Image description
অন্তর্বর্তী সরকারের ৯ মাস । নির্বাচনের প্রস্তুতি নিচ্ছি, নিরপেক্ষ থাকবে পুলিশ :আইজিপি । স্বাধীনভাবে কাজ করার সুযোগ দিতে হবে :সাবেক আইজিপি ।

ঠিক ৯ মাস আগে বিধ্বস্ত পুলিশ বাহিনী মাঠ ছেড়ে চলে গিয়েছিল। সেখান থেকে ঘুড়ে দাঁড়াচ্ছে পুলিশ। পুড়ে যাওয়া থানা সংস্কার হয়েছে। আনা হয়েছে কিছু গাড়িও। ইতিমধ্যে সক্রিয় হয়ে মাঠে কাজ শুরু করেছে পুলিশ। আগামী ডিসেম্বর থেকে জুনের মধ্যে নির্বাচনের জন্য পুলিশকে প্রস্তুতি নেওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস। আসলে পুলিশ কতটুকু প্রস্তুত? কতটুকুই বা ঘুরে দাঁড়াতে পেরেছে পুলিশ?

পুলিশ মহাপরিদর্শক (আইজিপি) বাহারুল আলম ইত্তেফাককে বলেছেন, ঘুরে দাঁড়িয়ে নির্বাচনের প্রস্তুতি নিচ্ছে পুলিশ। এখনই পুরোপুরি স্বাভাবিক অবস্থা ফিরেছে এমনটি না বলা গেলেও অনেক উন্নতি হয়েছে। আশা করা যাচ্ছে, ডিসেম্বরে যদি নির্বাচন হয় তাহলেও নির্বাচনের আগে পুলিশের প্রস্তুতি সম্পন্ন হবে। এবার পুলিশ শতভাগ নিরপেক্ষভাবে নির্বাচনের দায়িত্ব পালন করবে, এমন নিশ্চয়তা দিয়ে আইজিপি বলেন, শিগগিরই আমরা এই কাজ শুরু করব।

পুলিশের সাবেক মহাপরিদর্শক নুরুল হুদা ইত্তেফাককে বলেন, পুলিশ যে জায়গায় পৌঁছেছিল সেখান থেকে অনেক উন্নতি হয়েছে। তবে পুরোপুরি স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরতে আরো সময় লাগবে। রাজনৈতিক দলগুলো যদি পুলিশকে ব্যবহারের চেষ্টা না করে তাহলে দ্রুতই পরিস্থিতির উন্নতি হবে। আগামী নির্বাচনের আগেই পুলিশ যথাযথ দায়িত্ব পালনের একটা জায়গায় পৌঁছবে। সর্বোপরি পুলিশকে স্বাধীনভাবে কাজ করার সুযোগ দিতে হবে।

পুলিশ মহাপরিদর্শক বাহারুল আলম বলেন, এই বাহিনীর সদস্যদের রাজনৈতিকভাবে ব্যবহারের কারণে তাদের মনোবল তলানিতে নেওয়া হয়েছিল। সেখান থেকে ধীরে ধীরে এখন একটা জায়গায় পৌঁছেছে। আমি বলব না যে, পুলিশ পুরোপুরি স্বাভাবিক হয়ে গেছে। কিন্তু অনেকটাই গোছালো জায়গায় এসেছে। এখন আমরা নির্বাচনের প্রস্তুতি নেওয়া শুরু করব। নির্বাচনে তো পুলিশ নির্বাচন কমিশনের তত্ত্বাবধানে কাজ করে। ফলে সেই দায়িত্ব পালনে মানসিকভাবে প্রস্তুতি নেওয়ার সদস্য সব ইউনিটকে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। পুলিশ একটা শৃঙ্খলা বাহিনী। এই বাহিনীর সদস্যরা চেইন অব কমান্ড মেনে দায়িত্ব পালন করে থাকেন।

