Image description

Qadaruddin Shishir( কদরুদ্দীন শিশির)

এএফপি গতকাল 'বাংলাদেশ আফগানিস্তান হয়ে যাচ্ছে' ন্যারেটিভের লাইনে একটা স্টোরি করেছে। বাংলাদেশের রাজনীতি ক্লোজলি ফলো করেন না এমন মানুষজন এই রিপোর্ট পড়লে কেঁপে উঠবেন!
তাহলে "সাউথ এশিয়ায় ভারতের পেটে আরেকটা তালেবানি আফগানিস্তান গঠিত হতে যাচ্ছে সামনের নির্বাচনের পর!"
শিরোনামটি পড়ার পর ঠিক এমন একটা গা ছমছম করা ফিলিং হবে: "Bangladesh's influential Islamists promise sharia as they ready for polls"
এরপর যদি ইন্ট্রোতে আসেন তাহলে দেখবেন আসল খেলা।
ইন্ট্রোর প্রথম দুটি সেন্টেন্স হচ্ছে:
"Bangladesh's Islamists are readying to make political gains after being crushed for years by the government that was overthrown in a mass uprising last year, rallying hardline loyalists for eagerly anticipated elections.
"We are pretty confident about entering the parliament in the next election," Muhammad Mamunul Haque, joint secretary of Hefazat-e-Islam, an influential coalition of Islamic schools, told AFP in an interview."
হাসিনার সরকার এদেরকে দমিয়ে রাখলেও এখন যেহেতু হাসিনা নাই ফলে হার্ডলাইন ইসলামিস্টরা আগামী নির্বাচনে রাজনৈতিক দান মারার জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছে।
এই মেসেজটা এস্টাবলিশ করতে মামুনুল হকের একটা উক্তি ব্যবহার করা হয়েছে যেখানে তিনি আগামী সংসদে প্রবেশের বিষয়ে আত্মবিশ্বাস প্রকাশ করেছেন।
খেয়াল করার বিষয় হল, মামুনুল হককে এখানে পরিচয় করিয়ে দেয়া হয়েছে হেফাজতে ইসলামের যুগ্ম মহাসচিব আকারে!!
বাংলাদেশের রাজনীতি, হেফাজতে ইসলাম বা মামুনুল হককে নিয়ে খুবই ভালো জ্ঞান রাখেন না যারা-- যেমন বাংলাদেশের বাইরের লোকজন-- তারা এই ইন্ট্রো পড়ে ধরে নেবেন মামুনুল হক হেফাজতে ইসলামের আগামী সংসদে প্রবেশের ব্যাপারে আত্মবিশ্বাস প্রকাশ করছেন!! পুরো রিপোর্টেও পরে এটা পুরিপুরি ক্লিয়ার না যে, মামুনুলের সংসদে প্রবেশের আত্মবিশ্বাসটা হেফাজতকে প্রবেশ করানোর বিষয়ে নয়, বরং তার নিজের দল খেলাফতে মজলিসকে প্রবেশ করানোর।
এএফপি নিশ্চয়ই জানে যে, হেফাজতে ইসলাম নির্বাচনে অংশ নেয়ার ঘোষণা দেয়নি। এবং মামুনুল সংসদে ঢুকার আশাবাদ ব্যক্ত করতে যে 'we' ব্যবহার করেছেন সেই we হচ্ছে তার নিজের রাজনৈতিক দল খেলাফতে মজলিস।
ফলে যখন মামুনুল তার রাজনৈতিক দলের বিষয়ে কথা বলছেন তখন এএফপির প্রতিবেদনে তার এই পরিচয় ব্যবহার না করে হেফাজতে ইসলামের পরিচয় ব্যবহার করা স্পষ্টই বিভ্রান্তিকর। বিশেষ করে বিদেশি পাঠকদের জন্য যারা হেফাজত, মামুনুল, খেলাফত মজলিস ইত্যাদি নিয়ে খুব ডিটেইল ধারণা রাখেন না বা এসবের পুরো কনটেক্সট জানেন না।
আবার মামুনুল হক হেফাজতে টপ কোন নেতা নন, একজন যুগ্ম মহাসচিব। ব্যক্তিগত ব্রান্ডিংয়ের কারণে হেফাজতের অনেক নেতার চেয়ে তাকে বেশি চেনা গেলেও হেফাজতে ইসলামের মূল নেতা হলেন আমির ও মহাসচিব। অন্যদিকে খেলাফতে মজলিসের মহাসচিব মামুনুল।
