
আদালতের রায়ের প্রেক্ষিতে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের সাবেক প্রসিকিউটর তুরিন আফরোজের উত্তরার বাড়িতে তার মা ও ভাই বসবাস করলে কোনো আপত্তি নেই তেজস্বী তুরিন সুমেধার।
তবে নিরাপত্তা নিয়ে ‘শঙ্কার’ কথা জানিয়েছেন তিনি।
সুমেধার ভাষ্য, তার মা গ্রেপ্তারের পরদিন গত ৮ এপ্রিল তার মামা শিশির আহমেদ শাহনেওয়াজ বাড়িতে গিয়ে ‘দখলের চেষ্টা’ করেন এবং ‘হুমকি’ দেন। তাই তাদের বাড়িতে উঠার বিষয়ে তিনি ‘নিরাপদ বোধ’ করছেন না।
এ অবস্থায় সরকারের কাছে নিজের নিরাপত্তায় সহায়তা চেয়েছেন তুরিনের মেয়ে সুমেধা।
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সময় আব্দুল জব্বার নামের এক শিক্ষার্থীকে ‘হত্যাচেষ্টার’ মামলায় গত ৭ এপ্রিল রাতে উত্তরার বাসা থেকে তুরিনকে গ্রেপ্তার করা হয়।
বাবার কাছ থেকে উত্তরাধিকার সূত্রে পাওয়া উত্তরার ৩ নম্বর সেক্টরের ১১ নম্বর সড়কের ১৫ নম্বর বাড়ি নিয়ে দীর্ঘদিন ধরে সৎ ভাই শিশিরের সঙ্গে মামলা চলছিল তুরিন আফরোজের।
কিন্তু তুরিনের গ্রেপ্তারের পরদিনই বেলা সাড়ে ১১টার দিকে একদল লোক নিয়ে শিশির বাড়িটি নিজের দাবি করে সবাইকে বের করে দেওয়ার চেষ্টা করে বলে অভিযোগ উঠে। বাড়ির নিরাপত্তাকর্মীকে মারধর এবং নামফলক সরিয়ে ফেলার অভিযোগও করেন তুরিনের মেয়ে সুমেধা।
পরে পুলিশ ঘটনাস্থলে এসে হস্তক্ষেপ করলে শিশির দলবদল নিয়ে বাড়িটি থেকে চলে যান। এ ঘটনার পর পুলিশের তরফে গ্রেপ্তার তুরিনের ১৭ বছর বয়সী মেয়েকে ‘অভয়’ দেওয়া হয়।
সবশেষ সোমবার আদালতের দেওয়া আদেশে ওই বাড়িতে থাকার অধিকার ফিরে পেয়েছেন তুরিন আফরোজের মা শামসুন্নাহার বেগম ও ভাই শিশির আহমেদ শাহনেওয়াজ।
২০১৭ সালের ১১ মে করা মামলায় আরজিতে তুরিন দাবি করেন, উত্তরার বাড়ির মালিক তিনি এবং তার দখলে রয়েছে। তার ভাই শিশির ও মা শামসুন্নাহার মালিক না হয়েও বাড়ি দখল নিতে বেআইনি চেষ্টা চালাচ্ছেন। এক বছর পর ২০১৮ সাল বাদীপক্ষের আবেদনে বাড়িটির ওপর স্থিতাবস্থা দেয় আদালত।
ঢাকার দেওয়ানি আদালতে করা এ মামলায় সৎ মা শামসুন্নাহার ও সৎ ভাই শিশির আহমেদ শাহনেওয়াজকে বিবাদী করা হয়।
মামলা-পাল্টা মামলার রায় এবং আপিলের দীর্ঘ আইনি প্রক্রিয়া শেষে সোমবার সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগ হাই কোর্টের রায় বহাল রেখে আদেশ দেয়। এর ফলে শামসুন্নাহার বেগম ও তার ছেলে শিশির আহমেদ শাহনেওয়াজ ওই বাড়িতে থাকার অধিকার ফিরে পান।
তুরিনের মেয়ে তেজস্বী তুরিন সুমেধা মঙ্গলবার বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “কাল যেহেতু রায় দিয়েছে, তারা বাসায় থাকবে কোনো সমস্যা নেই। আমি তাদেরকে ডিসটার্ব করব না এবং তারাও আমাকে ডিসটার্ব করতে পারবেন না।
