Image description
আইএমএফের ঋণ

ঋণের নামে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) শর্তের ফাঁদে দেশের অর্থনীতি। কয়েক বছরে মাত্র পৌনে পাঁচ বিলিয়ন ডলার ঋণ পাওয়ার জন্য এখন এই সংস্থার শর্তের চাপে পিষ্ট হচ্ছে আর্থিক-রাজস্বসহ বেসরকারি খাতও। এর নেতিবাচক প্রভাব পড়ছে শিল্পে ও ব্যবসা-বাণিজ্যে। নতুন ৩৩টি শর্তের গ্যাঁড়াকলে পড়ে সংস্থাটির মন রক্ষা করতে সরকারের বিভিন্ন নিয়ন্ত্রক প্রতিষ্ঠানও গলদঘর্ম। তছনছ হয়ে পড়ছে অর্থনীতির বিদ্যমান কাঠামো। ঋণ পেতে আইএমএফের একের পর এক প্রেসক্রিপশনে কমছে করছাড়, ভর্তুকি। বাড়ছে ভোক্তার করের বোঝা।

দেশের বাস্তবতায় কঠিন, তার পরও এমন সব প্রস্তাব বাস্তবায়ন করতে বলা হচ্ছে, যার ফলে প্রাতিষ্ঠানিক কাঠামোয়ও পরিবর্তন হচ্ছে। এতে বাড়ছে অসন্তোষ। শিল্পের প্রসার ও নতুন বিনিয়োগ বাধাগ্রস্ত হওয়ার পাশাপাশি ব্যবসার খরচ বেড়ে গিয়ে কাহিল অবস্থায় পড়েছে বেসরকারি খাত। অনেক শর্ত মানার পরও এরই মধ্যে দুটি কিস্তি আটকে দিয়ে টালবাহানা করছে সংস্থাটি। আর কাঙ্ক্ষিত ঋণ না পেয়ে সরকারের ভেতরেই ক্ষোভ-অসন্তোষ মাথাচাড়া দিয়ে উঠছে। খোদ অর্থ উপদেষ্টাও সংস্থাটির কর্মকাণ্ডে বিরক্ত হয়ে প্রয়োজনে ঋণ না নেওয়া, এমনকি সংস্থাটির সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ারও হুঁশিয়ারি দিয়েছেন। ব্যবসায়ী ও বিশ্লেষকরা মনে করেন, আইএমএফের শর্ত সব দেশে সমান কাজ করে না। বরং দেশের স্বার্থে সংস্থাটিকে না বলার সাহস দেখাতে হবে সরকারকে।

আইএমএফের ঋণের শর্ত পর্যালোচনা, সরকারি ও বেসরকারি খাতের স্টেকহোল্ডার ও বিশেষজ্ঞদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, বাংলাদেশ এখন রীতিমতো আইএমএফের ঋণের ফাঁদে পড়েছে। কয়েক বছরে তারা কয়েক কিস্তিতে যে পরিমাণ ঋণ দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে, তাতে বাংলাদেশের লাভের চেয়ে বরং ক্ষতির প্রভাবই বেশি।

বছর দুয়েক আগে ডলার সংকটে অর্থনীতি কঠিন খাদের কিনারে চলে গেলে তৎকালীন আওয়ামী লীগ সরকার কঠিন শর্তে রাজি হয়েই ৪.৭৫ বিলিয়ন ডলার ঋণ নেয় আইএমএফের কাছ থেকে। আর ঋণের কিস্তি দিয়েই শর্ত ও নজরদারি শুরু করে সংস্থাটি। একটার পর একটা কিস্তির সময় আসে, আর তাদের শর্ত কতটা মানা হলো তার পুঙ্খানুপুঙ্খ হিসাব বুঝে নেয় তারা। আর এর প্রভাবে চাপ পড়তে থাকে অর্থনীতি ও ব্যবসা-বাণিজ্যের বিভিন্ন স্তরে।

