Image description

বাংলাদেশে টেকসই উন্নয়ন ও সমাজসেবায় নিজেদের প্রতিশ্রুতি আরও একবার তুলে ধরেছে স্ট্যান্ডার্ড চার্টার্ড বাংলাদেশ। কৃষি, শিক্ষা, উদ্যোক্তা তৈরি, পরিবেশ, স্বাস্থ্য এবং দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা — এই ছয়টি খাতে প্রতিষ্ঠানটি নানা উদ্যোগ নিয়েছে, যার ইতিবাচক প্রভাব দেশের নানা অঞ্চলে ছড়িয়ে পড়েছে।

 

স্ট্যান্ডার্ড চার্টার্ড বাংলাদেশের চিফ এক্সিকিউটিভ অফিসারনাসের এজাজ বিজয় বলেন, “আমাদের কমিউনিটি উদ্যোগগুলি আমাদের মূল কার্যক্রমের অতিরিক্ত কিছু নয় - এটি আমাদের পরিচয় এবং আমরা কীভাবে আমাদের কমিউনিটিতে সেবা করি তার অন্যতম মূল বিষয়। স্ট্যান্ডার্ড চার্টার্ডে, আমরা দীর্ঘমেয়াদী প্রভাবের জন্য উদ্যোক্তাদের ক্ষমতায়ন, শিক্ষার্থীদের বিকাশে সহযোগিতা, পরিবেশ রক্ষা, কৃষিকে শক্তিশালী করা, উদ্ভাবনে সহায়তা এবং প্রয়োজনের সময় কমিউনিটির পাশে দাঁড়ানো সংক্রান্ত খাতসমূহে বিনিয়োগ করছি।“

 

প্রকল্পের মূল দিকগুলো:

কৃষি: দেশের ২৩টি জেলায় ১১টি কৃষি প্রকল্প বাস্তবায়ন করেছে স্ট্যান্ডার্ড চার্টার্ড ব্যাংক। এর মধ্যে রয়েছে ফসলের উৎপাদনশীলতা বৃদ্ধি, মাছ ও মৌচাষ, কৃষিযান্ত্রিকীকরণ এবং কৃষিপণ্য প্রক্রিয়াকরণ সংক্রান্ত কাজপাশাপাশি, ৪টি বিশ্ববিদ্যালয়ে ৭টি গবেষণা প্রকল্পে অর্থায়ন করা হয়েছে, যা কৃষিতে নতুন উদ্ভাবন ও স্থিতিশীলতা বৃদ্ধিতে সহযোগিতা করবে।

 

স্বাস্থ্য: সারা দেশে চক্ষু চিকিৎসা ক্যাম্পের মাধ্যমে ১১ লাখ ৫০ হাজার মানুষকে সেবা দেওয়া হয়েছে। ভাসমান হাসপাতালের মাধ্যমে দুর্গম গ্রামের ৫০ হাজার মানুষ চিকিৎসা পেয়েছে। ১১৮ জন নার্সকে প্রশিক্ষণের পাশাপাশি ৪টি কমিউনিটি হাসপাতালে মেডিকেল অক্সিজেন প্ল্যান্ট স্থাপন করা হয়েছে।

 

শিক্ষা  উদ্যোক্তা তৈরী: ইউসেপ-র সহযোগিতায় ফিউচারমেকার্স কর্মসূচির আওতায় প্রায় সাত হাজার তরুণ-তরুণীকে দক্ষতা উন্নয়ন ও চাকরি সংক্রান্ত সহায়তা দেওয়া হয়েছে। এর পাশাপাশি, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইনস্টিটিউট অব বিজনেস অ্যাডমিনিস্ট্রেশন (আইবিএ)- তে একটি কনফারেন্স সেন্টার ও শিক্ষক লাউঞ্জ প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে। একই সঙ্গে জাগো ফাউন্ডেশনের সহযোগিতায় পাঁচ হাজার শিক্ষার্থীকে শিক্ষাসামগ্রী প্রদান করা হয়েছে। এছাড়া, ১ লাখ ১৬ হাজারের বেশি তরুণ এবং তরুণীদের স্ট্যান্ডার্ড চার্টার্ড অনলাইন লার্নিং প্ল্যাটফর্মের মাধ্যমে উদ্যোক্তা হওয়ার প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছে।  

 

পরিবেশ: খুলনা মুক্তি সেবা সংস্থা এবং বিদ্যানন্দ ফাউন্ডেশনের সঙ্গে যৌথভাবে ফুলচাষের উন্নয়ন ও প্লাস্টিক দূষণ হ্রাসে কাজ করছে এই ব্যাংক। এছাড়া ৫০ হেক্টর জমিতে ম্যানগ্রোভ বন তৈরির উদ্দেশ্যে পাঁচ বছর মেয়াদি একটি প্রকল্প শুরু হয়েছে, যা জীববৈচিত্র্য রক্ষা ও জলবায়ু সহনশীলতা বৃদ্ধিতে সহায়তা করবে।

 

দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা: উত্তর-পূর্ব ও দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলে বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত ১ লাখের বেশি মানুষকে জরুরি সহায়তা দেওয়া হয়েছে এবং বিগত বছরগুলোতে উত্তরের জেলাগুলোর ১০ হাজারের বেশি মানুষকে শীতবস্ত্র বিতরণ করা হয়েছে। চরাঞ্চলের বন্যাঝুঁকিপূর্ণ এলাকায় বন্যাকালীন সুরক্ষার জন্য আটটি প্লিন্থ তৈরি করা হয়েছে।

 

সব প্রকল্প তৃতীয় পক্ষের মাধ্যমে নিয়মিত পর্যবেক্ষণ ও মূল্যায়নের আওতায় আনা হয়েছে, যাতে কার্যক্রমের বাস্তব প্রভাব ও স্থায়িত্ব নিশ্চিত করা যায়।

 

নির্বাচিত প্রকল্পগুলোর প্রভাব

হাওর কৃষকদের আয় বৃদ্ধি — সুনামগঞ্জ ও হবিগঞ্জ প্রকল্পের সাফল্য: সুনামগঞ্জ ও হবিগঞ্জ অঞ্চলের হাওর কৃষকদের জন্য পরিচালিত প্রকল্পের মাধ্যমে কৃষকদের বার্ষিক আয় ১৫.৫৭% বৃদ্ধি পেয়েছে। তাদের বর্তমান গড় আয় ৯৮,২৩৮.৬১ টাকা, যা আগে ছিল ৮৫,০০২.৭০ টাকা। আগাম বীজ এবং সময়মতো ফসল সংগ্রহের ফলে ফসলের উৎপাদন ৩২.১১% বেড়েছে। কৃষি যান্ত্রিকীকরণের ফলে কাটাইয়ে সময় কমেছে ৭৯.৫৪%, মাড়াইয়ে ৮৩.০৩% এবং বাছাইয়ে ৭১.৯০%, এর পাশাপাশি সার্বিক খরচ কমেছে ৫৫.৪০% থেকে ৭৫.৫৩% পর্যন্ত।

 

জলবায়ু-প্রভাবিত গ্রামীণ জীবিকা উন্নয়ন প্রকল্প: চরভিত্তিক এই কৃষি সহায়তা প্রকল্পের মাধ্যমে ৯২% পরিবার উন্নত খাদ্যাভ্যাসের কথা জানিয়েছে, যা মূলত খাদ্য নিরাপত্তার নির্দেশক। নিরাপদ বাসস্থানের জন্য নির্মিত উঁচু প্লিন্থগুলো শতভাগ ব্যবহৃত হয়েছে, যার ফলে নিশ্চিন্ত ও স্থিতিশীল পরিবেশ তৈরি হয়েছে এবং ৪৯% মানসিক চাপ হ্রাস পেয়েছে। এই উদ্যোগের ফলে পরিবারগুলোর গড় মাসিক আয় ৭,৫১৯ টাকা থেকে বেড়ে ১৭,২৬২ টাকায় উন্নীত হয়েছে।

 

মধু উৎপাদন, প্রক্রিয়াজাতকরণ এবং বাজারজাতকরণে মধু চাষিদের আয় বৃদ্ধি: এই প্রকল্পের মাধ্যমে মধু উৎপাদন ২৫.৮৯% বেড়েছে। পাশাপাশি বিক্রির পরিমাণ ১৩.১০% এবং বিক্রয়মূল্য ১৭.৮৫% বৃদ্ধি পেয়েছে। প্রকল্পে অন্তর্ভুক্ত প্রায় ৭০% চাষি জানিয়েছেন, লিচু, আম, সরিষা এবং ধনিয়াতে তাদের ফলনের পরিমাণ বেড়েছে।

 

স্ট্যান্ডার্ড চার্টার্ড বাংলাদেশের কর্পোরেট অ্যাফেয়ার্স, ব্র্যান্ড অ্যান্ড মার্কেটিং বিভাগের প্রধান বিটোপি দাস চৌধুরী বলেন, “মাঠপর্যায়ে আমাদের সহযোগী সংস্থাগুলোর অবদান ছাড়া এসব উদ্যোগ বাস্তবায়ন সম্ভব হতো না। দেশের প্রান্তিক এলাকায় পৌঁছানোর ক্ষেত্রে তাদের দক্ষতা ও প্রত্যক্ষ সম্পৃক্ততাই আমাদের এই অন্তর্ভুক্তিমূলক অগ্রগতিকে এগিয়ে নিচ্ছে।”

 

এসব উদ্যোগ স্ট্যান্ডার্ড চার্টার্ডের দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনার অংশ, যার লক্ষ্য টেকসই ও দীর্ঘমেয়াদি উন্নয়নের মাধ্যমে বাংলাদেশের পাশে থাকা এবং ব্যাংকের অঙ্গীকার ‘হেয়ার ফর গুড’ বাস্তবায়ন করা। বাংলাদেশের ১২০ বছরেরও বেশি সময়ের উন্নয়নযাত্রার অংশীদার হিসেবে স্ট্যান্ডার্ড চার্টার্ড উন্নয়নশীল অগ্রগতির লক্ষ্যে অর্থবহ কমিউনিটি উদ্যোগে বিনিয়োগ করে যাচ্ছে।