
আবারও লাশ পড়ল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায়। মঙ্গলবার (১৩ মে) সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে দুর্বৃত্তদের ছুরিকাঘাতে নিহত হন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের স্যার এ এফ রহমান হলের শিক্ষার্থী শাহরিয়ার আলম সাম্য।
কেবল সাম্যই নন, স্বাধীনতার পর থেকে রাজনৈতিক সংঘাতসহ নানা কারণে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রায় ৭৬ খুনের তথ্য পাওয়া গেছে। গণমাধ্যম এবং বিভিন্ন নথি বিশ্লেষণ করে এসব তথ্য পাওয়া গেছে।
সবগুলো হত্যাকাণ্ডের বিস্তারিত তথ্য যাচাই সম্ভব হয়নি।
অধিকাংশ ক্ষেত্রে রাজনৈতিক বিরোধ, দলীয় কোন্দল, চাঁদাবাজি, অভ্যন্তরীণ বিভিন্ন দল-উপদলের দ্বন্দ্ব ও নারীঘটিত কারণে হত্যাকাণ্ডগুলো সংঘটিত হয়েছে।
তবে বিভিন্ন সময়ে হওয়া এই ৭৬ হত্যাকাণ্ডের অধিকাংশেরই বিচার হয়নি। কোনো কোনোটির রায় হলেও আসামির চূড়ান্ত শাস্তি নিশ্চিত করা যায়নি।
জুলাই গণঅভ্যুত্থানের পর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায় দুটি খুনের ঘটনা ঘটেছে। ২০২৪ সালের ১৮ সেপ্টেম্বর চোর সন্দেহে তোফাজ্জল হোসেন (৩২) নামে এক মানসিক ভারসাম্যহীন যুবককে গণপিটুনি দিয়ে হত্যা করে হলের একদল শিক্ষার্থী।
এ ঘটনায় ৮ জনের সম্পৃক্ততা পেয়েছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। এরমধ্যে ৬ জনকে ইতোমধ্যে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয় বাদী হয়ে শাহবাগ থানায় একটি মামলা করেছে। তবে এখনো এ বিচারের কোনো অগ্রগতি নেই।
এর আগে ২০১০ সালের ১ ফেব্রুয়ারি স্যার এ এফ রহমান হলের অভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্বে পড়ে খুন হন ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি বিভাগের শিক্ষার্থী আবু বকর। ২০১৭ সালে এ মামলার রায়ে ছাত্রলীগের সাবেক ১০ নেতাকর্মী বেকসুর খালাস পান। অথচ রায়ের ব্যাপারে নিহতের পরিবার কিংবা বাদীকে কোনো কিছু জানানো হয়নি।
সেসময় ১০ শিক্ষার্থীকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় সিন্ডিকেট বহিষ্কার করে। তবে পরে হাইকোর্টের রিটের পর ২০১২ সালে তাদের বহিষ্কারাদেশ অবৈধ ঘোষণা করেন আদালত। জুলাই অভ্যুত্থানের পর এ ঘটনায় পুনরায় উচ্চ আদালতে আপিলের সিদ্ধান্ত নিয়েছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ১৯৭১ সালের পর প্রথম হত্যাকাণ্ডের খবর পাওয়া যায় ১৯৭৪ সালের ৪ এপ্রিল। সেদিন মধ্যরাতে হঠাৎ গুলির শব্দে কেঁপে ওঠে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এলাকা। হাজী মুহম্মদ মুহসীন হলে পয়েন্ট ব্ল্যাঙ্ক রেঞ্জের গুলিতে একে একে লুটিয়ে পড়েন সাতজন।
