Image description
 

মাগুরায় বোনের বাড়ি বেড়াতে গিয়ে ৮ বছরের শিশু আছিয়া ধর্ষণ ও হত্যাকাণ্ড মামলার ২৭ জনের সাক্ষ্যগ্রহণ সম্পন্ন হয়েছে সোমবার। মঙ্গলবার তলবকৃত দুইজন চিকিৎসকের সাক্ষ্যগ্রহণের মধ্য দিয়ে দেশব্যাপী আলোচিত মামলাটির সাক্ষ্যগ্রহণপর্ব সম্পন্ন হবে বলে মাগুরার নারী ও নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল সূত্রে জানা গেছে।

১৩ মার্চ ঢাকায় সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যায় মাগুরার শ্রীপুর উপজেলার জারিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের তৃতীয় শ্রেণির শিক্ষার্থী আছিয়া। এর আগে মাগুরা শহরের নিজনান্দুয়ালী গ্রামে বোনের শ্বশুরবাড়ি বেড়াতে গিয়ে ৬ মার্চ ধর্ষণের শিকার হয় শিশুটি। ঘটনার পর প্রথমে তাকে মাগুরা ২৫০ শয্যা হাসপাতাল এবং পরে ফরিদপুর ও ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। অবস্থার অবনতি ঘটায় নেওয়া হয় ঢাকা সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে।

 

ধর্ষণের ঘটনায় শিশুটির মা (আয়েশা আক্তার) ৮ মার্চ শিশুটির বোনের শ্বশুর হিটু শেখ, শাশুড়ি জাহেদা বেগম, বোন জামাই সজিব শেখ এবং সজিবের বড় ভাই রাতুল শেখকে আসামি করে মাগুরা সদর থানায় মামলা দায়ের করেন। এ মামলায় অভিযুক্ত ৪ জন আসামিই পুলিশ হেফাজতে রয়েছেন। তাদের উপস্থিতিতেই চলছে বিচারিক কার্যক্রম।

মামলাটির তদন্ত কর্মকর্তা মাগুরা সদর থানার পরিদর্শক (তদন্ত) মো. আলাউদ্দিন গত ১৩ এপ্রিল আদালতে চার্জশিট জমা দিলে ২০ এপ্রিল মাগুরার নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালের বিচারক এম জাহিদ হাসান মামলাটি আমলে নিয়ে চার্জ গঠনের জন্য ২৩ এপ্রিল তারিখ নির্ধারণ করেন। চার্জ গঠনের পর ২৭ এপ্রিল থেকে শুরু হয় মামলাটির সাক্ষ্যগ্রহণ।

প্রথম দিন মামলার বাদী আয়েশা আক্তার এবং অপর দুইজনের সাক্ষ্যগ্রহণ হয়। সোমবার মাগুরা সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মো. আইয়ুব আলি, মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা মো. আলাউদ্দিন, নিহতের মরদেহ সুরতহাল প্রস্তুতকারী পুলিশ কর্মকর্তা এসআই আনজুমানারা এবং জবানবন্দি (মামলার বাদী, আসামি, সাক্ষীদের) গ্রহণকারী জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট সব্যসাচী রায় আদালতে সাক্ষ্য দেন।

সর্বশেষ মঙ্গলবার সাক্ষ্যগ্রহণের জন্য তলব করা হয়েছে ঢাকা মেডিকেলের ফরেনসিক বিভাগের একজন ডাক্তারসহ দুইজনকে। এই দুইজনের সাক্ষ্যগ্রহণের মধ্য দিয়েই মামলাটির সাক্ষ্যগ্রহণ শেষ হবে বলে জানিয়েছেন মামলাটির সরকারপক্ষের আইনজীবী মনিরুল ইসলাম মুকুল।

মাগুরার নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালের স্পেশাল পিপি মনিরুল ইসলাম মুকুল বলেন, ২০ এপ্রিল মামলাটির বিচার কার্যক্রম শুরু হয়। মামলাটির বাদীসহ মোট ৩৭ জন সাক্ষী। সোমবার পর্যন্ত ২৭ জনের সাক্ষ্যগ্রহণ সম্পন্ন হয়েছে। অগুরুত্বপূর্ণ হওয়ায় ৮ জনকে বাদ দেওয়া হয়েছে। মঙ্গলবার বাকি দুইজন চিকিৎসকের সাক্ষ্যগ্রহণ সম্পন্ন হলে এ মাসের মাঝামাঝি সময়ের মধ্যেই মামলার রায় দেওয়া সম্ভব হবে।

মামলার বিচারকার্য চলাকালে অভিযুক্ত মূল আসামি হিটু শেখ আদালতে যাওয়া-আসার পথে উপস্থিত সাংবাদিকদের দেখে প্রায় প্রতিদিনই নিজেদের নির্দোষ দাবি করে শিশুটির বোন হামিদাকে আটক করে জিজ্ঞাসাবাদের আহ্বান জানান। অথচ এ ঘটনায় একাই জড়িত বলে ১৫ মার্চ তিনি আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেন।

এর আগে ৬ মার্চ শিশুটির ধর্ষণের ঘটনার খবর প্রচার হলে মাগুরাসহ সারা দেশে বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা বিক্ষোভে ফেটে পড়েন। সড়ক অবরোধ, থানা ও আদালত ঘেরাও করে সংক্ষিপ্ত সময়ের মধ্যে অপরাধীর শাস্তি দাবি করেন সর্বস্তরের মানুষ। স্থানীয় আইনজীবীরাও এ ঘটনায় অভিযুক্তদের বিচার দাবির পাশাপাশি আসামিপক্ষকে কোনো প্রকার আইনি সহায়তা না দেওয়ার ঘোষণা দেন।

সরকারের পক্ষ থেকেও মামলাটিকে অধিক গুরুত্ব দিয়ে মাগুরা নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালে দায়িত্বরত সরকারপক্ষের আইনজীবীকে সহায়তা দিতে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় নিযুক্ত স্পেশাল প্রসিকিউটর অ্যাডভাইজার অ্যাডভোকেট এহসানুল হক সমাজীকে দায়িত্ব দেওয়া হয়। একই সঙ্গে মামলার কার্যক্রম এগিয়ে নিয়ে লিগ্যাল এইডের মাধ্যমে আসামিপক্ষে সোহেল আহমেদ নামে একজন আইনজীবীকে নিয়োগ করা হয়।মাগুরা শহরের নিজনান্দুয়ালী গ্রামে বোনের শ্বশুরবাড়ি বেড়াতে গিয়ে ৬ মার্চ ধর্ষণের শিকার হয় শিশু আছিয়া। ১৩ মার্চ ঢাকায় সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যায় ধর্ষণের শিকার ৮ বছরের শিশুটি।

মামলার মূল আসামি শিশুর বোনের শ্বশুর হিটু শেখ গত ১৫ মার্চ আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেন। যেখানে ধর্ষণ ও হত্যাচেষ্টার ঘটনায় তিনি একাই জড়িত বলে স্বীকারোক্তি দিলেও গত ১৩ এপ্রিল মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা মাগুরা সদর থানার ইন্সপেক্টর (তদন্ত) মামলার চার আসামির বিরুদ্ধেই অভিযোগ এনে তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেন।