Image description

রাজধানীর উত্তরায় প্রতিবন্ধী যুবকের ব্যবসা দখলসংক্রান্ত মানববন্ধনের সংবাদ প্রকাশ করায় মব সৃষ্টি করে সাংবাদিককে মেরে ফেলার হুমকির অভিযোগ উঠেছে স্থানীয় এক বিএনপি নেতার বিরুদ্ধে। অভিযুক্ত ওই নেতার নাম আল আমিন সরকার ওরফে শামীম আল মামুন ও তার ভাই মইম সরকার। এরই প্রতিবাদে মানববন্ধন করেছেন উত্তরায় বসবাসরত গণমাধ্যমকর্মীরা।

আজ মঙ্গলবার বিকেল ৫টায় উত্তরা ১২ নম্বর সেক্টরের খালপাড়ে অবস্থিত উত্তরা প্রেস ক্লাবের সামনে এই মানববন্ধন অনুষ্ঠিত হয়।

এতে বক্তারা অভিযুক্ত বিএনপি নেতা আল আমিন সরকার ও তার ভাই মইম সরকারকে দ্রুত আইনের আওতায় আনার দাবি জানান।

জানা যায়, সম্প্রতি দক্ষিণখানের ফায়দাবাদ এলাকায় বিএনপি নেতা আল আমিন সরকারের বিরুদ্ধে নাহিদ নামের এক প্রতিবন্ধী যুবক তার পরিচালিত ইট-পাথরের ব্যবসা দখলের অভিযোগ এনে মানববন্ধন করেন ভুক্তভোগী নাহিদ ও তার স্বজনরা। এ নিয়ে বিভিন্ন পত্রপত্রিকা ও অনলাইন মিডিয়ায় সংবাদ প্রকাশিত হয়। সেই সংবাদটি ফেসবুক অ্যাকাউন্টে শেয়ার দেন উত্তরা প্রেস ক্লাবের সিনিয়র সহসভাপতি বদরুল আলম মজুমদার।

আর এতেই মব সৃষ্টি করে ওই সাংবাদিককে মেরে ফেলার অডিও পাঠায় অভিযুক্ত বিএনপি আল আমিন সরকার ও তার অনুসারীরা। সেই সাথে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বিভিন্ন ভুয়া অ্যাকাউন্ট থেকেও সাংবাদিক বদরুল আলম মজুমদারের বিরুদ্ধে নানা অপতথ্য ছড়ায় চক্রের সদস্যরা।

এসবের প্রতিবাদে আয়োজিত মানববন্ধনে সাংবাদিক নেতারা বলেন, ৪৭ নং ওয়ার্ড বিএনপির সভাপতি আল আমিন ২০১৬ সালে তার নিজ দোকান থেকে ইয়াবাসহ আটক হয়ে প্রায় ৫ মাস জেল খাটে। ৫ আগষ্টের পর বিএনপির পদ ব্যবহার এলাকার নতুন বিল্ডিং এ মালামাল সাপ্লাইসহ ময়লা, ডিস ইন্টারনেটের দখল নেয় সে। সিনিয়র নেতাদের আশীর্বাদ নিয়েই এসব অপকর্ম করে আল আমিন সরকার।  

অভিযুক্ত আল আমিনের বিষয়ে সাংবাদিক বদরুল আলম মজুমদার বলেন, ‘সে খুব উগ্র প্রকৃতির লোক। তার ভাই মইম কিশোরগ্যাংয়ের সক্রিয় লিডার। এর আগে মিরপুরে এক প্রগ্রামে গিয়ে মারামারি করার কারণে দল থেকে বহিষ্কার হয় আল আমিন। পরে থানার এক শীর্ষ নেতার বিশেষ অনুগ্রহে পদ ফিরিয়ে দেন নগর নেতারা।

যেহেতু দীর্ঘদিন এ এলাকায় বসবাস করি তাই বিভিন্নভাবে খবর আসে থানার সেই শীর্ষ নেতা বিএনপির নামে দক্ষিণখানে একটি সন্ত্রাসী বাহিনী গড়ে তুলেছে। এসব বাহিনীর দ্বারা কোটি টাকার চাঁদার নিয়ন্ত্রণসহ সব কিছু তার ইশারায় চালানোর জন্যই মাদক মামলার আসামিকে বিএনপির পদ পাইয়ে দেওয়া হয়েছে।’

হুমকির বিষয়ে সাংবাদিক বদরুল আলম মজুমদার বলেন, ‘নিউজ প্রকাশ এবং সামাজিক মাধ্যমে শেয়ার দেওয়ার কারণেই তারা আমাকে মবের মাধ্যমে মারার হুমকি দিচ্ছে। আমি ফ্যাসিস্ট আমলে দুইবার উত্তরা প্রেস ক্লাবের সভাপতির দায়িত্ব পালন করেছি। ক্লাবের নেতৃত্বে থাকায় বিএনপি, আওয়ামী লীগ, জামায়াতসহ সব ধরনের লোকের সাথে উঠাবসা করতে হয়েছে। এটা নতুন কিছু না। জুলাই আন্দোলনে পুলিশ আমাকে উত্তরা থেকে ধরেও নিয়ে গেছে। অথচ, মাদক ব্যবসায়ীরা আমাকে নিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে নানা বিভ্রান্তিমূলক তথ্য ছড়াচ্ছে। যা অত্যন্ত দুঃখজনক। বিএনপির শীর্ষস্থানীয় নেতাদের দৃষ্টি আকর্ষণ করছি, যাতে এসব বিতর্কিত নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে দলীয় ব্যবস্থা নেওয়া হয়।’

মানববন্ধনে উপস্থিত উত্তরা প্রেস ক্লাবের সভাপতি এ কে আজাদ বলেন, ‘সংবাদ প্রকাশের জেরে একজন সাংবাদিককে মেরে ফেলার হুমকি নতুন বাংলাদেশের জন্য লজ্জাজনক। আমরা বলতে চাই যারা অন্যায়ভাবে উত্তরার সিনিয়র সাংবাদিক বদরুল আলম মজুমদারকে মারার হুমকি ও তার নামে অপতথ্য ছড়াচ্ছে তাদের বিরুদ্ধে দল থেকে ব্যবস্থা নিতে হবে।’

মানববন্ধনে উত্তরা প্রেস ক্লাবের সাধারণ সম্পাদক মো. আরিফুল ইসলাম বলেন, ‘সমাজের চিত্র তুলে ধরাই আমাদের গণমাধ্যমকর্মীদের দায়িত্ব। আর এ দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে যদি জীবনের ওপর হুমকি আসে তাহলে এর দ্বায়ভার রাষ্ট্রকেই বহন করতে হবে। এ সময় তিনি সিনিয়র সাংবাদিক বদরুল আলম মজুমদারকে হুমকি দেয়া ওই বিএনপি নেতাসহ তার সহযোগীদের শাস্তির দাবি জানান।’