রাজনৈতিক বিরোধকে কেন্দ্র করে এদিন মাস্টার দা সূর্যসেন হলের প্রথম বর্ষের শিক্ষার্থী বসির উদ্দিন আহমেদ, সমাজবিজ্ঞান বিভাগের প্রথম বর্ষের শিক্ষার্থী আবুল হোসেন, সৈয়দ রিজওয়ানুর রব, এবাদ খান, সমাজবিজ্ঞানের দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী সৈয়দ মাসুদ মাহমুদ বাব্বন, ম্যানেজমেন্ট বিভাগের প্রথম বর্ষের এম এ ইদ্রিস, সমাজবিজ্ঞানের এম এ চূড়ান্ত বর্ষের শিক্ষার্থী নাজমুল হক কোহিনুরকে মুহসীন হলের টিভি রুমের সামনে ব্রাশফায়ার করা হয়।
সাত খুনের ঘটনার নেপথ্যে ছিলেন ছাত্রলীগের তৎকালীন সাধারণ সম্পাদক শফিউল আলম প্রধান। ঘটনায় জড়িত থাকার প্রমাণ পেয়ে তাকে মৃত্যদণ্ড এবং বাকি আসামিদের ২২ বছরের কারাদণ্ড দেওয়া হয়। কিন্তু রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান ক্ষমতায় এসে আসামিদের সাজা প্রথম ১০ বছর করেন। পরে সাধারণ ক্ষমা ঘোষণা করেন।
১৯৭৭ সালের ২৭ সেপ্টেম্বর প্রেম-সংক্রান্ত বিরোধকে কেন্দ্র করে জগন্নাথ হলের ভূতত্ত্ব বিভাগের শেষ বর্ষের শিক্ষার্থী বীরেন্দ্র কুমার সরকারকে ছুরিকাঘাতে হত্যা করেন একই হলের রণজিৎ কুমার মজুমদার। এ ঘটনায় বাদী হয়ে মামলা করেন হলের প্রাধ্যক্ষ জপব্রত রায় চৌধুরী। তবে মামলার পর তিনি কখনো আদালতে যাননি। এদিকে রণজিৎ পুলিশকে ফাঁকি দিয়ে ভারতে পালিয়ে যান।
১৯৮৮ সালে সপরিবারে আমেরিকায় চলে যান জপব্রত রায়। অন্যদিকে মামলার অপর চারজন সাক্ষী নিহত বীরেন্দ্রর বন্ধু স্বপন কুমার রায়, সচিন্দ্র চন্দ্র ঘোষ, শীষ মোহাম্মদ এবং পুলিশের তৎকালীন সহকারী উপ-পরিদর্শক মামলার রেকর্ড অফিসার আবদুল বারীকেও আদালতে হাজির করতে পারেনি পুলিশ। ঘটনার ৩৭ বছর পর ২০১৪ সালে তদন্তকারী কর্মকর্তা খোরশেদ আলম আদালতে সাক্ষ্য দিতে এলেও ‘কেস ডকেট’ না থাকায় সাক্ষ্যগ্রহণ শেষ করা যায়নি।
১৯৭৭ সালে ছাত্রলীগের দুই গ্রুপের সংঘর্ষে লুকুসহ ২ জন নিহত হন। একই বছর রণ্টু নামে একজন বিশ্ববিদ্যালয়ে সক্রিয় নুর গ্রুপের হাতে প্রাণ হারান। এ বছর হনু এবং গোপাল নামে বিশ্ববিদ্যালয়ের আরও দুজন শিক্ষার্থী নিহত হন। ১৯৭৮ সালে লিয়াকতসহ দুজন খুন হন।
এরশাদের শাসনামলে প্রণীত মজিদ খান শিক্ষানীতির বিরুদ্ধে প্রগতিশীল ছাত্রসংগঠনগুলো আন্দোলনে নামে। ১৯৮৩ সালের ১৩ ফেব্রুয়ারি এই আন্দোলনে ছাত্র-পুলিশ সংঘর্ষে জয়নাল নিহত হন।
১৯৮৫ সালের ১৩ ফেব্রুয়ারি এরশাদবিরোধী মিছিল নিয়ে মুহসীন হলের ফটক পার হওয়ার সময় এরশাদ সমর্থিত নতুন বাংলা ছাত্রসমাজের গুলিতে নিহত হন জাতীয় ছাত্রলীগের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সাধারণ সম্পাদক রউফুন বসুনিয়া। ১৯৮৬ সালের ৩১ মার্চ ডাকসু নির্বাচনকে কেন্দ্র করে ছাত্র ইউনিয়ন কর্মী মাজহারুল হক আসলাম নামে একজন নিহত হন।
