
গণভবনে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার মন খারাপ থাকলে গান শুনিয়ে মন ভালো করিয়ে দিতেন মানিকগঞ্জ-২ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য ও সংগীতশিল্পী মমতাজ বেগম। মঙ্গলবার (১৩ মে) ঢাকার মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে মিরপুর মডেল থানার এক হত্যা মামলার শুনানিতে এমন মন্তব্য করেন ঢাকার মহানগর পাবলিক প্রসিকিউটর ওমর ফারুক ফারুকী।
সেদিন দুপুর ২টা ২০ মিনিটের দিকে মমতাজকে ঢাকার চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট (সিএমএম) আদালতে হাজির করা হয় এবং তাকে হাজতখানায় রাখা হয়। এরপর বিকেল ৩টার দিকে তাকে সিএমএম আদালতের সাততলায় মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট মো. জুয়েল রানার আদালতে তোলা হয়। আদালত তখন বিপুল সংখ্যক পুলিশ, আইনজীবী ও সাংবাদিকে পূর্ণ হয়ে ওঠে। শুনানি শুরু হয় বিকেল ৩টা ৭ মিনিটে।
শুনানির শুরুতেই রাষ্ট্রপক্ষের কৌঁসুলি ওমর ফারুক বলেন, “আমরা জাতি হিসেবে আবেগপ্রবণ। একজন ভালো খেলোয়াড় বা শিল্পীর কাজ আমরা ভালোবাসি, তার রাজনৈতিক পরিচয় দেখি না। কিন্তু এই আসামি (মমতাজ) জনগণের ভালোবাসাকে ব্যবহার করে ফ্যাসিস্ট হাসিনাকে সহযোগিতা করেছেন।”
তিনি আরও বলেন, “দেশ যখন গুম, আয়নাঘর আর আন্দোলনে গুলি করার দুঃসময় পার করছিল, তখন মমতাজ গানের মাধ্যমে হাসিনার মন ভালো করতে গণভবনে যেতেন। এমনকি সংসদে দাঁড়িয়ে গান গেয়েছেন— ‘আমার নেত্রী শেখ হাসিনা, সারা বিশ্বে নাই তার তুলনা।’ অথচ ওই অধিবেশনগুলোতে কোটি কোটি টাকা ব্যয় হয়।”
শুনানিতে আরও উল্লেখ করা হয়, সংসদে দাঁড়িয়ে মমতাজ বিরোধীদলীয় নেত্রী খালেদা জিয়াকে নিয়ে কটূক্তি করেন, এমনকি তার পিতার নাম নিয়েও মন্তব্য করেন। আদালতকক্ষে উপস্থিত আইনজীবীরা তখন ‘শেইম শেইম’ বলে স্লোগান দেন।
মমতাজ কাঠগড়ায় পুরো সময় নিরুত্তাপ থাকলেও, গণভবনে গান গাওয়ার প্রসঙ্গে আদালতে হাস্যরস তৈরি হলে তিনিও হেসে ওঠেন।
পরে বিচারক মমতাজের আইনজীবীর উপস্থিতি সম্পর্কে নিশ্চিত হন। আসামিপক্ষে উপস্থিত রেজাউল করিমকে ওকালতনামায় স্বাক্ষর করতে বলেন এবং মমতাজ সম্মতি দেন। তবে আইনজীবী জানান, সেদিন তার কোনো বক্তব্য নেই। এরপর আদালত মমতাজের চার দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন।
এর আগে সোমবার রাত ১১টা ৪৫ মিনিটে রাজধানীর ধানমন্ডি এলাকা থেকে মমতাজকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ।
প্রসঙ্গত, গত বছরের ১৯ জুলাই মিরপুর-১০ গোলচত্বর এলাকায় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে অংশ নেন মো. সাগর নামের এক শিক্ষার্থী। বিকেল সাড়ে ৪টার দিকে আন্দোলনকারীদের ওপর হামলা ও গুলিবর্ষণ করা হয়। গুলিতে সাগর নিহত হন। পরদিন তার মরদেহ পাওয়া যায় একটি বেসরকারি হাসপাতালে। নিহতের মা বিউটি আক্তার ২৭ নভেম্বর মিরপুর মডেল থানায় মামলা করেন, যাতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ ২৪৩ জনের নাম উল্লেখ করা হয় এবং আরও ২৫০-৪০০ জনকে অজ্ঞাত আসামি করা হয়। মমতাজ বেগম এই মামলার ৪৯ নম্বর এজাহারভুক্ত আসামি।