
গণ-অভ্যুত্থান পরবর্তী মামলায় আসামিদের জামিনকে কেন্দ্র করে ‘ভার্চ্যুয়াল অ্যাটাকের’ শিকার হচ্ছেন সিলেটের বিএনপিপন্থি আইনজীবীরা। নানাভাবে তাদের হেনস্থা করা হচ্ছে। এ নিয়ে বিব্রত তারাও। তবে এই অ্যাটাককে রাজনৈতিক প্রতিপক্ষের ছোড়া অস্ত্র বলে মনে করছেন কেউ কেউ। এতে দলীয়ভাবে বিভেদ আরও বাড়ানোর চেষ্টা করা হচ্ছে বলে জানিয়েছেন তারা। এজন্য বিষয়টিকে তারা শক্তভাবে মোকাবিলা করছেন। তারা জানিয়েছেন, জামিন দেয়ার এখতিয়ার সম্পূর্ণ আদালতের। বিএনপি’র আইনজীবীরা আদালতের স্বাধীন মতামতকে সম্মান জানাচ্ছেন। তবে এখন পর্যন্ত বিএনপিপন্থি কোনো আইনজীবী ডেভিলদের পক্ষাবলম্বন করে আদালতে ওকালতনামা দেননি ও জামিন শুনানিতে অংশ নেননি। গত ২৮শে এপ্রিল রক্তাক্ত গণ-অভ্যুত্থান মামলার আসামি ও শ্রমিক লীগ নেতা জাকারিয়া আহমদকে নগরের মদিনা মার্কেট থেকে মামলার আসামি হিসেবে গ্রেপ্তার করে গোয়েন্দা পুলিশ। পরদিন আদালত তার জামিন প্রদান করেছেন।
এই জামিনে কয়েকজন বিএনপিপন্থি আইনজীবী অংশ নিয়েছিলেন বলে বিষয়টি চাউর হয়। এমনকি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে বিএনপিপন্থি আইনজীবীদের কটাক্ষ করে নানা মন্তব্য করা হয়। এর মধ্যে বেশি অ্যাটাকে শিকার হয়েছেন সিলেট জেলা ছাত্রদলের সাবেক সভাপতি ও আইনজীবী সাঈদ আহমদ। তার নাম প্রকাশ হওয়ায় তিনি প্রতিবাদ করেন। শ্রমিক নেতা জাকারিয়ার জামিন শুনানিতে পক্ষে কিংবা বিপক্ষে কোনোটিতে অংশ নেননি বলে মানবজমিনকে জানান তিনি। বলেন, ওইদিন আদালত এলাকায় জাকারিয়ার অনুসারী বিপুলসংখ্যক শ্রমিক উপস্থিত ছিল। পরিস্থিতি নিয়ে পুলিশ উদ্বিগ্ন ছিল। পুলিশের আহ্বানে তিনি সহ কয়েকজন আইনজীবী আদালত প্রাঙ্গণের পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে পুলিশকে সহযোগিতা করেছেন। একজন আইনজীবী হিসেবে দায়িত্ববোধ থেকে এই কাজ করেন। আদালতের জামিন শুনানিতে তার কোনো অংশগ্রহণ ছিল না। গত সপ্তাহে সিলেট জেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক ও জেলা বারের সাবেক সাধারণ সম্পাদক এডভোকেট মাহফুজুর রহমানকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। রোববার আদালত থেকে তিনি জামিন পান। এ মামলার পক্ষে বা বিপক্ষে কোনোটিতেই অংশ নেননি বিএনপিপন্থি আইনজীবী ও জেলা বারের সাবেক সভাপতি এডভোকেট এটিএম ফয়েজ। অথচ এডভোকেট মাহফুজের জামিনের ঘটনায় তাকেও ভার্চ্যুয়ালি কাঠগড়ায় দাঁড় করানো হয়। এ নিয়ে বিব্রত সিনিয়র আইনজীবী এটিএম ফয়েজও। তিনি মানবজমিনকে জানিয়েছেন, একটি পোর্টালে এ নিয়ে রিপোর্ট প্রকাশ করলে তিনি প্রতিবাদ জানালে পরবর্তীতে তারা সংশোধন ও দুঃখ প্রকাশ করেছে। তিনি বলেন, আমাদের মধ্যে গ্রুপিং রয়েছে। ব্যক্তি বা রাজনৈতিক আক্রোশ থেকে এসব হতে পারে। যেসব মামলায় আমাদের কোনো সম্পৃক্ততা নেই সেসব মামলায় নাম জড়িয়ে হেয় করা কোনোভাবেই উচিত নয়।