বিশ্লেষকরা দাবি করেন, সংস্থাটির কিছু কিছু শর্ত অর্থনীতির জন্য সহায়ক হলেও কিছু কিছু শর্ত স্বার্থবিরোধী। এসব শর্ত মানতে গিয়ে জ্বালানি, কৃষি ও সারে ভর্তুকি কমানো, রাজস্ব বাড়ানোর চাপে বিভিন্ন সম্ভাবনাময় ও উদীয়মান শিল্পে করছাড় তুলে দেওয়া, সরকারি প্রতিষ্ঠানে ভর্তুকি ও ধার না দেওয়া, বেসরকারি খাতের ঋণের কিস্তি শোধের সময় এগিয়ে আনা ইত্যাদি নীতির বাস্তবায়ন করতে হচ্ছে। এর সরাসরি নেতিবাচক প্রভাব ভোক্তাসাধারণসহ ঘুরেফিরে সব স্তরেই পড়ছে। এর বাইরেও সরকারের অনেক সংবেদনশীল বা স্পর্শকাতর খাতে নজরদারির মতো কাজেও যুক্ত হতে চায় সংস্থাটি। সরকারের আর্থিক ব্যবস্থাপনার সফটওয়্যার আইবাস (ইন্টিগ্রেটেড বাজেট অ্যান্ড অ্যাকাউন্টিং সিস্টেম) কিভাবে কাজ করে, তা দেখতে এতে প্রবেশের সুযোগও চেয়েছিল সংস্থাটি। সব শর্ত সরকার বাস্তবায়ন করতে পারছে না। অনেক ক্ষেত্রে কনফ্লিক্ট অব ইন্টারেস্ট হয়ে যাচ্ছে। এ কারণে সরকারও বেশ অসন্তোষের মধ্যে রয়েছে। সম্প্রতি অর্থ উপদেষ্টা ড. সালেহউদ্দিন আহমেদও একের পর এক শর্ত পালনের পরও ঋণের দুটি কিস্তি ঝুলিয়ে দেওয়ায় ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন। তিনি গত মঙ্গলবার এক অনুষ্ঠানে বলেন, আইএমএফের সব শর্ত মেনে আমরা ঋণ নিতে চাই না। কারণ বাংলাদেশ এখন আর আইএমএফ ও বিশ্বব্যাংকের ওপর নির্ভরশীল নয়। তারা বলেছে, বিনিময় হার বাজারের ওপর ছেড়ে দিতে। আমরা বলেছি, বিদ্যমান অর্থনৈতিক পরিস্থিতি বিবেচনায় তা পুরোপুরি বাজারে ছেড়ে দেওয়া সম্ভব নয়।

৯ মাসেও আইএমএফের কাঙ্ক্ষিত ঋণের কিস্তি না পাওয়া প্রসঙ্গে তিনি বলেন, এ বিষয়ে আমরা একটা শক্ত পদক্ষেপ নেব। আমরা যদি না নিই, দেখবেন ওখানে কয়জনের চাকরি যায়।’ ঋণের শর্ত প্রসঙ্গে অর্থ উপদেষ্টা বলেন, কিছু শর্ত আছে, যেগুলোর সব আমরা পরিপালন করতে চাই না। তারা বলেছে, এটি করো, সেটি করো, আমরা সেই পথে হাঁটব না।