১৯৮৭ সালের ৯ মার্চ হাজী মুহম্মদ মুহসীন হলে বোমা বানাতে গিয়ে ছাত্রদলের তৎকালীন সাধারণ সম্পাদক মাহবুবুল হক বাবলু এবং তার দুই সহযোগী মাঈনুদ্দিন ও নূর মোহাম্মদ নিহত হন। একই বছরের ১৪ জুলাই জাসদ ছাত্রলীগের সঙ্গে সংঘর্ষে আব্দুল ওয়াদুদ হালিম নামে ছাত্রদলের এক কর্মী নিহত হন। এ ঘটনার পরদিন ছাত্রদল ও জাসদ ছাত্রলীগের সংঘর্ষে মুন্না নামে একজন গুলিবিদ্ধ হয়ে মারা যান। ঘটনাস্থলে আব্দুর রহিম নামে এক রিকশাচালক এবং কামরুল হাসান নামে এক পথচারী গুলি লেগে নিহত হন। এসব ঘটনায় তদন্ত কমিটি গঠন করা হলেও পরে কোনো রিপোর্ট পাওয়া যায়নি।
১৯৮৮ সালের ১১ ডিসেম্বর ছাত্রদলের অভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্বে বজলুর রশীদকে খুন করা হয়। ১৯৮৯ সালের ৮ ফেব্রুয়ারি মতান্তরে ৯ ফেব্রুয়ারি ডাকসু নির্বাচনকে কেন্দ্র করে বিশ্ববিদ্যালয়ের মধুর ক্যান্টিনের সামনে ছাত্রদলের গোলাগুলিতে জাসদ ছাত্রলীগ কর্মী কফিল উদ্দিন কনক গুলিবিদ্ধ হয়ে নিহত হন। একই বছরের ২৯ ডিসেম্বর রাতে সলিমুল্লাহ মুসলিম হলের সামনে গুলিবিদ্ধ হয়ে মারা যান মার্কেটিং বিভাগের শিক্ষার্থী আরিফ।
১৯৯০ থেকে ১৯৯৯ সাল পর্যন্ত ৩৪ খুন
১৯৯০ সালের ২১ ফেব্রুয়ারি ছাত্রলীগ নেতার সঙ্গে দ্বন্দ্বে সূর্যসেন হলের শিক্ষার্থী আলমগীর কবীর নিহত হন। একই মাসের ২৫ ফেব্রুয়ারি ছাত্রলীগ নেতা ও জহুরুল হক হল ছাত্র সংসদের সহ-সভাপতি শহীদুল ইসলাম চুন্নু গুলিবিদ্ধ হয়ে মারা যান। একই বছরের ২৬ নভেম্বর পরমাণু শক্তি কমিশনের সামনে নিমাই নামের একজন গুলিবিদ্ধ হয়ে মারা যান।
একই বছর হাজী মুহম্মদ মুহসীন হলের এক জাসদকর্মী নিহত হন। এ সময় ফজলুল হক মুসলিম হল থেকে শাহীন নামে এক শিক্ষার্থীর লাশ উদ্ধার করা হয়। ১৯৯০ সালের ২৭ নভেম্বর স্বৈরশাসনবিরোধী আন্দোলনের সময় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় লাইব্রেরি সংলগ্ন টিএসসি মোড়ে সামরিক বাহিনী রিকশা লক্ষ্য করে গুলি করে। এতে গুলিবিদ্ধ হয়ে ডা. শামসুল আলম খান মিলন নিহত হন।
১৯৯১ সালের ২১ জানুয়ারি সূর্যসেন হলের ছাত্র আলমগীর কবির লিটনের গুলিবিদ্ধ দেহ উদ্ধার করা হয়। ২০ জুন জাসদ ছাত্রলীগ এবং আওয়ামী লীগ সমর্থক ছাত্রলীগের সংঘর্ষে জাসদ ছাত্রলীগ নেতা মাহবুবুর রহমান খুন হন। ১৯৯১ সালের ২৭ অক্টোবর ছাত্রলীগ ও ছাত্রদলের সংঘর্ষে ছাত্রদল নেতা গালিব, লিটন এবং ছাত্রলীগের নেতা মিজান খুন হন। এসময় অজ্ঞাত পরিচয়ের একজনও নিহত হন।
