Image description

বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া ২০০৯ সালে সেনানিবাসের বাড়িছাড়া হওয়ার সময় সেনাপ্রধান ছিলেন জেনারেল মোহাম্মদ আব্দুল মুবীন। অভিযোগ রয়েছে, খালেদা জিয়াকে শহীদ মইনুল সড়কের বাড়ি থেকে উচ্ছেদে আব্দুল মুবীনই ছিলেন অন্যতম কারিগর।

২০১১ সালে বয়সের কারণ দেখিয়ে গ্রামীণ ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালকের পদ থেকে ড. মুহাম্মদ ইউনূসকে সরিয়ে দেয় শেখ হাসিনা সরকার। আদালতে গিয়েও বিফল হন ইউনূস। শুধু গ্রামীণ ব্যাংকই নয়, এর সহযোগী অন্য প্রতিষ্ঠানেও কর্তৃত্ব হারাতে হয় ইউনূসকে।

অভিযোগ রয়েছে, খালেদা জিয়াকে সেনানিবাসের বাড়িছাড়া এবং ইউনূসকে গ্রামীণ ব্যাংকছাড়া করতে শেখ হাসিনা সরকারকে সব রকমের সমর্থন দেন তৎকালীন সেনাপ্রধান মুবীন। তিনি নিরপেক্ষ থাকলে এই দুটি ঘটনা সম্ভব হতো না।

১৯৮৩ সালে গ্রামীণ ব্যাংক প্রতিষ্ঠার পর থেকে ব্যবস্থাপনা পরিচালকের দায়িত্বে ছিলেন ইউনূস। প্রতিষ্ঠার পর থেকেই গ্রামীণ ব্যাংকের কার্যক্রম তখন থেকে বিশ্বব্যাপী ইউনূসকে পরিচিত করে তোলে। তার খ্যাতি হয় গরিবের ব্যাংকার নামে। দারিদ্র্য বিমোচনের মাধ্যমে বিশ্বে শান্তি প্রতিষ্ঠায় ভূমিকা রাখায় ২০০৬ সালে গ্রামীণ ব্যাংক ও ইউনূস যৌথভাবে নোবেল পুরস্কারে ভূষিত হয়।

অনেকেই মনে করেন, ২০০৭ সালে জরুরি অবস্থার সময় ইউনূসের দল গঠনের চেষ্টা আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনার সঙ্গে তার সম্পর্ক বৈরী করে তোলে। ২০০৯ সালে শেখ হাসিনা সরকার গঠনের দুই বছর পরই ইউনূসকে গ্রামীণ ব্যাংক থেকে উৎখাত করা হয়।

অন্যদিকে ২০০৯ সালে ক্ষমতায় আসার পর শেখ হাসিনার সরকার খলেদা জিয়াকে সেনানিবাসের বাড়ি থেকে উচ্ছেদে উঠেপড়ে লাগে। সেসময় সেনাপ্রধান জেনারেল মোহাম্মদ আব্দুল মুবীন আওয়ামী লীগ সরকারের এই পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করে খালেদা জিয়াকে বাড়িছাড়া করতে সকল আয়োজন করেন বলে অভিযোগ রয়েছে।

প্রায় চার দশক ধরে সেনানিবাসের শহীদ মইনুল সড়কের বাড়ি ছাড়তে হয়েছিল বেগম খালেদা জিয়াকে। ২০১০ সালের ১৩ নভেম্বর প্রয়াত স্বামী সাবেক রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের স্মৃতি-বিজড়িত ওই বাড়ি ছেড়ে আসার পর খালেদা জিয়া অভিযোগ করেছিলেন, তাকে ‘এক কাপড়ে বের করে দেওয়া হয়েছে’।

সেনানিবাসের বাড়ি ছেড়ে আসার পর বিএনপি চেয়ারপারসনকে কান্নারত দেখেছিল দেশের মানুষ। ২০১০ সালের ১৩ নভেম্বর নাটকীয় নানা পরিস্থিতির পর বিকালের দিকে খালেদা জিয়া অশ্রুনয়নে ওই বাড়ি ছেড়ে আসেন।

দেশ স্বাধীন হওয়ার পর ১৯৭২ সালে অ্যাডজুট্যান্ট জেনারেল হিসেবে জিয়াউর রহমান পরিবার নিয়ে শহীদ মইনুল সড়কের ৬ নম্বর ওই বাড়িতে ওঠেন। পরে সেনাপ্রধান, সামরিক আইন প্রশাসক এবং রাষ্ট্রপতি হয়েও ১৬৫ কাঠা জমির ওপর নির্মিত ওই বাড়িতেই ছিলেন জিয়াউর রহমান।

১৯৮১ সালের ৩০ মে রাষ্ট্রপতি জিয়া চট্টগ্রামে এক ব্যর্থ সেনা অভ্যূত্থানে নিহত হন। ওই বছরের ১২ জুন তৎকালীন অস্থায়ী রাষ্ট্রপতি আবদুস সাত্তার সেনানিবাসের ওই বাড়িটি বিধবা খালেদা জিয়ার নামে বরাদ্দ দেন। ইজারা দলিলের মাধ্যমে তাকে সরকারি ওই সম্পত্তি দেওয়া হয়। ওই বাড়িতেই বাস করছিলেন খালেদা জিয়া। প্রধানমন্ত্রী হওয়ার পরও ক্যান্টনমেন্টের ওই বাড়িতেই থাকতেন বিএনপিনেত্রী।

২০১০ সালে ক্যান্টনমেন্টের বাড়ি ছেড়ে আসার দিনই সন্ধ্যায় গুলশানের কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলনে কান্নায় ভেঙে পড়েন তৎকালীন বিরোধীদলীয় নেতা। খালেদা জিয়া অভিযোগ করেন, তাকে ‘এক কাপড়ে জোর করে সেনানিবাসের বাড়ি থেকে বের করে দেওয়া হয়েছ‘। ‘আমাকে অপমান করা হয়েছে। যেভাবে বের করা হয়েছে, তাতে আমি লজ্জিত’— বলেছিলেন খালেদা জিয়া।

সেদিন সংবাদ সম্মেলনে ৯ মিনিট বক্তব্য দেন বিএনপি চেয়ারপারসন। আর পুরোটা সময় তিনি রুমালে চোখ বুজে কাঁদছিলেন। সেসময় দলনেত্রীর পাশাপাশি বিএনপির জ্যেষ্ঠ নেতাদেরও কাঁদতে দেখা যায়।

খালেদা জিয়া বলেছিলেন, তার বেড রুমের দরজা ভেঙে টেনে-হিঁচড়ে তার কক্ষ থেকে বের করে দেওয়া হয়। সর্বোচ্চ আদালতে বিচারাধীন মামলা নিষ্পত্তির আগেই তাকে ‘জোর করে বাড়ি থেকে বের করে দিয়ে’ উচ্চ আদালতের সম্মানকে সরকার পদদলিত করছে বলেও মন্তব্য করেছিলেন তিনি।

এরপর তিন মেয়াদে শেখ হাসিনার শাসনামলে আর সেনানিবাসে যাননি সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়া। ক্ষমতার পালাবদলের পর গেল ২১ নভেম্বরে সশস্ত্র বাহিনী দিবসে সেনাকুঞ্জে সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে যোগ দেন খালেদা জিয়া। অনুষ্ঠানে তার পাশে ছিলেন অন্তবর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূস।

সেই সাবেক সেনাপ্রধান আব্দুল মুবীন এখন আলোচিত ব্যবসায়ী গোষ্ঠী ইউনাইটেড গ্রুপের সঙ্গে যুক্ত। ইউনাইটেড গ্রুপের প্রধান মালিকপক্ষ হাসান মাহমুদ রাজার ছেলে মঈনউদ্দিন হাসান রশিদের সঙ্গে আব্দুল মুবীনের বেয়াই সম্পর্ক।