বিশেষজ্ঞরা বলেন, আর্থিক খাতে যত শর্ত দেওয়া হয়েছে, দীর্ঘ মেয়াদে এর কিছু ইতিবাচক প্রভাব পড়ার সুযোগ থাকলেও ক্ষতির মাত্রাও কম নয়। সুদের হার, মুদ্রার বিনিময় হার, খেলাপি ঋণ কমানো, ডলারের দর বাজারমুখী করা, রিজার্ভ গণনাসহ এমন সব শর্তের কথা বলা হয়, যার ফলে অর্থনীতিতে এর নেতিবাচক প্রভাব পড়তে থাকে। বিশেষ করে খেলাপি ঋণ হিসাব করার ক্ষেত্রে শর্ত দেওয়া হয় যে তিন মাস পর্যন্ত কিস্তি না দিতে পারলে তা গ্রহণযোগ্য। এর পরে তা খেলাপি হিসেবে গণনা করা হবে। আগে নিয়ম ছিল টানা ছয় মাস কিস্তি না দিতে পারলেও খেলাপি দেখানো হতো না। আইএমএফ তা তিন মাস করার কারণে লাগামহীনভাবে খেলাপি ঋণ বাড়তে থাকে। বাংলাদেশ ব্যাংকের সর্বশেষ হিসাবে দেখা যায়, গত ডিসেম্বর পর্যন্ত দেশের ব্যাংকব্যবস্থায় খেলাপি ঋণ দাঁড়িয়েছে তিন লাখ ৪৬ হাজার কোটি টাকা। অথচ এর ছয় মাস আগেও তা অনেক কম ছিল। মাত্র তিন মাসেই (জুলাই-ডিসেম্বর) এক ধাক্কায় খেলাপি ঋণ বেড়েছে এক লাখ ৩৪ হাজার কোটি টাকা। এতে শিল্প গ্রুপ ও বড় বড় ঋণগ্রহীতা প্রতিষ্ঠানগুলো অল্প সময়ের মধ্যেই ঋণখেলাপির তালিকায় উঠে যায়। অথচ নানা কারণে একজন উদ্যোক্তা ছয় মাস পর্যন্ত ঋণের কিস্তি দেওয়ায় সংকটে পড়তে পারেন। এরই মধ্যে আবার সংকট কাটিয়ে ঋণ নিয়মিতকরণও করতে পারেন। কিন্তু সংস্থাটির শর্তের কারণে ওই শিল্প গ্রুপটিকে ঋণখেলাপির তকমা নিতে হচ্ছে। এর প্রভাবে দীর্ঘ মেয়াদে ব্যবসাও ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে।

রাষ্ট্রায়ত্ত ১৩৪টি প্রতিষ্ঠানের ভর্তুকি তুলে দিতে চাপ দেয় সংস্থাটি। অলাভজনক বিবেচনায় এসব প্রতিষ্ঠানকে আর সহায়তা না দিতে পরামর্শ দেয় আইএমএফ। তবে লোকসানি হলেও সরকার চাইলেই অনেক সরকারি প্রতিষ্ঠান সহসা বন্ধ করে দিতে পারে না। বিশ্লেষকরা মনে করেন, এগুলো সরকারকে মুনাফা দেয় না সত্য, তবে অর্থনীতিতে, মানুষের জীবনমানে এসব সংস্থার অবদান রয়েছে। অনেক লোক সেখানে কাজ করে জীবন নির্বাহ করেন। আকস্মিক ভর্তুকি তুলে দিলে অনেক খাত বসে পড়ার ঝুঁকি থাকে।

সার ও কৃষি উপকরণে ভর্তুকি তুলে দেওয়ারও চাপ আছে সংস্থাটির। কিন্তু কৃষিতে হঠাৎ করে ভর্তুকি তুলে দিলে কৃষির খরচ বাড়ে, জিনিসপত্রের দাম ব্যয়বহুল হয়। খাত ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার ঝুঁকি থাকে। জ্বালানি, বিদ্যুৎ ও গ্যাসেও ভর্তুকি তুলে দিলে পুরো অর্থনীতিতে এর প্রভাব পড়ে। মানুষের জীবনযাত্রার খরচ বেড়ে যায়। সরকারও বড় চাপে পড়ে। সংস্থাটির ঋণ নেওয়ার পর থেকেই ধাপে ধাপে জ্বালানি খাতের ভর্তুকি কমিয়ে দিচ্ছে সরকার। এর ফলে জ্বালানি ব্যয়বহুল হয়ে পড়ছে। সর্বশেষ কিছুদিন আগেও নতুন শিল্প স্থাপনে এক লাফে ৩৩ শতাংশ গ্যাসের দাম বাড়ানো হয়। এর ফলে বিনিয়োগ স্থবির হওয়ার আশঙ্কা করছেন উদ্যোক্তারা। এমনিতেই দেশে বিনিয়োগ নেই। বেসরকারি খাতে আস্থাহীনতা কাজ করছে। তার মধ্যে এক লাফে গ্যাসের দাম এভাবে বাড়ানোর ফলে শিল্পের প্রসার থমকে যাবে বলে এরই মধ্যে উদ্যোক্তারা বলতে শুরু করেছেন।

