার নিউমারারি পদোন্নতির ঘোষণা দিয়েছেন প্রধান উপদেষ্টা ড . মুহাম্মদ ইউনূস ।
জানতে চাইলে তদন্ত কমিটির সদস্যসচিব আফরোজা আক্তার রিবা বলেন , সরকারি চার ব্যাংকের এ ধরনের পদোন্নতিতে আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের অনুমতি নেওয়া হয়নি । কমিটি তদন্তের স্বার্থে ব্যাংকগুলোকে চিঠি দিয়ে ৭ হাজার ২১৫ কর্মকর্তার তথ্য সংগ্রহ করেছে । এসব যাচাই করে প্রতিবেদন তৈরি করা হবে । সে প্রতিবেদন অনুযায়ী পরে ব্যবস্থা নেওয়া হবে ।
ব্যাংকগুলোর তথ্য সোনালী ব্যাংক ২ হাজার ২০০ জনকে , অগ্রণী ব্যাংক ৩ হাজার ৮৪ জনকে ও রূপালী ব্যাংক ৩ হাজার ২০৯ জনকে সুপার নিউমারারি পদোন্নতি দিয়েছে । জনতা ব্যাংক পদোন্নতি দিয়েছে ৫৭৯ জনকে । মূলত উপমহাব্যবস্থাপক ( ডিজিএম ) , সহকারী মহাব্যবস্থাপক ( এজিএম ) , সিনিয়র প্রিন্সিপাল অফিসার ( এসপিও ) , প্রিন্সিপাল অফিসার ( পিও ) ও সিনিয়র অফিসার ( এসও ) পদে এসব পদোন্নতি দেওয়া হয় । সুপার নিউমারারি পদোন্নতির বিষয়ে জানতে চাইলে সোনালী ব্যাংকের এমডি মো . শওকত আলী খান বলেন , ব্যাংক একটি গুরুত্বপূর্ণ খাত । এখানে সবার অবদানকে গুরুত্ব দিতে হয় । কাউকে বঞ্চিত করলে মনোবল হারায় । তবু অনেকে বঞ্চিত ছিলেন । সেই বঞ্চিত কর্মকর্তাদের নিয়ম মেনে সুপার নিউমারারি পদে পদোন্নতি দেওয়া হয়েছে । এ জন্য বাড়তি ব্যয় খুবই কম , যার কোনো প্রভাব ব্যাংকের ওপর পড়বে না ; বরং উৎসাহ পাওয়ায় ব্যাংক দিন দিন ভালো করছে ।
সোনালী ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদের চেয়ারম্যান মুসলিম চৌধুরী বলেন, ‘ নিয়ম মেনে পদোন্নতি দেওয়া হয়েছে । মূলত কর্মকর্তাদের বৈষম্য দূরীকরণ ও পদোন্নতিবঞ্চিতদের দাবি পূরণে মেধা এবং সুপার নিউমারারি ভিত্তিতে পদোন্নতি দেওয়া হয়েছে । নির্দিষ্ট দক্ষতা ও যোগ্যতা অনুযায়ী তা করা হয়েছে । আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগ কারণ দর্শানোর নোটিশ দিয়েছে । নোটিশটি বিব্রতকর । ' অগ্রণী ব্যাংকের চেয়ারম্যান সৈয়দ আবু নাসের বখতিয়ার আহমেদ বলেন , ‘ বিগত সরকারের সময় পদোন্নতিবঞ্চিতদের পদোন্নতি দেওয়া হয় । কিন্তু পদোন্নতির একটি নিয়ম রয়েছে । ঢালাও পদোন্নতি দিলে যাঁরা ভালো কাজ করেন , তাঁরা নিরুৎসাহিত হন । বিষয়টি মাথায় রেখে নিয়ম মেনে পদোন্নতি দেওয়া হয় । ”