
সাবেক রাষ্ট্রপতি মোঃ আবদুল হামিদের দেশত্যাগ নিয়ে তোলপাড় চললেও তিনি থাইল্যান্ডের রাজধানী ব্যাংককের বামরুনগ্রাদ ইন্টারন্যাশনাল হাসপাতালে চিকিৎসা নিচ্ছেন। হাসপাতালটির ক্যান্সার বিশেষজ্ঞ হারিত সুয়ানরাসমির অধীনে তার চিকিৎসা চলছে। আজ মঙ্গলবার আবদুল হামিদের বায়োপসি (ক্যান্সার নির্ণয়ের পরীক্ষা পদ্ধতি) হওয়ার কথা রয়েছে। পারিবারিক সূত্রে এ তথ্য মিলেছে।
তথ্যানুযায়ী, এখনো সাবেক রাষ্ট্রপতি হাসপাতালটিতে ভর্তি হননি। বাইরে থেকেই ওই চিকিৎসকের অধীনে চিকিৎসা নিচ্ছেন। তবে বায়োপসি রিপোর্ট পাওয়ার পর আজ-কালের মধ্যে হাসপাতালে ভর্তি হতে পারেন। এর আগে ওই হাসপাতালেই ক্যান্সার নির্ণয়ের জন্য তার পেট স্ক্যানসহ নানা ধরনের পরীক্ষা-নিরীক্ষা হয়েছে। তিনি ব্যাংককের সুকুম্ভিত এলাকায় থাকলেও তা কোনো অ্যাপার্টমেন্ট, নাকি হোটেল, সে সম্পর্কে জানাতে অপারগতা প্রকাশ করে সূত্রটি।
আবদুল হামিদের সঙ্গে তার ছোট ছেলে রিয়াদ আহমেদ তুষার ও শ্যালক ডা. নওশাদ খান রয়েছেন। নওশাদ খান কালবেলাকে বলেছেন, ‘দীর্ঘদিন ধরেই ঢাকায় সাবেক রাষ্ট্রপতির ক্যান্সার চিকিৎসা চলছিল। তার ডান ফুসফুসের ছোট টিউমার রয়েছে। সেখান থেকে ক্যান্সার ছড়িয়েছে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। বিষয়টি নিশ্চিত হওয়ার জন্য থাইল্যান্ডে তার পরীক্ষা-নিরীক্ষা চলছে। এর বাইরে তার কিডনি সমস্যা রয়েছে।’
ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানে আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের ৯ মাস পর গত ৮ মে ভোরে হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের ইমিগ্রেশন পার হয়ে দেশ ছাড়েন সাবেক রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদ। এদিন ভোর ৩টা ৫ মিনিটে থাই এয়ারওয়েজের একটি ফ্লাইটে লাল পাসপোর্টে তিনি দেশ ছাড়েন। পতিত সরকারের দুই মেয়াদে রাষ্ট্রপতির দায়িত্ব পালন করা ছাড়াও জাতীয় সংসদে স্পিকারের দায়িত্বও পালন করেন হামিদ। তবে তার বিরুদ্ধে জুলাই হত্যাকাণ্ডে কিশোরগঞ্জ সদর থানায় হত্যা মামলা থাকায় তিনি কীভাবে দেশ ছাড়লেন, সেই প্রশ্ন ওঠে। তাকে নিরাপদে ‘বিদেশে পালিয়ে যেতে’ সহায়তা করা হয়েছে বলেও অভিযোগ ওঠে। ফ্যাসিস্ট সরকারের দোসরদের পালিয়ে যেতে সহায়তা করার অভিযোগ তুলে এ নিয়ে কড়া প্রতিবাদ শুরু হয়। এর পরিপ্রেক্ষিতে সরকারও নড়েচড়ে বসে।
আবদুল হামিদের দেশত্যাগ নিয়ে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষগুলোর দায়িত্ব পালনে কোনো ব্যত্যয় বা গাফিলতি ছিল কি না, তা তদন্তে তিনজন উপদেষ্টা নিয়ে উচ্চপর্যায়ের কমিটি গঠন করে সরকার। গত রোববার শিক্ষা উপদেষ্টা অধ্যাপক সি আর আবরারকে সভাপতি করে এ কমিটি করা হয়।
এর আগে ঘটনার দিনই পুলিশ সদর দপ্তরের পক্ষ থেকে অতিরিক্ত আইজিপির নেতৃত্বে তিন সদস্যের তদন্ত কমিটি করা হয়। এ পর্যন্ত ওই ঘটনায় কিশোরগঞ্জের এসপি, ইমিগ্রেশন পুলিশের একজন অ্যাডিশনাল এসপি, আবদুল হামিদের বিরুদ্ধে দায়ের মামলার তদন্ত কর্মকর্তা এবং এসবির একজন কর্মকর্তার বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।
এদিকে হামিদের দেশত্যাগের পর নানা আলোচনা শুরু হয়। তিনি নিরাপদে থাইল্যান্ডের কথা বলে দেশ ছাড়লেও দিল্লিতে থিতু হতে পারেন বলে গুঞ্জন শুরু হয়। এর বাইরে তিনি সেখান থেকে অন্য কোনো উন্নত দেশেও চলে যেতে পারেন—এমন কথাও ছড়িয়ে পড়ে।
তবে আবদুল হামিদের সঙ্গে থাকা তার শ্যালক নওশাদ খান কালবেলাকে বলেন, ‘আপাতত তারা তার চিকিৎসা নিয়েই চিন্তিত। কারণ, তার শারীরিক অবস্থা ভালো নয়। শরীর একেবারেই দুর্বল, ওজন কমে গেছে।’
দেশে কবে ফিরবেন—এমন প্রশ্নে নওশাদ খান বলেন, ‘আপাতত তারা সাবেক রাষ্ট্রপতির চিকিৎসা নিয়েই চিন্তিত এবং ব্যস্ত রয়েছেন। চিকিৎসা শুরু হওয়ার পর তা বলা সম্ভব হবে।’
সূত্র জানায়, গত বছরের ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর দেশ ছাড়েন আবদুল হামিদের বড় ছেলে কিশোরগঞ্জ-৪ আসনের সাবেক এমপি রেজওয়ান আহম্মদ তৌফিক। এরপর বাবার সঙ্গে দেশ ছাড়েন ছোট ছেলে তুষারও। তবে সাবেক এ রাষ্ট্রপতির স্ত্রী রাশিদা খানম অসুস্থ অবস্থায় দেশে অবস্থান করছেন। নিয়মিত তার ডায়ালাইসিস করতে হচ্ছে।