
অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম বলেছেন, স্বচ্ছতা ও যাচাই-বাছাইয়ের মাধ্যমে দ্রুত প্রকৃত সাংবাদিকদের অ্যাক্রেডিটেশন কার্ডের ব্যবস্থা করা হবে। আগের মতো সংসদ সদস্য, ছাত্রলীগসহ বিভিন্ন নেতাদের অ্যাক্রেডিটেশন কার্ড নিয়ে তদবির করতে দেয়া হবে না। বৃহস্পতিবার দুপুরে জাতীয় প্রেসক্লাবের তফাজ্জল হোসেন মানিক মিয়া সভাকক্ষে ‘গণঅভ্যুত্থান পরবর্তী গণমাধ্যমের হালচাল’ শীর্ষক এক আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি একথা বলেন। প্রেস সচিব ৫ আগস্টের পর যে ২৬৬টি হত্যা মামলা হয়েছে, কারা কেনো এসব মামলা করেছেন তা সরকারের জানা নেই। এসবের কারণে কাউকে হয়রানি বা গ্রেফতার করা হয়নি বরং তারা নিয়মিত অফিস করছেন। গণমাধ্যমগুলোকে বিগত সময় করা ভুলগুলো সাহসের সঙ্গে স্বীকার করে জনগণের কাতারে এসে নতুনভাবে যাত্রা শুরু করতে হবে।
তিনি বলেন, নিরাপদভাবে সাংবাদিকতার নিশ্চয়তা দেয়া সরকারের দায়িত্ব। গণমাধ্যমের ক্ষেত্রে নতুন সোশ্যাল কন্টাক্ট ও অর্থনৈতিক মডেল দরকার, যার মাধ্যমে সাংবাদিকদের কপিরাইট, বেতন প্রটেক্ট (সুরক্ষিত) হবে। প্রেস সচিব বলেন, গত নয় মাসে গণমাধ্যম অবারিত স্বাধীনতা ভোগ করছে। মিডিয়ার বড় একটা অংশ শেখ হাসিনাকে বৈধতা দিয়ে গণঅভ্যুত্থানকারীদের সন্ত্রাসী বা জঙ্গি বলার চেষ্টা করেছে। কিছু কিছু সাংবাদিক মালিকের ব্যবসার কারণে চাকরি হারিয়েছেন। এতে সরকার দায়ী নয়, বরং সরকার চায় সবাই সত্য বলবে। মিডিয়া স্বাধীন ও প্রাতিষ্ঠানিক হবে। সরকার কোনো নিউজ আউটলেট বন্ধ না করে নেত্র নিউজের মতো অনলাইন ব্লক করা সাইটগুলো খুলে দিয়েছে।
তিনি আরও বলেন, অনেক সাংবাদিক ফেসবুকে মিথ্যা লিখলেও কারোর আদর্শিক (ইডিওলজি) কারণে কথা বলার অধিকার কেড়ে নেওয়া হচ্ছে না। তবে অন্যান্য দেশের মতো প্রতিটি পত্রিকায় সাংবাদিকদের নিজ নিজ সোশ্যাল মিডিয়া ব্যবহারে গাইডলাইন থাকা উচিত বলে মনে করেন তিনি। পিআইবি’র মহাপরিচালক ফারুক ওয়াসিফ বলেন, গণমাধ্যম সহায়তা না করলে ফ্যাসিবাদ কোনোভাবেই কায়েম সম্ভব ছিল না। অবশ্যই গণমাধ্যম সংস্কার করতে হবে। সোশ্যাল মিডিয়ায় আমাদের আরও দায়িত্বশীল হওয়া উচিত।
ফ্যাসিবাদ মুক্ত গণমাধ্যম চাই এর আহ্বায়ক ও জনকণ্ঠ পত্রিকার পরিকল্পনা সম্পাদক জয়নাল আবেদিন শিশির বলেন, বাংলাদেশের গণমাধ্যম চব্বিশের ৫ আগস্ট পর্যন্ত কোনো জার্নালিজম ছিল না। যা ছিল তা আওয়ামীজম ও ভারতইজম। গত ৯ মাসে বাংলাদেশের মিডিয়ার স্বাধীনতার চিত্র সারাবিশ্ব দেখছে। এমন গণমাধ্যম আমরা দেখিনি কখনও। গণমাধ্যমে যতটুকু সমস্যা আছে সেটিও ঠিক হয়ে যাবে দ্রুত। এর জন্য সকলের উচিত ঐক্যবদ্ধ হয়ে কাজ করা। ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়নের সভাপতি শহিদুল ইসলাম বলেন, সরকার গণমাধ্যম সংস্কার কমিশন গঠন করেছে। সেই কমিশন দৃশ্যমান কিছুই দেখাতে পারেনি গত ৯ মাসে। সরকারের উচিত ছিল আওয়ামী লীগ গণমাধ্যম কীভাবে ব্যবহার করেছে কার মাধ্যমে ব্যবহার করেছে তা প্রকাশ করা। আমরা গণমাধ্যমে থাকা দোসরদের তালিকা তৈরি করলেও রাষ্ট্রের সহযোগিতা না থাকায় সুফল পাচ্ছি না।
জুলাই রেভ্যুলেশনারি জার্নালিস্টস অ্যালাইন্স, জুলাই ঐক্যের সংগঠক ও দৈনিক জনকণ্ঠের জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক ইসরাফিল ফরাজী বলেন, আমরা দেখছি গণমাধ্যম কীভাবে এখনও পর্যন্ত আওয়ামী লীগের পাশে থেকে কাজ করছে। সরকার আওয়ামী লীগ এবং তার সহযোগী সব সংগঠনের কার্যক্রম বন্ধ করার ঘোষণা দিলেও তার কোনো কার্যকারী কিছু দেখতে পাচ্ছি না। গণমাধ্যমে অভ্যুত্থানের আগে যারা নিয়ন্ত্রণ করেছে এখনও তাদের হাতেই এই নিয়ন্ত্রণ। তিনি বলেন, সম্প্রতি বগুড়ায় উদীচীর একটি অনুষ্ঠানে বাঁধা দেয় ছাত্র জনতা। কিন্তু গণমাধ্যম উদীচীল কথা না বলে বলছে জাতীয় সংগীত গোইতে বাঁধা দেওয়া হয়েছে। মনে রাখা দরকার উদীচী আওয়ামী লীগের কালচারাল উইং। তারা এখনও মাঠে নামে কীভাবে? গণমাধ্যমে এরকম শিরোনাম নিয়মিত হচ্ছে। কোনো আওয়ামী লীগ নেতা গ্রেফতার হলে বলা হচ্ছে অভিনেতা গ্রেফতার, ব্যবসায়ী গ্রেফতার। এগুলো যারা করছেন ইচ্ছাকৃতভাবেই করছেন। আমরা গণঅভ্যুত্থানকে বিনষ্ট করতে দিব না। অবিলম্বে গণমাধ্যম সংস্কার করুন। গণমাধ্যম ফ্যাসিবাদ মুক্ত করুন।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী ছাত্র নেতা ও জুলাই ঐক্যের অন্যতম সংগঠক মুসাদ্দেক আলী ইবনে মোহাম্মদ একটি গণমাধ্যমের শিরোনামের কথা উল্লেখ করে বলেন, আমরা দেখছি কীভাবে শব্দ নিয়ে খেলা করে বিপ্লব এবং অন্তর্বর্তী সরকারকে প্রশ্নবিদ্ধ করা হচ্ছে। আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের প্রধান প্রসিকিউটর বলেছেন জুলাই আগস্ট আন্দোলনে ‘জেনোসাইড’ হয়নি ‘ম্যাস কিলিং’ হয়েছে। চিফ প্রসিকিউটরের এই বক্তব্যকে ভুলভাবে উপস্থাপনা করা হলো। ওই পত্রিকা শিরোনামে বলা হল জুলাইয়ে কোনো গণহত্যা হয়নি। যারা গণমাধ্যম ব্যবহার করে এখনও ষড়যন্ত্র করছেন তাদের উচিত হবে সংশোধন হওয়া অন্যথায় ছাত্রজনতা বিষয়টি বিবেচনা করবে।
অনুষ্ঠানে প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন সংগঠনটির আহ্বায়ক প্লাবন তারিক। এ সময় আরও উপস্থিত ছিলেন দৈনিক আমার দেশ পত্রিকার নির্বাহী সম্পাদক সৈয়দ আবদাল হোসেন, এটিএন বাংলার প্রধান প্রতিবেদক একরামুল হক সায়েম ও দ্যা বিজনেস স্ট্যান্ডার্ড পত্রিকার প্রধান প্রতিবেদক আব্বাস উদ্দীন নয়ন প্রমুখ।