এ ব্যাপারে সিনিয়র ব্যাংকার ও সিটি ব্যাংক এনএর সাবেক সিইও মামুন রশীদ কালের কণ্ঠকে বলেন, আসলে সব দেশে আইএমএফের প্রেসক্রিপশন কাজ করে না। তারা হচ্ছে সব মানুষের জন্য একই ওষুধ দিয়ে থাকে। এটা হয় না। বাংলাদেশ শ্রীলঙ্কা নয়। সেখানে তাদের ফর্মুলা কাজ করলেও বাংলাদেশে কাজ করে না। তাদের অনেক শর্তের জালে আটকা পড়ে যান কর্মকর্তারা। ফলে প্রকৃত যে সংস্কার, সেটা বিলম্বিত হয়। সংস্থাটি নির্দিষ্ট ফ্রেমওয়ার্কের মধ্যে কাজ করে। তবে অতিমাত্রায় নজরদারি সব সময় সুফল দেয় না।

ঢালাও করছাড় তুলে দিতে সংস্থাটি অনেক চাপ দিয়ে যাচ্ছে। কয়েক মাস আগে একসঙ্গে প্রায় ৬৪টি পণ্যে নতুন করে ভ্যাটের হার বাড়ানো হয়। এর ফলে ব্যবসায়ীদের মধ্যে ব্যাপক সমালোচনা হয়। ভোক্তারাও দাম বেড়ে যাওয়ার আশঙ্কায় ক্ষোভ প্রকাশ করে। পরে সমালোচনার মুখে দু-একটি পণ্যের বর্ধিত ভ্যাট স্থগিত করা হয়। কিন্তু বেশির ভাগই বহাল থাকে, যার প্রভাব পড়ে জিনিসপত্রের দামে। ব্যবসায়ীরা এ বিষয়ে ব্যাপক অসন্তোষ প্রকাশ করেন।

ভর্তুকি ও ছাড়ের বিষয়ে সংস্থাটির অবস্থান হলো আর কতকাল এসব সহায়তা দেওয়া হবে? তবে ভর্তুকির কারণে এর সুফল পায় সাধারণ মানুষ। বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, কৃষি ভর্তুকির ফলে কৃষি খাতের ফলনে এর সরাসরি প্রভাব পড়ে। তা না হলে উৎপাদন খরচ অনেক বেড়ে যেত। এর ফলে জিনিসপত্রের দাম আরো বাড়ত। জ্বালানিতে ভর্তুকি না দিলে সব কিছুতে এর প্রভাব পড়ে। জ্বালানি দেশের অর্থনীতির খুব প্রভাবশালী পণ্য হিসেবে বিবেচিত। এর দামের হেরফের হলেই টালমাটাল হয়ে যায় অর্থনীতি ও ব্যবসা-বাণিজ্য। মানুষের জীবনযাত্রায় সরাসরি প্রভাব পড়ে। পরিণামে তা সরকারের রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডেও প্রভাব ফেলে। জনগণের স্বার্থের কারণে সরকারও একে রাজনৈতিক পণ্য হিসেবেই দেখে।

প্রাণ-আরএফএল গ্রুপের চেয়ারম্যান আহসান খান চৌধুরী কালের কণ্ঠকে বলেন, বর্তমানের ব্যবসায় পরিবেশ সত্যিকার অর্থে ব্যবসাবান্ধব নয়। আগের সরকারও বিভিন্ন সময়ে কঠোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এসবের জন্য ব্যবসা সাফার করে। এখনো যেসব সিদ্ধান্ত নেওয়া হচ্ছে এগুলো ব্যবসাবান্ধব নয়। আমরা তো ব্যবসা-বাণিজ্য নিয়েই কাজ করি। সত্যি কথা কি ব্যবসা-বাণিজ্য খুব খারাপ অবস্থায় আছে। আইএমএফ যদি কঠিন শর্ত দেয়, তাহলে সব পরিষ্কার করে বলেন, জাতিকে জানান। আমরা তো ১৮ কোটি মানুষের দেশ। তারা তা জানে। তাদের বোঝাতে হবে। আমরা হয়তো তাদের বোঝাতে ব্যর্থ হচ্ছি। কর্মকর্তারা যদি তাদের বোঝাতে ব্যর্থ হন, তাহলে আমাদের বলুক। আমরা বোঝানোর চেষ্টা করব। কিন্তু ব্যর্থ বাঙালি হতে চাই না।