১৯৯২ সালের ৯ জানুয়ারি ছাত্রলীগের অভ্যন্তরীণ কোন্দলে শামসুন নাহার হলের সামনে তৎকালীন কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক মনিরুজ্জামান বাদল গুলিবিদ্ধ হয়ে নিহত হন। পরবর্তীতে ১৩ মার্চ ছাত্র ইউনিয়ন নেতা ও মৃত্তিকা বিজ্ঞান বিভাগের মেধাবী ছাত্র মঈন হোসেন রাজু ছাত্রলীগ ও ছাত্রদলের গোলাগুলিতে পড়ে নিহত হন। ২৭ জুন সার্জেন্ট জহুরুল হক হলে গুলিবিদ্ধ হয়ে মারা যান ছাত্রলীগ কর্মী লাক্কু। একই বছরের ১১ জুলাই কার্জন হল থেকে তন্ময় নামে একজনের লাশ উদ্ধার করা হয়। ৩০ আগস্ট ছাত্রদলের ইলিয়াস গ্রুপ এবং রতন গ্রুপের মধ্যে সংঘর্ষে অজ্ঞাতনামা একজন নিহত হন। এই দুই গ্রুপের সংঘর্ষে ৪ সেপ্টেম্বর ছাত্রদল নেতা আশরাফুল আলম মামুন ও খন্দকার মাহমুদ হোসেন নিহত হন।
১৯৯৩ সালে চাঁদা আদায়ের ভাগ-বাটোয়ারাকে কেন্দ্র করে ছাত্রদলের কেন্দ্রীয় নাট্য সম্পাদক জিন্নাহকে গুলি করে হত্যা করা হয়। এ ঘটনায় তদন্ত কমিটি হলেও কোনো অগ্রগতির তথ্য পাওয়া যায়নি। এ সময় আরও দুই কর্মচারী নিহত হয়েছেন বলে তথ্য পাওয়া যায়। তবে তাদের নাম জানা যায়নি। ১৯৯৩ সালের ২২ নভেম্বর বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের ফটকে রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের অলোক কান্তি পাল গুলিবিদ্ধ হয়ে মারা যান।
১৯৯৪ সালে ফজলুল হক মুসলিম হলে গণিত বিভাগের প্রথম বর্ষের এক শিক্ষার্থীর লাশ উদ্ধার করা হয়। একই বছরের ১ সেপ্টেম্বর কামরুল ইসলাম বুলবুল নামে গ্রন্থাগার ব্যবস্থাপনা বিভাগের মাস্টার্সের শিক্ষার্থী গুলিবিদ্ধ হয়ে মারা যান। এ বছরের ২২ সেপ্টেম্বর ফজলুল হক মুসলিম হলে ছাত্রদলের সংঘর্ষে সরোয়ার খান মিঠু নিহত হন। ১৯৯৪ সালের ২৭ অক্টোবর জগন্নাথ হলে সমাজবিজ্ঞান বিভাগের মাস্টার্স শেষ বর্ষের শিক্ষার্থী জাকিরকে হত্যা করা হয়।
১৯৯৬ সালের ২২ সেপ্টেম্বর ছাত্রলীগের কোন্দলে জগন্নাথ হলের একজন নিহত হন। ১৯৯৭ সালের ১৩ মার্চ ছাত্রদলের একটি সশস্ত্র গ্রুপ বঙ্গবন্ধু হলের আরিফ হোসেন তাজকে হত্যা করে। ১৯৯৭ সালে শাহীন নামে একজনের লাশ কার্জন হল থেকে উদ্ধার করা হয়। ১৯৯৮ সালের ২৩ এপ্রিল মধুর ক্যান্টিনে ছাত্রদলের গুলিতে নিহত হন ছাত্রলীগ নেতা পার্থ প্রতিম আচার্য। ১৯৯৮ সালের জগন্নাথ হলের এক শিক্ষার্থী ছাত্রলীগের কোন্দলে মারা যান।
১৯৯৯ সাল মনির হোসাইন ও ফিরোজ নামে দুজন খুন হন। ২০০০ সালের ১ জানুয়ারি ক্যাম্পাসে ছিনতাইকারী ছুরিকাঘাতে নিহত হন এলজিআরডি মন্ত্রণালয়ের যুগ্ম-সচিব নিকুঞ্জ বিহারী নাগ। একই বছরে ছাত্রদলের দুই গ্রুপের সংঘর্ষে অজ্ঞাতনামা একজন নিহত হন। ২০০১ সালের ২৯ মার্চ খায়রুল ইসলাম লিটন নামে ছাত্রলীগের এক নেতা নিহত হন। ২০০৩ সালের ২৫ ডিসেম্বর মোহাম্মদপুরের ব্যবসায়ী ইয়াছমিন এবং ইসমাইলের লাশ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে পাওয়া যায়।
