
গত বছরের ১৪ নভেম্বর ২৪২ সদস্যবিশিষ্ট ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় (ঢাবি) শাখা ছাত্রদলের পূর্ণাঙ্গ কমিটি ঘোষণা করেছিল বিএনপি। এ কমিটিতে জায়গা পেয়েছিলেন নিষিদ্ধ সংগঠন ছাত্রলীগের একাধিক কর্মী ও বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে নিয়ে বিদ্রূপকারী এক নারী শিক্ষার্থীও। কমিটি ঘোষণার পরপরই এসব অভিযোগ ওঠার পরিপ্রেক্ষিতে পরবর্তী সময়ে ১৭ নভেম্বর দলটির ৬ নেতাকে অব্যাহতি দেওয়া হয়েছিল। যদিও সেই পূর্ণাঙ্গ কমিটিতে ৪০-এর অধিক ‘অনুপ্রবেশ-বিতর্কিত’ নেতার স্থান হয়েছিল বলে জানায় শাখা ছাত্রদলের একাধিক সূত্র।
সর্বশেষ সোমবার (৩০ জুন) সাত বছর আগে ছাত্রশিবিরের সংগীতের মডেলিংয়ে অংশ নেওয়ার দায়ে শাখা ছাত্রদলের ধর্মবিষয়ক সম্পাদক শরীফ উদ্দিন সরকারকে স্থায়ী বহিষ্কার করেছে সংগঠনটির কেন্দ্রীয় সংসদ। ছাত্রদলে এমন বহিষ্কার নিয়ে তুলকালাম চলছে সংগঠনটির ভেতর ও বাইরে। তবে একই সময়ে শাখাটির আরেক নেত্রীর দলে জায়গা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। সম্প্রতি ওই নেত্রী বিএনপির জুলাই-আগস্ট গণঅভ্যুত্থান, শোক ও বিজয়ের বর্ষপূর্তি পালন অভ্যর্থনা উপকমিটির সদস্য হিসেবে দায়িত্ব পেয়েছেন।
ওই নেত্রীর নাম চেমন ফারিয়া ইসলাম মেঘলা। তিনি শাখা ছাত্রদলের ছাত্রীবিষয়ক সম্পাদক। তার বিরুদ্ধে অভিযোগ, তিনি গত ৫ আগেস্টর আগে ক্যাম্পাসে ছাত্রলীগের সক্রিয় কর্মী ছিলেন এবং তাদের সব অনুষ্ঠানে অংশও নিয়েছেন। ফলে ছাত্রশিবিরকে বহিষ্কৃত আর ছাত্রলীগকে পুরস্কৃত করা হচ্ছে ছাত্রদলে, এ প্রশ্ন তুলেছেন অনেকেই। তারা বলছেন, যে অভিযোগে শরীফ উদ্দিন সরকারকে স্থায়ী বহিষ্কার করেছে, সেই অভিযোগে চেমন ফারিয়া ইসলাম মেঘলার বিরুদ্ধেও ব্যবস্থা নেওয়া উচিত। এ বিষয় নিয়ে পক্ষে-বিপক্ষে বেশ আলোচনা-সমালোচনা হচ্ছে।
জানা গেছে, সাত বছর আগে ইসলামী ছাত্রশিবিরের ‘পদ্মা মেঘনা যমুনার তীরে’ সংগীতের মডেলিংয়ে অংশ নেওয়ার দায়ে শরীফ উদ্দিন সরকারকে স্থায়ী বহিষ্কার করেছে ছাত্রদল কেন্দ্রীয় সংসদ। গতকাল বিকেলে দপ্তর সম্পাদক (সহসভাপতি পদমর্যাদা) মো. জাহাঙ্গীর আলম স্বাক্ষরিত এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে বিষয়টি জানানো হয়েছে। তিনি ঢাবির ২০১৭-১৮ সেশনের আরবি বিভাগের শিক্ষার্থী ছিলেন।
গণতান্ত্রিক ছাত্র সংসদের কেন্দ্রীয় মুখপাত্র আশরেফা খাতুন ফেসবুকের এক পোস্টে লেখেন, ‘ছাত্রশিবির অন্য দলের ভেতরে নিজেদের কর্মী রাখে এটাই তাদের স্ট্র্যাটেজি। এমনটাই শুনে আসছি এত দিন। সেই হিসেবে শরীফ ভাইয়ের তো ছাত্রলীগ করার কথা। সুবিধাও পেতেন হয়তো। কিন্তু ওনাকে আমি বিগত ছয় বছরে ছাত্রদলের হয়ে কাজ করতে দেখেছি। কেমন অভিযোগ তা জানি না। কিন্তু আশ্চর্য লাগছে।’