“এখন তারা যেহেতু আমাকে গত ৮ এপ্রিল বাসায় অ্যাটাক করার পর আমাকে হুমকি দিয়েছিলেন সামনাসামনি, তো এটা নিয়ে আমি সেফ ফিল করছি না, যে আমরা একই বিল্ডিংয়ে থাকব।”
এ বিষয়ে ইতোমধ্যে পুলিশের দ্বারস্থ হলে মঙ্গলবার পুলিশ কর্মকর্তারা তার বাসায় গিয়ে দেখা করেছেন জানিয়ে তিনি বলেন, “আমি আবার থানায় গিয়েছিলাম, ওসির সাথে কথা হয়েছে। ওসি সাহেব বলেছেন, প্রোটেকশান দিবেন।
“কিন্তু এই মুহূর্তে আমি আরেকটা জিডি করতে চেয়েছিলাম আমার নিরাপত্তার জন্য আলাদা করে। উনারা বললেন ‘এখনই জিডি করে কোনো লাভ হবে না, পরে যদি কোনো ঝামেলা করে তখন আপনি জিডি করবেন’।”
গত ৮ এপ্রিলের ঘটনার পর নিজের ‘নিরাপত্তা চেয়ে’ উত্তরা পশ্চিম থানায় একটি জিডি করেছিলেন সুমেধা। সেখানে তিনি তার সৎ মামা শিশিরের ‘কার্যকলাপে’ নিজের নিরাপত্তাহীনতার কথা তুলে ধরেন।
আদালতের রায়ের কপি হাতে পাওয়ার পর সেটি পড়ে তার সৎ মামা ও নানীকে বাসায় উঠতে সহায়তা করবেন জানিয়ে সুমেধা বলেন, “আমি তাদেরকে হেল্প করার ট্রাই করব। কিন্তু তাদের হুমকি যদি আবার আমাকে প্রবলেম দেয়, তাহলে আমাকে অন্য স্টেপ নিতে হবে। এমনিতে তাদের বাসায় কোনো সমস্যা হবে না। রায়ে কী আছে ওইটা আগে আমাকে পড়তে হবে, তারপর আমি তাদেরকে বাসায় অ্যালাউ করব।”
৮ এপ্রিল থেকেই শিশিরের লোকজন এলাকায় ঘোরাফেরা করছে এমন অভিযোগ করে তিনি বলেন, “৮ তারিখের পর থেকে কেউ আমার সাথে আর কথা বলেনি। কিন্তু বাসার বাইরে থেকে নজরদারী করছেন। রায় অনুযায়ী আমি তাদেরকে একটা ফ্ল্যাট দিয়ে দিব, কিন্তু আমার লাইফের একটা রিস্ক আছে।
“এই নতুন সরকারের কাছ থেকে প্রোটেকশন চাচ্ছিলাম, যদি হেল্প করত বেটার হয়। আমি সিকিউরিটিটা স্ট্রং রাখতে চাই। যেকোনো মুহূর্তে একটা দুর্ঘটনা হয়ে গেল, ওইটার জন্য যাতে ইমেডিয়েট হেল্প পাওয়া যায়।”
এ বিষয়ে শিশির আহমেদ শাহনেওয়াজের ফোন নম্বরে একাধিকবার কল করা হলে বন্ধ পাওয়ায় তার বক্তব্য জানতে পারেনি বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম।
তুরিন আফেরোজের মেয়েকে নিরাপত্তা দেওয়া হচ্ছে জানিয়ে উত্তরা পশ্চিম থানার ওসি হাফিজুর রহমান বলেন, “সে আগে একটা জিডি করেছে, আমরা সেটি আদালতে পাঠিয়েছি। আদালতের নির্দেশ অনুযায়ী সেই জিডির তদন্ত চলছে। এখন আবার তার নিরাপত্তাহীনতার কথা বলেছে, আমরা বলেছি আমাদের সঙ্গে তার যোগাযোগ রয়েছে। সে ডাকলেই পুলিশ যাচ্ছে, নিরাপত্তাতো আমরা দিচ্ছি।”
তুরিনের মেয়ে সুমেধার দাবি অনুযায়ী, দুই ভাইবোনের মধ্যে তার মা বড়। তার নানা মারা গেছেন। তুরিন আফরোজ তার মায়ের এক সন্তান এবং তার সৎ মায়েরও একমাত্র সন্তান শিশির আহমেদ শাহনেওয়াজ।