
স্বাস্থ্য খাতে বিনিয়োগ শুধু অর্থনৈতিক প্রতিফলনের জন্য নয়, মানুষের ভালো থাকা ও বেঁচে থাকার জন্য হতে হবে বলে মন্তব্য করেছেন স্বাস্থ্য খাত সংস্কার কমিশনের সদস্য ডা. আহমেদ এহসানুর রহমান।
শুক্রবার (৯ মে) জাতীয় প্রেস ক্লাবের আবদুস সালাম হলে সুস্বাস্থ্যের বাংলাদেশ আয়োজিত স্বাস্থ্য খাত সংস্কার কমিশন প্রতিবেদন : আমাদের পর্যবেক্ষণ ও বাস্তবায়নের পথ নির্ধারণ শীর্ষক আলোচনা সভায় তিনি এ কথা বলেন।
তিনি বলেন, স্বাস্থ্য সংস্কার কমিশনের উদ্দেশ্য ছিল স্বাস্থ্যসেবাকে জনমুখী, সর্বজনীন ও সহজলভ্য করা, যেখানে জনগণের দৃষ্টিভঙ্গিকে প্রাধান্য দিয়ে প্রশ্ন করা হয়েছে সেবা কতটা অধিকারভিত্তিক, কতটা ব্যয়সাশ্রয়ী এবং কতটা সময়োপযোগী। একটি মাত্র সুপারিশ দিয়ে এসব সমস্যার সমাধান সম্ভব নয়, বরং সমন্বিত দৃষ্টিভঙ্গিতে একাধিক সুপারিশ বাস্তবায়ন করতে হবে। স্বাস্থ্য এতটাই অবহেলিত যে, বাজেট, সংসদীয় আলোচনায় কিংবা রাজনৈতিক ম্যানিফেস্টোতে এর গুরুত্ব থাকে অনেক নিচে। অথচ প্রত্যেক মানুষের প্রত্যাশা থাকে, নেতারা যেন তাদের সুস্থভাবে বাঁচার নিশ্চয়তা দেন। তাই প্রয়োজন একটি সুস্বাস্থ্যের বাংলাদেশ গড়ার, যেখানে স্বাস্থ্য হবে সর্বোচ্চ নীতিগত অগ্রাধিকার।
বক্তারা বলেন, উন্নত দেশগুলোতে চিকিৎসকরা সাধারণত রোগীকে ওষুধের কেবল জেনেরিক নাম উল্লেখ করে প্রেসক্রিপশন দেন। পরে নির্দিষ্ট ব্র্যান্ড, মাত্রা ও প্রয়োগবিধি নির্ধারণের দায়িত্ব থাকে একজন প্রশিক্ষিত ফার্মাসিস্টের ওপর। কিন্তু আমাদের দেশে সে কাঠামো নেই। ফলে চিকিৎসক যদি শুধু জেনেরিক নাম লিখে দেন, তবে ওষুধ দেওয়ার দায়িত্ব পড়ে ওষুধ বিক্রেতার ওপর, যিনি নিজের লাভের ভিত্তিতে যে কোনো কোম্পানির ওষুধ দিতে পারেন। এতে রোগীর জন্য সঠিক ও নিরাপদ ওষুধ নিশ্চিত করা কঠিন হয়ে পড়ে, যা কখনো কখনো বিপর্যয়করও হতে পারে। তা ছাড়া, আমাদের দেশের চিকিৎসকদের সামনে বাজারে সদ্য আসা বা গুণগত মানসম্পন্ন ওষুধ সম্পর্কে অবগত হওয়ার একমাত্র উৎস হলো ওষুধ কোম্পানির প্রতিনিধি।
সংস্কার প্রতিবেদনের বিষয়ে সংগঠনের পক্ষ থেকে বলা হয়, প্রস্তাবনাকে লিভিং ডকুমেন্ট হিসেবে রাখতে হবে। যাতে সময়ে সময়ে যুগোপযোগী করা যেতে পারে। এতে যে সুপারিশগুলো করা হয়েছে সেগুলো মূলত আমাদের স্বাস্থ্য খাতে বিদ্যমান বিভিন্ন সংকট শতভাগ নিরসনে এক ধরনের উইশ লিস্ট। এগুলো বাস্তবায়নের ক্ষেত্রেই আসল প্রতিবন্ধকতা দেখা যাবে। সামগ্রিকভাবে আর্থসামাজিক, আমলাতান্ত্রিক ও রাজনৈতিক বাস্তবতায় এ সুপারিশগুলো বাস্তবায়ন করার ক্ষেত্রে কিছু প্রতিবন্ধকতা প্রতীয়মান হতে পারে। এ ক্ষেত্রে বাস্তবায়নের জন্য অগ্রাধিকারের ভিত্তিতে আমাদের ঠিক করতে হবে কোথা থেকে শুরু করতে হবে। এ জন্য সরকারকে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে আলোচনা করতে হবে, তাদের মতামত নিতে হবে। তারা যে যে বিষয়ে একমত হচ্ছে সেগুলো সহজে বাস্তবায়ন করা যেতে পারে। অন্তর্বর্তী সরকারের সময়সীমার মধ্যেই অনেক কাজ শুরু করা যেতে পারে।
সভায় বক্তব্য দেন সুস্বাস্থ্যের বাংলাদেশের আহ্বায়ক অধ্যাপক কাজী বিন নূর, সদস্য অধ্যাপক আবদুস শাকুর, সাখাওয়াত হোসেন সায়ন্ত ও অধ্যাপক শামীমা লস্কর। লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন সদস্য সচিব শামীম তালুকদার।