অভ্যুত্থানের ৯ মাস পরও দেখা যাচ্ছে অনেক পুলিশ কর্মকর্তা ও সদস্য গ্রেফতার হচ্ছেন? এভাবে যদি গ্রেফতার হতে থাকেন তাহলে পুলিশের মনোবল কীভাবে ফিরবে? জবাবে আইজিপি বলেন, শৃঙ্খলা বাহিনী হলেও যারা আইন অমান্য করে গুলি করেছে, মানুষ হত্যা করেছে তাদের প্রোটেকশন দেওয়ার কোনো সুযোগ নেই। আমি মনে করি, যারা অন্যায় করেননি তাদের হতাশ হওয়ার কোনো কারণ নেই। আদালত নিশ্চয় ন্যায়বিচার করবেন। যারা অন্যায় করেননি তাদের কোনো শাস্তি হবে না। তবে ঐ সময়ের মামলাগুলোর তদন্ত চলছে। ফলে তদন্তে যদি কারো বিরুদ্ধে অভিযোগের প্রমাণ পাওয়া যায় তাহলে তাকে তো প্রোটেকশন দেওয়া যাবে না। তবে মানুষের সঙ্গে মিশে এখন একযোগ কাজ করছে পুলিশ। শিগগিরই আরো ভালো অবস্থায় যাবে।

সদ্য শেষ হওয়া পুলিশ সপ্তাহের প্রথম দিন নির্বাচনের পরিবেশ তৈরি করতে মাঠ পর্যায়ের পুলিশকে রাজনৈতিক প্রভাবমুক্ত ও নিরপেক্ষ থাকার প্রতিও গুরুত্বারোপ করা হয়েছে। উদ্বোধনকালে প্রধান উপদেষ্টা সুষ্ঠু নির্বাচনের প্রস্তুতির ওপর জোর দিয়ে বলেন, নির্বাচন সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ করতে পুলিশ সদস্যদের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে হবে। মনে রাখবেন, কোনো ব্যক্তি যদি অন্যায় বা অনিয়মের মাধ্যমে নির্বাচিত হয়, সেই ব্যক্তির দ্বারা ন্যায় প্রতিষ্ঠা সম্ভব নয়। সুতরাং কারো দ্বারা ব্যবহূত হবেন না। সঠিকভাবে দায়িত্ব পালন করুন।

পুলিশ সপ্তাহে পুলিশ সুপার (এসপি) থেকে তদূর্ধ্ব পর্যায়ের কর্মকর্তাদের নিয়ে একটি কর্মশালা হয়। কর্মশালায় বিভিন্ন জেলার এসপিরা কাজের অভিজ্ঞতা ও নানা চ্যালেঞ্জের কথা বলেন। থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তাদের (ওসি) দিয়ে কাজ করাতে হিমশিম খাচ্ছেন বলেও উল্লেখ করেন এসপিদের কেউ কেউ। পছন্দের ব্যক্তিকে থানার ওসি করার জন্য রাজনৈতিক চাপের কথাও বলেছেন একাধিক কর্মকর্তা। চাপমুক্ত হয়ে কাজ করার ক্ষেত্রে বিভিন্ন অন্তরায়ের কথা বলতে গিয়ে একাধিক কর্মকর্তা জানান, পেশাদারত্বের বাইরে গিয়ে মাঠপর্যায়ের পুলিশের অনেকের মধ্যে রাজনৈতিক নেতাদের সঙ্গে বাড়তি সখ্য তৈরির প্রবণতা রয়েছে।

পুলিশ সপ্তাহের প্রথম দিনের আলোচনায় স্বতন্ত্র পুলিশ কমিশন গঠনের দাবি উঠে এসেছে। প্রধান উপদেষ্টার সামনে মাঠপর্যায়ের পুলিশ সদস্যদের মধ্যে দু’জন কথা বলার সুযোগ পেয়েছেন। এদের একজন পুলিশ সদর দপ্তরের সহকারী পুলিশ সুপার (এএসপি) মো. আল আসাদ। আরেক জন ঢাকা জেলা পুলিশের কনস্টেবল সামিয়া ইসলাম স্বর্ণা। এএসপি মো. আল আসাদ বলেন, সাবেক স্বৈরাচারী সরকার পুলিশকে দলীয় কর্মীর মতো ব্যবহার করেছে। যার ফলে জনগণের সঙ্গে পুলিশের দূরত্ব তৈরি হয়েছে। পুলিশ বাহিনীকে দলীয় কর্মীর মতো ব্যবহারের সুযোগ বন্ধ করার সময় এখনই। জুলাই বিপ্লবের অংশীদারদের কেউই, এমনকি সাধারণ জনগণও আর দলীয় পুলিশ চান না, তারা নিরপেক্ষ ও নতুন বাংলাদেশের পুলিশ চান।