
চিকিৎসকদের উপঢৌকন দিয়ে ওষুধ লেখার প্রবণতা বন্ধ করতে হবে। ওষুধ কোম্পানিগুলো যাতে চিকিৎসকদের প্রভাবিত করতে না পারে সেজন্য হাসপাতালগুলোয় ওষুধ কোম্পানির প্রতিনিধিদের দৌরাত্ম্য কমানোর তাগিদ দেওয়া হয়েছে। প্রস্তাবিত ওষুধের নমুনা বা উপহার দিয়ে কোনো ধরনের প্রভাব বিস্তারের চেষ্টা নিষিদ্ধ করতে হবে। ওষুধ কোম্পানিগুলো শুধু চিকিত্সকদের ই-মেইল বা ডাকযোগে তাদের পণ্য সম্পর্কিত তথ্য পাঠাতে পারবে। প্রতিনিধিরা দৈনন্দিন সরাসরি সাক্ষাতের মাধ্যমে তাদের ওষুধের প্রচার করতে পারবেন না। ইত্তেফাককে দেওয়া এক সাক্ষাত্কারে এসব বলেছেন স্বাস্থ্য সংস্কার কমিশনের প্রধান অধ্যাপক ডা. এ কে আজাদ খান।
অধ্যাপক খান বলেন, আমরা সুপারিশে স্বাস্থ্য খাতের সংস্কারের জন্য আলাদা সতন্ত্র বিভাগ কথা বলেছি। প্রশাসন ক্যাডার থেকে এটাকে আলাদা করতে হবে। তিনি বলেন, মেডিক্যাল কনফারেন্স আয়োজনের আগে বাংলাদেশে মেডিক্যাল অ্যাক্রেডিটেশন কাউন্সিল অনুমোদিত সিপিডি ক্রেডিট পয়েন্ট নেওয়ার জন্য আবেদন করতে হবে। মেডিক্যাল কনফারেন্সের আয়-ব্যয়ের হিসাব কর অফিসে জমা দিতে হবে এবং এর অনুলিপি বিএমইসিতে জমা দিতে হবে।
এ কে আজাদ খান বলেন, আমরা সুপারিশে বলেছি, যারা একদম হতদরিদ্র তাদের ২০ শতাংশকে বিনা মূল্যে সব ধরনের চিকিত্সাসেবা প্রদানের সুবিধা। যার মধ্যে ১০ শতাংশ সরকারি হাসপাতালে ও বাকি ১০ শতাংশ বেসরকারি হাসপাতালে। সংবিধান সংশোধন করে প্রাথমিক স্বাস্থ্যসেবাকে একটি মৌলিক অধিকার হিসেবে অন্তর্ভুক্ত করার কথা বলা বলেছি। এই সাংবিধানিক প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়নের জন্য একটি পৃথক ‘প্রাথমিক স্বাস্থ্যসেবা আইন’ প্রণয়ন করতে হবে। যা বিনা মূল্যে প্রাথমিক স্বাস্থ্যসেবা প্রাপ্তির ব্যাপারে নাগরিকদের অধিকার ও রাষ্ট্রের কর্তব্য নির্ধারণ করবে।
এছাড়াও এমবিবিএস ডাক্তার ছাড়া যেন অ্যান্টিবায়োটিক না দেওয়া হয়। ওষুধের দাম, টেস্ট ও ডাক্তারের পরামর্শ ফি নির্ধারিত করে দেওয়ার ব্যাপারে জোর দেওয়া হয়েছে কমিশনের প্রতিবেদনে। চিকিত্সকদের নমুনা বা উপহার দিয়ে ফার্মেসি কোম্পানিগুলোর প্রভাব বিস্তারের চেষ্টা সম্পূর্ণভাবে নিষিদ্ধ রাখার সুপারিশ করেছে স্বাস্থ্য খাত সংস্কার কমিশন। তিনি বলেন, স্বাধীন ও স্থায়ী ‘বাংলাদেশ স্বাস্থ্য কমিশন’ গঠনসহ সাতটি আইন প্রণয়নের সুপারিশ করা হয়েছে। প্রস্তাবিত নতুন আইনগুলো হলো, বাংলাদেশ স্বাস্থ্য কমিশন আইন, বাংলাদেশ হেলথ সার্ভিস আইন, প্রাথমিক স্বাস্থ্যসেবা আইন, স্বাস্থ্য সুরক্ষা আইন, ওষুধের মূল্য নির্ধারণ এবং প্রবেশাধিকার আইন, অ্যালায়েড হেলথ প্রফেশনাল কমিশনার আইন, বাংলাদেশ মেডিক্যাল রিসার্চ কমিশনার আইন।
অধ্যাপক এ কে আজাদ খান বলেন, উপজেলা পর্যায়ে সেকেন্ডারি স্বাস্থ্যসেবা জোরদার করে জনগণের জন্য স্বাস্থ্যসেবাকে আরো সহজলভ্য করার সুপারিশও করা হয়েছে। জেলা হাসপাতালগুলোতে বিশেষায়িত (টারশিয়ারি স্তরের) চিকিত্সাসেবা চালু করতে হবে, যাতে সেবার বিকেন্দ্রীকরণ নিশ্চিত হয়, মেডিক্যাল কলেজ ও জাতীয় ইনস্টিটিউটগুলোর ওপর রোগীর চাপ কমানো যায়, ভৌগোলিক কারণে কেউ বিশেষায়িত চিকিত্সা থেকে বঞ্চিত না হন। প্রতিটি বিভাগীয় সদরে অন্তত একটি পূর্ণাঙ্গ, সর্বাধুনিক সুবিধাসম্পন্ন ও বিশ্বমানের টারশিয়ারি সেবা হাসপাতালের প্রতিষ্ঠা নিশ্চিত করতে হবে, যা জটিল ও বিশেষায়িত চিকিত্সার জন্য একটি আঞ্চলিক রেফারেল কেন্দ্র হিসেবে কাজ করবে।
প্রসঙ্গত, গত বছরের ১৭ নভেম্বর বাংলাদেশ ডায়াবেটিক সমিতির সভাপতি অধ্যাপক এ কে আজাদ খানকে প্রধান করে ১২ সদস্যবিশিষ্ট স্বাস্থ্য খাত সংস্কার কমিশন গঠন করে অন্তর্বর্তী সরকার। কমিশনের সদস্য করা হয় অধ্যাপক ডা. মোহাম্মদ জাকির হোসেন, অধ্যাপক ডা. লিয়াকত আলী, অধ্যাপক ডা. সায়েবা আক্তার, অধ্যাপক ডা. নায়লা জামান খান, সাবেক সচিব এস এম রেজা, অধ্যাপক ডা. মোজাহেরুল হক, ডা. আজহারুল ইসলাম খান, অধ্যাপক ডা. সৈয়দ মো. আকরাম হোসেন, অধ্যাপক ডা. সৈয়দ আতিকুল হক, ডা. আহমেদ এহসানুর রাহমান ও ঢাকা মেডিক্যাল কলেজের পঞ্চম বর্ষের শিক্ষার্থী উমায়ের আফিফকে।