তার বড় পরিচয়টি হচ্ছে তিনি একটি রাজনৈতিক দলের মহাসচিব। একটি ধর্মীয় সংগঠনের যুগ্ম মহাসচিবের পদ তার রাজনৈতিক পরিচয়ের কাছে গৌণ।
কিন্তু এএফপির রিপোর্টে 'জোর করে' এবং বিভ্রান্তিকরভাবে তার হেফাজতে ইসলামীর সাথে সংশ্লিষ্ট পরিচয়টি ব্যবহার করা হয়েছে।
কারণ, 'বাংলাদেশে রেডিকাল ইসলামিজম' এর আলোচনায় বিগত বছরগুলোতে যে ব্রান্ডিং হয়েছে সেক্ষেত্রে 'হেফাজতে ইসলাম' ব্রান্ডটি হলো 'সবচেয়ে রেডিকাল' হিসেবে পরিচিত; অন্তত বহির্বিশ্বের কাছে।
'বাংলাদেশ আফগানিস্তান হওয়ার পথে'-- এই স্টোরিটা বেচতে হলে 'হেফাজত সংসদে ঢুকছে' বা 'হেফাজতের নেতা সংসদে ঢুকছে' এই লাইনটা অনেক দামি হবে। তাই মামুনুলের হেফাজতি পরিচয় দিয়ে বিভ্রান্তিকরভাবে হলেও লিখতে হয়েছে 'আমরা আগামী নির্বাচনে সংসদে প্রবেশের বিষয়ে অত্যন্ত আত্মবিশ্বাসী'।
মামুনুলের এই বক্তব্য হেফাজত নেতা হিসেবে উপস্থাপনের পরের দুটি প্যারাতেও হেফাজত নিয়েই আলোচনা। হেফাজত কিভাবে ঢাকায় বড় রেলি করছে এবং গ্রুপটি কিভাবে শরিয়া বাস্তবায়নের এজেন্ড পুশ করবে।
অর্থাত, পুরো ব্যবপারটা হেফাজতে হেফাজতে সয়লাব। অথচ, মামুনুল কথা বলেছেন তার রাজনৈতিক দলের বিষয়ে-- যা হেফাজতে ইসলামের অনেক অংশের একটি ছোট অংশ।
এএফপির স্টোরি পড়লে এমন একটা ভাইব পাওয়া যাবে যে, বাংলাদেশে মনে হয় ইসলামিস্টদের সংসদে প্রবেশের ঘটনা আগামী নির্বাচনেই প্রথম ঘটতে যাচ্ছে।
এখানে যে, জামাতে ইসলামী, এবং অন্যান্য ইসলামিস্ট দল স্বাধীনতার পর থেকেই অল্পবিস্তর সংসদে রিপ্রেজেন্ট করেছে তার কোন তথ্য রিপোর্টে নেই।
মামুনুলকে শরিয়া প্রতিষ্ঠার এক গরম মুজাহিদ হিসেবে উপস্থাপন করলেও এবং হাসিনার সময়ে এদেরকে ক্রাশ করে দমনের কথা বলা হলেও এই মামুনুল হক সাহেব এবং উনার পিতার দল (খেলাফত মজলিস) ও জোটের সাথে যে শেখ হাসিনার এলায়েন্স ছিল তা এই রিপোর্টের জন্য গুরুত্বপূর্ণ কনটেক্সট যা কোথাও উল্লেখ করা হয়নি। কারণ এসব তথ্য উল্লেখ করলে 'ফিয়ার মোঙ্গারিং'টা সেল হবে না! যেই ইসলামি দলের সাথে হাসিনার মতো 'সেকুলার' নেতা (যিনি ইসলামিস্টদের ক্রাশ করেছেন) জোট করেন সেই ইসলামী দল বাংলাদেশে আফগানিস্তান বানাবে- এইটা খুব বিক্রি হবে না।
এএফপির এই রিপোর্টের আরেক গুরুত্বপূর্ণ ত্রুটি হলো মাত্র একজন ইসলামি নেতার বক্তব্যের উপর ভিত্তি করে একটা কনক্লুসিভ শিরোনাম করা। অন্তত ৩ টি দলের ৩জন নেতার সাক্ষাতকারের ভিত্তিতে এই শিরোনাম হলেও কিছুটা সার্বজনীন হতো বিষয়টা।
আর একজনের ইন্টারভিউ নিয়ে ইসলামিস্টদের মতোভাব তুলে ধরতে হলে সেই চয়েসটা হওয়া উচিত ছিল জামাতের ইসলামীর আমির- কারণ তার দল হলো সবচেয়ে বড় ইসলামিস্ট পার্টি, সংসদের উল্লেখযোগ্য আসন (১০ থেকে ২০টি) পেলে একমাত্র জামাতে ইসলামীই পাবার কথা। ফলে, সংসদে প্রবেশের কনফিডেন্স তার কাছে আরও বেশি পাওয়া যেত।
মামুনুলের দল ইসলামী রাজনৈতিক দলগুলোর রেংকিংয়ে ৩ বা ৪-এ পড়বে। ফলে একমাত্র তাকে ইসলামিস্টদের রিপ্রেজেন্টেটিভ হিসেবে বাছাইয়ের কোন যৌক্তিক কারণ বুঝে আসছে না। হতে পারে, জামাতের আমীরের ইন্টারভিউ নিলে তার সাথে হেফাজতের পরিচয়টা ব্লেন্ড করা যেত না।