Image description

দেশের শেয়ার বাজারে ঢালাও দরপতনে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) প্রধান মূল্যসূচক ডিএসইএক্স এখন পাঁচ বছরের মধ্যে সর্বনিম্ন অবস্থানে নেমে এসেছে। গতকাল বৃহস্পতিবার সপ্তাহের শেষ কার্যদিবসে ডিএসইর প্রধান সূচকটি ৫৪ দশমিক ৫৮ পয়েন্ট কমে ৪ হাজার ৭৮১ পয়েন্টে অবস্থান করছে। যা ২০২০ সালের ২৪ আগস্টের পর সর্বনিম্ন।

বাজারসংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলেছেন, ঢালাও এ দরপতনে বিনিয়োগকারীরা হতাশ। কারণ, যখন বাজারে ভালো, মন্দ সব ধরনের শেয়ারেরই দর কমতে থাকে, তখন বিনিয়োগকারীরা আতঙ্কগ্রস্ত হয়ে পড়ে। তারা বলেছেন, সম্প্রতি শেয়ার বাজারের উন্নয়নে সরকারের উচ্চ পর্যায়ে যে বৈঠক হয়েছে, সেখানে বাজারের স্টেকহোল্ডারদের কাউকে রাখা হয়নি। অথচ তারাই বাজারের সমস্যা সম্পর্কে ভালো জানেন। তাহলে কীভাবে বাজারের সমস্যার সমাধান হবে? বর্তমানে বাজারে যে ঢালাও দরপতন হচ্ছে, এর অন্যতম প্রধান কারণ আস্থাহীনতা। তারা বলেন, গত ৯ মাস ধরে বাজারের উন্নয়নে সংস্কারের কথা শুনে শুনে বিনিয়োগকারীরা এখন হতাশ।

গতকাল লেনদেনচিত্র পর্যালোচনায় দেখা যায়, লেনদেন শুরু হওয়ার পর থেকেই বেশির ভাগ কোম্পানির শেয়ারদর কমতে থাকে। দিনশেষে ডিএসইতে লেনদেনকৃত মোট ৩৯৫টি কোম্পানির মধ্যে দর বেড়েছে মাত্র ৪২টির, কমেছে ৩১৭টির। আর অপরিবর্তিত রয়েছে ৩৬টির দর। দেশের শেয়ার বাজারে যেসব কোম্পানি ১০ শতাংশ বা তার বেশি লভ্যাংশ দেয়। সেসব কোম্পানিকে ভালো কোম্পানি হিসেবে ‘এ’ ক্যাটাগরিতে রাখা হয়। গতকাল এই ভালো কোম্পানির শেয়ারেরও ব্যাপক দরপতন হয়েছে। এদিন ‘এ’ ক্যাটাগরির মাত্র ১৯টি কোম্পানির শেয়ারদর বেড়েছে। কমেছে ১৮২টির। আর ১৫টির দাম অপরিবর্তিত রয়েছে। এতে ডিএসইর প্রধান মূল্যসূচক ডিএসইএক্স আগের দিনের তুলনায় ৫৪ দশমিক ৫৮ পয়েন্ট কমে ৪ হাজার ৭৮১ পয়েন্টে অবস্থান করছে। যা ২০২০ সালের ২৪ আগস্টের পর সর্বনিম্ন । ২০২০ সালের ২৪ আগস্ট প্রধান সূচকটি ৪ হাজার ৭৬২ পয়েন্টে ছিল। ডিএসইর অপর দুই সূচকের মধ্যে শরিয়াহ সূচক ডিএসইএস আগের দিনের তুলনায় ১৪ পয়েন্ট কমে ১ হাজার ৩৮ পয়েন্টে ও বাছাই করা ভালো ৩০ কোম্পানি নিয়ে গঠিত ডিএসই-৩০ সূচক ২০ পয়েন্ট কমে ১ হাজার ৭৭০ পয়েন্টে দাঁড়িয়েছে। সূচক কমার পাশাপাশি ডিএসইতে লেনদেনও ৩০০ কোটি টাকার নিচে নেমে এসেছে। এদিন এই বাজারে ২৯৬ কোটি ৮৪ লাখ টাকা লেনদেন হয়েছে। আগের দিন লেনদেন হয়েছিল ২৯৪ কোটি ১৭ লাখ টাকা।

অপরবাজার চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জে (সিএসই) লেনদেনকৃত মোট ২০৫টি কোম্পানির মধ্যে দাম বেড়েছে ৩৭টির, কমেছে ১৫১টির এবং ১৭টির দাম অপরিবর্তিত রয়েছে। এতে এই বাজারের সার্বিক মূল্যসূচক সিএএসপিআই কমেছে ১৩৭ পয়েন্ট। গতকাল সিএসইতে লেনদেন হয়েছে ১০ কোটি ২৯ লাখ টাকা। আগের কার্যদিবসে লেনদেন হয় ১১ কোটি ২২ লাখ টাকা।

দেশের শেয়ার বাজারে অব্যাহত এ দরপতন প্রসঙ্গে ডিএসই ব্রোকার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ডিবিএ) প্রেসিডেন্ট সাইফুল ইসলাম গতকাল ইত্তেফাককে বলেন, দীর্ঘদিন ধরে শেয়ার বাজার খারাপ যাচ্ছে। বিনিয়োগকারীরা ক্রমাগত লোকসানে নিঃস্ব হয়ে গেছে। এখন সময় এসেছে, বাজার সংশ্লিষ্ট সব স্টেকহোল্ডারদের সঙ্গে বসে দ্রুত মূল সমস্যা চিহ্নিত করে ব্যবস্থা নেওয়া। এ প্রসঙ্গে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) পরিচালক শাকিল রিজভী ইত্তেফাককে বলেন, আমরা গত ৯ মাস ধরে বাজারের উন্নয়নে সংস্কারের কথা শুনে আসছি। কিন্তু এখন পর্যন্ত দৃশ্যমান কোনো পরিবর্তন নেই। ফলে বিনিয়োগকারীদের মধ্যে হতাশা সৃষ্টি হয়েছে। তিনি বলেন, নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি) এখনো বাজারের উন্নয়ন নিয়ে আলোচনার মধ্যে আছে, বাস্তবায়নে নেই। কিন্তু  নির্দেশনা বাস্তবায়ন না হলে বাজারের কোনো উন্নতি হবে না। সেই সঙ্গে বাজারের উন্নয়নে কিছু ইনসেনটিভ দিতে হবে। যাতে বিনিয়োগকারীরা বাজার নিয়ে আগ্রহী হয়।