
পদ্মা সেতুর প্রকল্প এলাকায় নতুন করে ভাঙন দেখা দিয়েছে। এতে ঝুঁকিতে পড়েছে শরীয়তপুরের জাজিরা প্রান্তের নাওডোবা জিরো পয়েন্টের মাঝি কান্দি এলাকার পদ্মা সেতু রক্ষার মূল বাঁধ।
গতকাল শনিবার ওই এলাকায় নতুন করে ভাঙন দেখা দেয়। সকালে ২০০ মিটারের মতো অংশ নদীতে ধসে পড়ে। ভাঙনের কারণে বাঁধের পাশে বসবাসরত দেলোয়ার হোসেন মাদবর, হাদি শেখ ও রুবেল খান নামে ৩ জনের বসতবাড়ি সরিয়ে নেওয়া হয়েছে।
নিরাপত্তার খাতিরে আরও দুইটি দোকানও সেখান থেকে সরিয়ে নেওয়া হয়।
পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) জানিয়েছে, পদ্মা সেতুর আশেপাশে বালুচর গড়ে ওঠা এবং বাঁধের কাছাকাছি জায়গায় নদীর গভীরতা বৃদ্ধি পাওয়ার ফলে ভাঙন শুরু হয়েছে।
বর্ষায় পানি বেড়ে যাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে ভাঙনের তীব্রতাও আরও বাড়তে পারে বলে আশঙ্কা করেছে সংস্থাটি।

এর আগে গত বছরের নভেম্বর মাসে নাওডোবার জিরোপয়েন্ট এলাকায় রক্ষাবাঁধের প্রায় ১০০ মিটার অংশ নদীতে বিলীন হয়।
তবে অজ্ঞাত কারণে শরীয়তপুর পাউবো তাৎক্ষণিকভাবে মেরামতের কাজ শুরু করেনি।
চার মাস পর চলতি বছরের ২৫ এপ্রিল থেকে প্রায় ২ কোটি ৮৭ লাখ টাকা ব্যয়ে ৩৩ হাজার বালুভর্তি জিওব্যাগ ও সিসি ব্লক ফেলে মেরামত কাজ শুরু করে সংস্থাটি।
ওই সময় বাঁধ মেরামত প্রকল্প পরিদর্শন করতে এসে শরীয়তপুর পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী প্রশ্ন তোলেন, ভাঙনের বিষয়টি জানার পরও কেন এর মেরামতের কাজ দ্রুত শুরু হয়নি।
তবে সংশ্লিষ্টরা এ প্রশ্নের কোনো সদুত্তর দিতে পারেননি।
এছাড়া, ভাঙনের আশেপাশের অন্যান্য স্থানও ঝুঁকিতে রয়েছে।
এ অবস্থায়, পদ্মা সেতু প্রকল্প এলাকা রক্ষায় সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ে একটি প্রকল্প প্রস্তাবনা পাঠিয়েছে পাউবো। মন্ত্রণালয় থেকে প্রকল্প অনুমোদন পেলে চলমান বর্ষা মৌসুম শেষে শুষ্ক মৌসুমে মূল বাঁধ রক্ষা কার্যক্রম শুরু হবে।
পদ্মা সেতু প্রকল্প এলাকায় ভাঙনের বর্তমান পরিস্থিতি সম্পর্কে শরীয়তপুর পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী তারেক হাসান দ্য ডেইলি স্টারকে এসব তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
তারেক হাসান জানান, 'প্রায় ১২-১৩ বছর আগে সেতু বিভাগ পদ্মা সেতু প্রকল্প এলাকা রক্ষার জন্য এই বাঁধ নির্মাণ করেছিল। বর্তমানে জাজিরার নাওডোবা জিরোপয়েন্ট এলাকায় ১০০ মিটার অংশ ভেঙে পড়ায় পাউবো ও বাংলাদেশ সেতু কর্তৃপক্ষ (বিবিএ) যৌথভাবে সমীক্ষা চালায়। তাতে দেখা গেছে, প্রায় ১ কিলোমিটার অংশে বাঁধের কাছে নদীর গভীরতা বেড়েছে এবং তলদেশ থেকে মাটি সরে যাচ্ছে। বাকি ১ কিলোমিটার অংশেও নদী বাঁধের কাছাকাছি চলে এসেছে এবং মাটির ক্ষয় অব্যাহত রয়েছে। ফলে পুরো বাঁধ এখন ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় রয়েছে।'
তিনি আরও জানান, শনিবার উজান এবং ভাটি মিলিয়ে আনুমানিক ২০০ মিটার বাঁধ ভেঙে গিয়েছে। এই মুহূর্তে শ্রমিকরা ঈদের ছুটি উপভোগ করছে। রোববার সকালে গিয়ে প্রকল্প এলাকা পরিদর্শন করে ভাঙ্গন প্রতিরোধে ব্যবস্থা নেয়া হবে। বাঁধটি রক্ষার জন্য দুই-এক দিনের মধ্যেই পানি উন্নয়ন বোর্ড কাজ শুরু করবে।'

'বাঁধ মজবুতকরণের জন্য একটি ডেভেলপমেন্ট প্রজেক্ট প্রপোজাল (ডিপিপি) প্রস্তুত করে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছে', যোগ করেন তিনি।
উল্লেখ্য, বাঁধটি মজবুত করা না হলে, পদ্মা সেতুর জাজিরা প্রান্তের ৫০০ মিটারের মধ্যে থাকা সার্ভিস এরিয়া-২, সেনানিবাস, পদ্মা সেতু দক্ষিণ থানা, একটি প্রাথমিক বিদ্যালয়, নাওডোবা-পালেরচর সড়ক, মঙ্গল মাঝি ও সাত্তার মাদবর বাজারসহ চার গ্রামের কয়েক শ পরিবার ভাঙনের ঝুঁকিতে পড়তে পারে।
এদিকে নদীভাঙনের কারণে বাঁধের কাছাকাছি বসবাসকারী মানুষের মধ্যে চরম আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে।
সব মিলিয়ে কয়েক শ বসতবাড়ি এখন ভাঙনের হুমকিতে।