ঢালাওভাবে করছাড় তুলে দেওয়ার বিষয়ে কর বিশেষজ্ঞরা বলছেন, সবার ওপর সমান কর আরোপসহ আইএমএফের বেশ কিছু বিষয়ে পরামর্শ ভালো। তবে পর্যালোচনা করে তাদের পরামর্শের কিছু অংশ যদি দেশ, জনগণ ও শিল্পস্বার্থবিরোধী হয়, সে ক্ষেত্রে সরকার নিজের স্বার্থ বিবেচনা করে সিদ্ধান্ত নিতে পারে।

দেশের আইসিটি খাতের কর অবকাশ সুবিধা তুলে দেওয়ারও চাপ রয়েছে। এ ছাড়া উৎপাদনমুখী শিল্প খাতের কর অবকাশ সুবিধাও তুলে দেওয়ার পক্ষে আইএমএফ। সংস্থাটি পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত কম্পানির গেইন ট্যাক্স, বন্ড, জিরো কুপন বন্ডসহ আরো বিভিন্ন মুনাফার ওপর সুদকে করমুক্ত রাখার বিপক্ষে। সংস্থাটি চায়, এসব সুদ বা মুনাফার ওপর করমুক্ত সুবিধা বাতিল করতে হবে। কিন্তু বর্তমানে পুঁজিবাজার এমনিতেই সংকটময় সময় পার করছে। একে প্রণোদনা না দিয়ে উল্টো শর্তের বেড়াজালে আবদ্ধ করলে এই বাজার আর ঘুরে দাঁড়াতে পারবে না বলেই মনে করছেন বিশ্লেষকরা।

আইএমএফ রাজস্ব, আর্থিক, জ্বালানি, সামাজিক নিরাপত্তাএই চারটি খাতেই দৃশ্যমান বড় সংস্কার করতে চায়। এনবিআর জানায়, ২০২০-২১ অর্থবছরের হিসাবে, দেশে বছরে এক লাখ ২৫ হাজার ৮১৩ কোটি টাকার আয়কর ছাড় দেওয়া হয়। দুই শতাধিক প্রজ্ঞাপনের মাধ্যমে এসব করছাড় দেওয়া হয়েছে। এনবিআরের এই প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠান পর্যায়ে ৯৭টি খাতে করছাড় দেওয়া হয়। সমাজকল্যাণ, বিনিয়োগ, মানবসম্পদ উন্নয়ন, শিল্প খাতে সহায়তা, ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্পকে সুরক্ষা, শেয়ারবাজার চাঙ্গা করা, তথ্য-প্রযুক্তি খাতে সহায়তা, রপ্তানি উন্নয়ন, শিক্ষা সহায়তাসহ বিভিন্ন উদ্দেশ্যে এসব করছাড় দেয় এনবিআর।

আইএমএফ শর্ত পূরণ করতে তিন অর্থবছরে বাংলাদেশকে রাজস্ব হিসাবে দুই লাখ ৩৪ হাজার কোটি টাকা অতিরিক্ত আয় করতে হবে। তাদের পরামর্শে রাজস্ব খাতে এমন সব নীতি-কৌশল নেওয়া হচ্ছে, যার ফলে ভোক্তার ওপর বাড়ছে করের বোঝা। সব মিলিয়ে এসবের ইতিবাচকের চেয়ে নেতিবাচক ফল গিয়ে পড়ছে মানুষের জীবনযাপনে। সংস্থাটি চায়, এনবিআর প্রতিবছর মোট দেশজ উৎপাদনের (জিডিপি) ০.৬ শতাংশ হারে শুল্ক-কর তথা রাজস্ব আদায় বাড়াতে হবে। গত ২০২৩-২৪ অর্থবছরে রাজস্ব আদায় বাড়ানোর শর্ত ছিল জিডিপির ০.৫ শতাংশ। কিন্তু সেই লক্ষ্য অর্জন করতে পারেনি এনবিআর।