
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রদল নেতা শাহরিয়ার আলম সাম্য হত্যাকাণ্ডের খবরে তার সিরাজগঞ্জের গ্রামের বাড়িতে চলছে শোকের মাতম। এমন বিনয়ী আর নম্র-ভদ্র ছেলেকে খুন হতে হবে- এটা স্বজন-প্রতিবেশী কেউ মেনে নিতে পারছেন না।
রাজধানীর সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের ভেতর দিয়ে মোটরসাইকেল চালিয়ে আসার সময় মঙ্গলবার রাত ১১টার ছুরিকাঘাতে আহত হন সাম্য (২৫)। তাকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হলে চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন।
গণমাধ্যমে সাম্যর মৃত্যুর খবর দেখে স্বজন ও প্রতিবেশীরা ভিড় করেন বেলকুচি উপজেলার ধুকরিয়াবেড়া ইউনিয়নের সরাতৈল গ্রামের বাড়িতে।
সাম্যর চাচা কায়সার উল আলম বলেন, “টেলিভিশনে ভাতিজা সাম্যর হত্যার সংবাদ দেখে গ্রামবাসী ও স্বজনদের ফোন আসতে থাকে। তারা বাড়িতে ভিড় করছেন। বিশ্ববিদ্যালয় পড়ুয়া এমন সম্ভাবনাময় টগবগে তরুণকে নৃশংসভাবে হত্যা করা হবে আমরা কখনো ভাবিনি। ভাবতেই পারছি না, আমার ভাতিজার সঙ্গে আর কখনও কথা হবে না, সে আর বাড়ি আসবে না।”
সাম্যর প্রতিবেশী চাচা কবির সরদার বলেন, “সাম্য প্রতি বছর গ্রামের বাড়িতে বেড়াতে আসত। আমাদের সঙ্গে কুশল বিনিময় হত। এমন বিনয়ী নম্র-ভদ্র একটা ছেলেকে এভাবে খুন করা হবে এটা আমরা তা মেনে নিতে পারছি না। সাম্য আর বাড়িতে আসবে না, এটা ভাবতেই কষ্ট হচ্ছে।”
সাম্যর ছোট চাচী তানিয়া খাতুন বলেন, “প্রতি বছর দুই-তিনবার সাম্য গ্রামের বাড়িতে আসত। তার সঙ্গে আমাদের অনেক স্মৃতি। হঠাৎ এমন সংবাদে আমরা হতবাক হয়েছি।”
স্বজন ও প্রতিবেশীরা সাম্য হত্যার সঙ্গে জড়িতদের গ্রেপ্তার ও শাস্তি দাবি করেছেন।
স্বজনরা জানান, শাহরিয়ার আলম সাম্যের বাবা ফকরুল আলম ঢাকার মিরপুরে রূপনগর আবাসিক এলাকায় ১৮ নম্বর সড়কে একটি বহুতল ভবনের সপ্তম তলায় নিজস্ব ফ্লাটে থাকেন।
চার ভাইয়ের মধ্যে সাম্য সবার ছোট। তার বড় ভাই আমিরুল ইসলাম সাগর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রদলের মুক্তিযোদ্ধা বিষয়ক সম্পাদক ছিলেন।
সাম্য বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের ২০১৮-১৯ শিক্ষাবর্ষের ছাত্র ছিলেন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের স্যার এ এফ রহমান হল শাখা ছাত্রদলের সাহিত্য ও প্রকাশনা সম্পাদক সাম্য হলের ২২২ নম্বর কক্ষে থাকতেন।
শিক্ষাজীবনের শুরুতে সাম্য উল্লাপাড়া মোমোনা আলী বিজ্ঞান স্কুলে ষষ্ঠ শ্রেণিতে ভর্তি হন। সেখান থেকে এসএসসি পাশ করে তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হন। কয়েক বছর আগে তার মা মারা গেছেন।
এদিকে, সাম্য হত্যার প্রতিবাদে সিরাজগঞ্জ সরকারি কলেজ এবং ইসলামী সরকারি কলেজ ছাত্রদলের সমন্বয়ে সকালে বিক্ষোভ হয়েছে।
জেলা ছাত্রদলের সভাপতি জুনায়েদ হোসেন সবুজ বলেন, “দেশের যে কোনো আন্দোলনে ছাত্রদলের নেতাকর্মীরাই বেশি ত্যাগ স্বীকার করেছে। অত্যাচার-নির্যাতনের শিকার আমরাই বেশি হয়েছি। অন্তর্বর্তী সরকারের আমলেও আমাদের নেতাকর্মীদের হত্যা করা হচ্ছে। দ্রুত হত্যাকারীদের গ্রেপ্তার ও শাস্তি দাবি করছি।”
বাদ মাগরিব জানাজা ও দাফন
ময়নাতদন্ত শেষে দুপুরে সাম্যর প্রথম জানাজা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় জামে মসজিদে অনুষ্ঠিত হয়েছে। পরে তার মরদেহ নিয়ে গ্রামের বাড়ির উদ্দেশে রওনা দিয়েছেন স্বজনরা।
সাম্যর চাচা কায়সার উল আলম বলেন, “বাদ মাগরিব সড়াতৈল গ্রামের মাদ্রাসা মাঠে তার দ্বিতীয় জানাজা হবে। পরে সড়াতৈল কবরস্থানে তাকে দাফন করার কথা রয়েছে। আমরা সেভাবে প্রস্তুতি নিচ্ছি।”