জানা গেছে, জুলাই-আগস্ট গণঅভ্যুত্থানে শোক ও বিজয়ের বর্ষপূর্তি উদযাপনে সুনির্দিষ্ট বিষয়ে সম্প্রতি ৭টি উপকমিটি গঠন করেছে বিএনপি। এর মধ্যে একটি অভ্যর্থনা উপকমিটি। সেখানে হাবিব উন নবী খান সোহেলকে আহ্বায়ক ও শামা ওবায়েদকে সদস্যসচিব করে ৫৬ সদস্যবিশিষ্ট কমিটি প্রকাশ করা হয়। এতে ঢাবি ছাত্রদল নেত্রী ফারিয়া ইসলাম মেঘলার জায়গা পাওয়া খবরে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন সংগঠনটির সাবেক ও বর্তমান অনেক নেতা।
এই উপকমিটিতে পদ পাওয়া ছাত্রদল কেন্দ্রীয় সংসদের সহসভাপতি রেহানা আক্তার শিরিন ফেসবুকে লেখেন, ‘ফ্যাসিষ্টের সাথে আঁতাত কারা সন্ত্রাসী সংগঠন ছাত্রলীগে করা মেয়ের নিচের আমার নাম হবে কেন? পদ-পদবি জুনিয়র সিনিয়র না জেনে চিনে জুলাই আগস্ট গণঅভ্যুত্থান, শোক ও বিজয়ের বর্ষপূর্তি পালন অভ্যর্থনা উপকমিটিতে তার নাম আসে কীভাবে? এই সিন্ডিকেট কারা? দল কখনো বিপদে পড়লে এই বসন্তের কোকিলেরা থাকবে না আর এই কোকিলেদের পুনর্বাসনকারীও পড়বে বিপদে। যার যার প্রাপ্য সম্মান তাকে না দিলে প্রকৃতিও তাকে ক্ষমা করে না যথাযথ ভাবে তা ফিরিয়ে দেয়।’
ছাত্রদল কেন্দ্রীয় সংসদের সাবেক সহসভাপতি মামুন খান লেখেন, ‘জুলাই উদযাপন কমিটিতে যাদের অন্তর্ভুক্ত করা হচ্ছে, তাদের রাজনৈতিক পরিচয় যুক্ত করা হলে আরও সুন্দর হতো। এসব কাজে যারা দায়িত্বে আছেন, তারা অনেক অনেক মেধাবী কিন্তু তাদের আশপাশে মেধাহীন লোকজন বেশি মনে হচ্ছে। কমিটিতে নাম অন্তর্ভুক্ত করার আগে ৫ আগস্টের আগের নেতা-নেতা-কর্মীদের কথা কারও মনে না থাকাটা সবার জন্য বিব্রতকর।’
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক শাখা ছাত্রদলের এক নেতা দ্য ডেইলি ক্যাম্পাসকে বলেন, শরীফ বিগত সব আন্দোলনে ছাত্রদলের হয়ে অংশ নিয়েছিলেন। তাই তার আত্মপক্ষ সমর্থনের সুযোগ দেওয়া উচিত ছিল, কিন্তু সেটা দেওয়া হয়নি। তবে কমিটিতে মেঘলাসহ ছাত্রলীগের প্রোগ্রামে যেত অনেক সক্রিয় নেতা এখনো ছাত্রদলে আছে। কিন্তু তাদের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে না, যা রহস্যজনক মনে হয়। শাখা ছাত্রদলের কমিটিতে ৪৪ জনের মতো এমন বির্তকিত থাকলেও অধিকাংশের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে না বলে তিনি অভিযোগ করেন।
জানতে চাইলে শাখা ছাত্রদলের সভাপতি গণেশ চন্দ্র রায় সাহসের সঙ্গে মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি মিটিংয়ে আছেন জানিয়ে ১০ মিনিট পর কল দিতে বলেন এই প্রতিবেদককে। পরে কয়েকবার কল দেওয়া হলেও তিনি রিসিভ করেননি।
সাধারণ সম্পাদক নাহিদুজ্জামান শিপনের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে ঘটনার বিস্তারিত জানার পর তিনি বলেন, এ বিষয়ে তিনি কোনো মন্তব্য করতে রাজি নন।