এ ব্যাপারে সবাইকে সতর্ক থাকা ভালো বলে মন্তব্য করেন তিনি। সিলেটের জাতীয়তাবাদী আইজীবী ফোরামের নেতারা জানিয়েছেন, সিলেট জেলা বারে জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ফোরামের মধ্যে কিছুটা অনৈক্য ছিল। চলতি সপ্তাহে সিলেট সফর করে গেছেন ফোরামের কেন্দ্রীয় শীর্ষ নেতৃত্বরা। সিলেটে ফোরামের আইনজীবীর মধ্যে যে অনৈক্য ছিল সেটির মীমাংসা হয়ে গেছে। এখন সবাই ঐক্যবদ্ধ। এই অবস্থায় রাজনৈতিক প্রতিপক্ষরা ফায়দা লুটতে অনৈক্য সৃষ্টির পাঁয়তারা করছে। তবে তাদের এ চক্রান্ত সফল হবে না বলে জানান তারা। সিলেট জেলা বিএনপি’র সাধারণ সম্পাদক এডভোকেট এমরান আহমদ চৌধুরী জানিয়েছেন, বিএনপি আদালতে কোনো প্রভাব বিস্তার করে না। আদালত যাতে স্বাধীনভাবে চলে সেই সহযোগিতা করেন বিএনপিপন্থি আইনজীবীরা। ডেবিলদের জামিনের ব্যাপারে কোনো মামলার শুনানি কিংবা আর্জিতে জাতীয়তাবাদী আইনজীবী পরিবারের কানও কোনো সম্পৃক্ততা মিলেনি। অযথাই এ মিথ্যা তথ্য ছড়ানো হচ্ছে।
এটি কোনো পক্ষ ইচ্ছাকৃতভাবে করছে কিনা, সেটি দেখার বিষয়। তিনি বলেন, দুটি জামিনের ব্যাপারে যাদের সম্পৃক্ততার বিষয়টি আলোচিত হচ্ছে সেটি কোনোভাবেই সত্য নয়। এসব আইনজীবীরা নিজেরাই প্রতিবাদ জানিয়েছেন। যেহেতু বিষয়টি নিয়ে আলোচনা দেখা দিয়েছে এ কারণে ভবিষ্যতে সবাইকে সতর্ক থাকার পরামর্শ দেয়া হয়েছে। সিলেট জেলা বিএনপি’র যুগ্ম সম্পাদক ও জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ফোরামের নেতা এডভোকেট হাসান পাটওয়ারী রিপন জানিয়েছেন, জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ফোরামের মধ্যে এখন আর কোনো অনৈক্য নেই। সবাই ঐক্যবদ্ধভাবে রয়েছে। নৈতিকতার কারণে অনেক কিছুই করা যায় না। আমরা যারা জাতীয়তাবাদী পরিবারের সদস্য আমরা কোনো ডেবিলদের পক্ষে আইনি লড়াইয়ে নামছি না। এটা আমাদের নৈতিক অবস্থান। পাশাপাশি আদালতকে আমরা প্রভাবিত করছি না। তিনি বলেন, অনেক আইনজীবী রয়েছে যারা বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের সদস্য। তারাও আদর্শের বাইরে গিয়ে ডেবিলদের পক্ষে মামলায় লড়ছেন। অথচ দলীয়ভাবে তারা জবাবদিহিতার আওতায় আসছেন না। বিএনপি’র আইনজীবীরা দূরে থেকেও সমালোচনার মুখোমুখি হচ্ছেন। বিষয়টি আমরা পজেটিভ ভাবে নিয়েছি। এই সমালোচনার মুখে আরো বেশি সতর্ক হয়ে চলছি আমরা।