২০০৪ সালের ১৭ জুলাই বিশ্ববিদ্যালয়ের কলাভবনের গ্যারেজের সামনে থেকে শামসুর নামে একজনের লাশ উদ্ধার করা হয়। একই বছরের ১৫ সেপ্টেম্বর ছাত্রদলের অভ্যন্তরীণ কোন্দলে নিহত হন বিশ্ববিদ্যালয়ের জহুরুল হক হল ছাত্রদলের নেতা মাহাবুবুল ইসলাম খোকন। ওই হত্যাকাণ্ডের পর দুটি তদন্ত কমিটি গঠিত হলেও প্রতিবেদন জমা পড়েনি। শাহবাগ থানায় মামলা হলেও এর বিচারকাজ শেষ হয়নি।
সুরাহা হয়নি অধ্যাপক আফতাব হত্যার
২০০৬ সালের ২৩ সেপ্টেম্বর রাত পৌনে আটটার দিকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ফুলার রোডের বাসায় দুর্বৃত্তরা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞানের অধ্যাপক আফতাব উদ্দিনকে গুলি করে। তিন দিন চিকিৎসাধীন থাকার পর ২৬ সেপ্টেম্বর তিনি মারা যান। এ ঘটনায় তার স্ত্রী বাদী হয়ে একটি হত্যা মামলা করলেও গত ১৮ বছরেও মামলার জট খুলতে পারেনি পুলিশ।
২০১৫ সালে তার স্ত্রী নুরজাহানও মারা যান। বাদী হয়ে অন্য কেউ এই মামলা নিয়ে সোচ্চার হননি। এ পর্যন্ত ১২ জন তদন্ত কর্মকর্তা বদল হয়েছে, কিন্তু অধ্যাপক আফতাবকে কারা গুলি করেছে, তা এখনো শনাক্ত করা যায়নি।
রাজনৈতিক বিশ্লেষক ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের সাবেক অধ্যাপক আবুল কাসেম ফজলুল হক মনে করেন, এ ধরনের হত্যাকাণ্ড এবং বিচার না হওয়ার ঘটনায় মূল দুর্বলতা রাজনৈতিক।
বাংলানিউজকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে তিনি বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ে এ ধরনের ঘটনা ঘটা উচিত নয় এবং স্বাভাবিকও নয়। বেশ কয়েকটি ঘটনা বিবেচনা করলে এসব ঘটনা হয়তো সমাধানও করা যাবে। কিন্তু আমাদের দেশে তো কোনো কিছুই সেভাবে বিবেচনা করা হয় না। সেকারণে বিচারও হয় না।
আবুল কাসেম ফজলুল হক বলেন, এগুলোর প্রতিকার চাইলে আমাদের রাষ্ট্রের এবং চিন্তা-ভাবনার কিছু পরিবর্তন দরকার। কিন্তু এসব নিয়ে রাজনৈতিক মহলে কোনো আলোচনা নেই। এই সমস্যার সমাধানে কোনো একটি জায়গায় প্রতিকার করলে হবে না। বরং একসাথে অনেকগুলো জায়গায় পরিবর্তন আনতে হবে। রাষ্ট্রকে পর্যায়ক্রমিক উন্নতির দিকে নিয়ে যেতে হবে।
এই অধ্যাপক বলেন, ১৯৭২ সাল থেকে বাংলাদেশ এত ঢিলেঢালা অবস্থায় আছে। সমস্যার দীর্ঘস্থায়ী সমাধানের জন্য রাজনৈতিক নেতৃত্ব প্রয়োজন। কিন্তু এখানে সে প্রচেষ্টা দেখি না।
‘মানুষের মন মানসিকতার পরিবর্তন করতে হবে। আমাদের সমাজ এমন হয়েছে, এখানে টাকা-পয়সা, সম্পত্তি কে কত বেশি অর্জন করতে পারে, তার ওপর মানুষের মর্যাদা নির্ধারিত হয়। আগে যেমন ধর্মের গুরুত্ব ছিল, দার্শনিক, বৈজ্ঞানিক, চিন্তাবিদ—এ ধরনের মানুষকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দেওয়া হতো। কিন্তু গত ৫০ বছরে সমাজ এসব থেকে সরে একটা সম্পূর্ণ বিশৃঙ্খলার মধ্যে পড়ে গেছে। রাজনৈতিক নেতৃত্ব সেভাবে গঠন করা হলে, এ সমস্যার সমাধান করা সম্ভব হবে।