
প্রয়োজনে আইএমএফ থেকে সরকার বের হয়ে আসবে বলে জানিয়েছেন প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী ড.আনিসুজ্জামান চৌধুরী। তিনি বলেন, ৫ আগস্ট পট পরিবর্তনের পর সে দেশের অর্থনীতি ঘুরে দাঁড়িয়েছে। যেখানে আমাদের রিওয়ার্ড (পাওয়ার) পাবার কথা সেখানে পানিশম্যান্ট (শাস্তিমূলক) ব্যবস্থা নেওয়ার মত অবস্থা তৈরি করা হচ্ছে। বেশি চাপাচাপি করলে, মোটামুটি সিদ্ধান্ত নিয়েছি, আমরা আইএমএফ থেকে বের হয়ে আসবো। বাংলাদেশ কৃষি অর্থনীতিবিদ সমিতি আয়োজিত সেমিনারে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
শনিবার রাজধানীর ফার্মগেটে অবস্থিত বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা কাউন্সিল (বিএআরসি) মিলনায়তনে এ সেমিনার অনুষ্ঠিত হয়। ‘কৃষিতে বাজেট ২০২৫-২৬ : টেকসই প্রবৃদ্ধির রূপরেখা’ শীর্ষক ওই সেমিনারে সভাপতিত্ব করেন সমিতির সভাপতি আহসানুজ্জামান লিন্টু। এতে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন মানারাত ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির অধ্যাপক ড. মো. মিজানুর রহমান। এতে বক্তব্য রাখেন কৃষি অর্থনীতি সমিতির সাধারণ সম্পাদক প্রফেসর গোলাম হাফিজ কেনেডি, কৃষিবিদ শামীমুর রহমান শামীম।
ড. আনিসুজ্জামান বলেন, আইএমএফ থেকে ঋণ নেওয়ার অর্থই হচ্ছে আইসিইউতে যাওয়ার মতো অবস্থা। আইসিওতে যাওয়ার মতো অবস্থা কে তৈরি করেছে? কারা দেশের অর্থনীতিকে রুগ্ণ করেছে? -এমন প্রশ্ন রেখে তিনি বলেন, বর্তমান অন্তবর্তীকালীন সরকার দেশের অর্থনীতির সে সংকটাপন্ন কাটিয়ে উঠতে সক্ষম হয়েছে। এখন কেন আমরা কেন আইসিইউতে থাকবো? এখন যদি বেশি চাপাচাপি করে তাহলে আমরা আইএমএফের ঋণের শর্ত থেকে বের হয়ে আসবো। একই সঙ্গে প্রধানর উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী বিভিন্ন দাতাগোষ্ঠির সাহায্য সহযোগিতার নির্ভরশীলতা থেকে বের হয়ে আসা উচিত বলে মন্তব্য করেন।
তিনি বলেন, আমরা এলডিসি থেকে বের হয়ে আসবো-এটি সরকারের সিদ্ধান্ত। বলা হচ্ছে, এলডিসি থেকে বের হয়ে আসলে আমাদের তৈরি পোশাক খাত সংকটে পড়বে। তিনি বলেন, ১৯৭৯ সালে গার্মেন্টসের যাত্রা শুরু করেছি। এখনও যদি বলা হয়, আমরা সংকটে পড়বো তাহলে আমরা কবে ঘুরে দাঁড়াবো? সবাইকে নিয়ে সংকট মোকাবেলা করা হবে বলেও জানান আনিসুজ্জমান।
তিনি বলেন, বাংলাদেশে আজকের যে রুপান্তর তার পেছনে রয়েছে তিনটি চালিকাশক্তি। এগুলো হলো গার্মেন্ট, রেমিট্যান্স ও কৃষি। ১৯৭৫ সালের পট পরির্বতনের পর এ তিনটি খাতের বিকাশ লাভ করে। ওই সময়ে যারা নেতৃত্বে ছিলেন তাদের দূরদর্শিতার কারণে এটি সম্ভব হয়েছে। ওই নেতৃত্বকে আমাদের স্মরণ করতে হবে। উন্নতির জন্য সংকটের বিষয়টি বুঝতে হবে। ওইসময়ের নেতৃত্ব সেই সংকটটি খুব ভালোভাবে উপলব্ধি করতে সমর্থ হয়েছিলেন।
প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী আরও বলেন, আমাদের কৃষিকে এগিয়ে নিয়ে যেতে হবে, এর কোন বিকল্প নেই। কৃষিকে আমাদের উন্নয়সেনর কেন্দ্রে রাখতে হবে। একইসঙ্গে শিল্পখাতকেও গুরুত্ব দিতে হবে। শিল্পখাতকে অগ্রাধিকার দেওয়ার অর্থ এই নয়, কৃষিকে কম গুরুত্ব দেওয়া। কৃষি ও শিল্পকে সমান গুরুত্ব দিয়ে এগিয়ে যেতে হবে।
সেমিনারে মুক্ত আলোচনায় কৃষিবিদসহ কৃষিসংশ্লিষ্ট বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের প্রতিনিধিরা অংশ নেন।
বক্তারা কৃষি খাতে বাজেট বরাদ্দ বৃদ্ধিসহ, খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিতকরণ, কৃষির উন্নয়ন ও কৃষকের জীবনমান উন্নয়ন, জলবায়ুর নেতিবাচক মোকাবেলাসহ এ খাতের সম্ভাবনাকে কাজে লাগাতে ও চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় গবেষণার উপর গুরুত্বারোপ করেন।