Image description

ফিরোজ মাহবুব কামাল

আওয়ামী লীগ হলো চোর-ডাকাত, খুনি, ধর্ষক, সন্ত্রাসী ও ফ্যাসিস্টদের দল। সভ্য ও ভদ্র রাজনীতিতে তারা বিশ্বাসী নয়। তাদের পছন্দের রাজনীতি হলো ভোটডাকাতি করে ক্ষমতায় যাওয়া এবং দলীয় ও রাষ্ট্রীয় সন্ত্রাসের মধ্য দিয়ে ক্ষমতায় টিকে থাকা। নিজেদের স্বার্থান্বেষী সে রাজনীতিত দেশের সামরিক বাহিনী, পুলিশ বাহিনী, আদালতের বিচারক এবং প্রশাসনের কর্মচারীদের তারা চাকর-বাকরে পরিণত করে। এবং পরিকল্পিত ভাবে এবং রাষ্ট্রীয় শক্তি ব্যবহার করে বিরোধী দলীয় নেতাকর্মীদের রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড, মিডিয়া এবং নির্বাচনের বাইরে রাখে। সেটি দেখা গেছে ২০১৪, ২০১৮ ও ২০২৪ সালের নির্বাচনে। বস্তুত আওয়ামী লীগ তার নিজ চরিত্রের পরিচয়টি জনগণের সামনে বিগত ১৬ বছরের শাসন আমলে ভাল ভাবেই পেশ করেছে। এর পূর্বে সে পরিচয়টি পেশ করেছিল শেখ মুজিব তার নিজের শাসনামলে। তাই আওয়ামী লীগের চরিত্র নিয়ে জনগণের জানার কিছু বাকি নাই।

জনগণের রাজনৈতিক অধিকার এবং মৌলিক মানবাধিকার কেড়ে নেয়াই হলো আওয়ামী লীগের রাজনীতি। মুজিব গণতন্ত্রকে কবরে পাঠিয়ে এক দলীয় বাকশালী রাজনীতির প্রতিষ্ঠা দিয়েছিল। হাসিনার প্রতিষ্ঠা দিয়েছিল নৃশংস স্বৈরতন্ত্রের। উভয়েই বেছে নিয়েছিল বিনা বিচারে বিরোধী দলীয় নেতাকর্মীদের হত্যার পথ। বিশ্বের কোন গণতান্ত্রিক দেশে কি এমন অপরাধীদের রাজনীতিতে বৈধতা দেয়? তাদের স্থান হয় কারাগারে। নিরস্ত্র রাজনীতির শান্ত ময়দানে সশস্ত্র খুনিকে ঢুকতে না দেয়াই হলো সভ্য নীতি। এখন সে সভ্য নীতির প্রতিষ্ঠা দেয়ার সময় এসেছে বাংলাদেশেও। সে কাজে সফল না হলে সভ্য, ভদ্র ও মেধাবী দেশপ্রেমিকদের রাজনীতে অংশ নেয়াটি পূর্বের ন্যায়ই অসম্ভব থেকে যাবে।

সশস্ত্র খুনিদের সাথে কি কখনো নিরস্ত্র ও শান্তিপ্রিয় সাধারণ মানুষদের প্রতিযোগিতা করতে দেয়া যায়? রাজনীতি দূরে থাক, তাদেরকে তো এক সাথে রাখাই বিপদজনক। আওয়ামী লীগ তার রাজনীতির লড়াইটি সব সময়ই অস্ত্র হাতে লড়ে, সে  কাজের জন্য তাদের রয়েছে হাজার হাজার সশস্ত্র ‌ক্যাডার। আওয়ামী লীগের সে চরিত্র দেখা গেছে ১৯৭০ সালের নির্বাচন থেকে প্রতিটি নির্বাচনে। সভ্য ও সুষ্ঠ নির্বাচন ও রাজনীতি অসম্ভব করাই হলো আওয়ামী লীগের নীতি। রাজনীতির ময়দানে এরকর নৃশংস অপরাধীদের স্বাধীনতা দেওয়ার অর্থ হলো গণতন্ত্রকে বিপন্ন করা এবং সভ্য ও ভদ্র মানুষদের রাজনীতির বাইরে পাঠিয়ে দেওয়া।

আওয়ামী লীগ অতীতে যেভাবে সন্ত্রাসের মধ্য দিয়ে রাজনীতির ময়দান দখলে নিয়েছে এবং ভোট ডাকাতি করে রাষ্ট্রীয় ক্ষমতাকে হাইজ্যাক করেছে, ‌সেটি আর কখনোই হতে দেয়া যায় না। এমনকি খেলার মাঠেও কঠোর নিয়ম কানুন থাকে। যে খেলোয়াড় ইচ্ছা করে প্রতিপক্ষ খেলোয়াড়ের পা ভেঙে দেয় বা তাকে অন্ধ করে দেয় তাকে লাল কার্ড দেখানো হয়। এমন অপরাধী চরিত্রের ব্যক্তিকে কখনোই আর খেলতে দেয়া হয় না। তাকে মাঠের বাইরে পাঠিয়ে দেয়া হয়। রাজনীতিতেও তেমনি লাল কার্ড দেখানোর রীতি থাকতে হয়।  যে দল বিরোধী দলের নেতাকর্মীদের গুম-খুন করে, আয়না ঘরে নেয়, ফাঁসিতে ঝুলায় এবং দেশে অত্যাচারের রাজত্ব কায়েম করে -তাদেরকে অবশ্যই নিষিদ্ধ করতে হয়। তাই বিশ্বের কোন দেশেই অপরাধীদের রাজনীতির অধিকার থাকে না। বাংলাদেশী বা থাকবে কেন? তাই অবশ্যই নিষিদ্ধ করতে হবে আওয়ামী লীগের রাজনীতি।

প্রফেসর ইউনুসের সরকার যদি আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধ করার ন্যায্য কাজটি না করে তবে দেশে গৃহযুদ্ধ শুরু হয়ে যাবে। তখন জনগণ নিজেরাই আওয়ামী লীগের নির্মূলে ময়দানে নামবে। কারণ বিপ্লবের অর্থ শুধু হাসিনাকে সরানো নয়, জনগণের শত্রু এই আওয়ামী লীগের নির্মূলও। আওয়ামী লীগ হলো রাজনীতির অঙ্গণে নৃশংস খুনি জন্ম দেয়ার কারখানা। এ আওয়ামী লীগের গর্ভেই জন্ম নিয়েছে খুন মুজিব ও খুনি হাসিনার নৃশংস রাজনীতি। তাই আওয়ামী লীগ বাঁচলে অন্যরাও সে রাজনীতি নিয়ে অচিরেই হাজির হবে। বিষাক্ত সাপকে আধা বাঁচিয়ে রাখলে ছোবল দেয়ার সামর্থ্য তার থেকেই যায়।  

এটি এখন সুস্পষ্ট যে, বিএনপির মত কিছু সংগঠন আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধ করার বিরোধী। তার কারণটিও সুস্পষ্ট। এক নেকড়ে বাঘ কখনোই আরেক নেকেড়ের ক্ষতি করে না। তারা বরং একই জঙ্গলে পাশাপাশি বাস করে ও ইচ্ছামত শিকার ধরে খায়। কেউ কারো শিকার ধরায় বাধা দেয় না। তাদের সম্মিলিত লড়াই তো বরং তাদের বিরুদ্ধে যারা হিংস্র নেকড়দের হত্যা করতে চায়। এজন্য বিএনপি যতটা আওয়ামী লীগ বিরোধী তার চেয়ে বেশী বিরোধী দেশের ইসলামী দলগুলির বিরুদ্ধে। আওয়ামী লীগ যেমন দেশে ইসলামী শক্তির উত্থান চায় না, তেমনি বিএনপিও চায় না

তাছাড়া আওয়ামী লীগ এবং বিএনপি’র চরিত্রও এক ও অভিন্ন। তারা একই রকম সেকুলারিস্ট, ইসলামী চেতনাশূণ্য এবং জাতীয়তাবাদী -অর্থাৎ হারাম মতবাদের অনুসারী। এবং তাদের উভয়ের যুদ্ধই ইসলামের বিরুদ্ধে। বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল সম্প্রতি কম্যুনিস্ট পার্টির নেতাদের সাথে এক বৈঠকে ইসলামের উত্থানকে প্রতিক্রিয়াশীল শক্তির উত্থান বলে অভিহিত করেছে। দেশের কম্যুনিস্টদের সাথে নিয়ে সে উত্থান প্রতিরোধের অঙ্গীকারও করেছে। আওয়ামী লীগ এবং বিএনপি -এ উভয় দলের নেতাকর্মীরা একই রূপ সন্ত্রাসী, চাঁদাবাজ ও দুর্নীতিবাজ। তারা উভয় ভারতকে বন্ধু রাষ্ট্র মনে করে। তারা মনে প্রাণে চায় দেশের রাজনীতির দখলদারি অতীতের ন্যায় আওয়ামী লীগ ও বিএনপি’র মধ্যে ভাগাভাগি করে চলুক। এবং তারা চায়, রাজনীতির অঙ্গনে কোন সভ্য ও ভদ্র মানুষের যেন আগমন না ঘটে। 

কিন্তু বাংলাদেশের ইসলামপ্রেমী সভ্য ও ভদ্র মানুষের এ দুটি দলের অসভ্য রাজনীতিকে চলতে দিতে পারেনা। রাজনীতির ময়দান থেকে দুর্নীতিবাজ ফ্যাসিবাদী শক্তির অপসারণের এখনই উপযুক্ত সময়। বিএনপির মত স্বার্থান্বেষী এক দুর্নীতিবাজ ও স্বৈরাচারী দল ক্ষমতায় আসলে আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধ করার কাজটি অসম্ভব হয়ে পড়বে। তাই আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধ না করা পর্যন্ত রাজপথের লড়াই অব্যাহত রাখতেই হবে। লড়াইটি এখন শুধু আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে নয়, দলটির দোসরদের বিরুদ্ধেও। এটি বাংলাদেশের ঈমানদার মানুষের পবিত্র জিহাদ। পরিশুদ্ধ বাংলাদেশ নির্মাণের  এছাড়া ভিন্ন পথ নেই। বিপ্লবের এ নৌকাকে ঘাটের কাছে এনে কখনোই ডুবানো যাবে না। ইনকিলাব জিন্দাবাদ। ০৯/০৫/২০২৫