
চট্টগ্রাম নগরীর চান্দগাঁওয়ে রাহাত ইসলাম (১২) নামে সপ্তম শ্রেণি পড়ুয়া এক বন্ধুকে মারধরের পর আহত অবস্থায় নদীতে ফেলে হত্যা করেছে তার চার বন্ধু। পুলিশ ওই চার বন্ধুকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য হেফাজতে নিয়েছে। বুধবার সকাল ৭টার দিকে নগরের হামিদচরের নদী থেকে নিহতের লাশ উদ্ধার করা হয়। নিহত রাহাত নগরের চান্দগাঁওয়ের ৪ নম্বর ওয়ার্ডের পূর্ব ফরিদের পাড়ার মো. লিয়াকত আলীর ছেলে এবং সানোয়ারা বালক উচ্চ বিদ্যালয়ের সপ্তম শ্রেণির শিক্ষার্থী। পাশাপাশি সে ব্রাদার্স ইউনিয়ন জুনিয়র ক্রিকেট দলের সদস্যও।
২৯শে এপ্রিল স্কুল ছুটিতে বন্ধুদের সঙ্গে ঘুরতে গিয়ে হারিয়ে যায় রাহাত। এ সময় চার বন্ধু মিলে শত্রুতার জেরে পূর্বের একটি ঘটনা নিয়ে তাকে মারধর করে নদীতে ফেলে দেয়। সকালে স্থানীয়রা লাশ দেখতে পেয়ে পুলিশকে খবর দিলে পুলিশ এসে লাশ উদ্ধার করে।
রাহাতের মা রোজি আক্তার বলেন, ছেলের ছয় বছর বয়স থেকে ক্রিকেট অনুশীলনের জন্য আউটার স্টেডিয়ামে নিয়ে যেতাম। অনুশীলন শেষ হওয়ার পর আবার তাকে নিয়ে বাসায় ফিরতাম। আমার কষ্ট হতো, ছেলে তা বুঝতে পারত। এ জন্য প্রায়ই বলত, মা আমি যখন বড় ক্রিকেটার হব, তখন বিদেশে খেলতে গেলে তোমাকেও নিয়ে যাব সঙ্গে। এসব কথা বলতে না বলতেই অঝোরে কাঁদতে থাকেন রোজি আক্তার। তখন তাকে সান্ত্বনা দেওয়ার চেষ্টা করেন কোচ মাসুমউদ্দৌলা। পরে তিনি বলেন, ‘রাহাত অলরাউন্ডার ছিল। বোলিং, ব্যাটিং সবই করতো। ভালো কিপারও ছিল। গত বছর ক্লাবের অনূর্ধ্ব-১১-১২ গ্রুপের অধিনায়ক করা হয় তাকে। সীমিত ওভারের বেশ কয়েকটি খেলায় পাশাপাশি দুটি ৫০ রান ছিল তার। একবার ৪৯ রানে অপরাজিত ছিল সে। একজন সম্ভাবনাময় ক্রিকেটারকে হারিয়ে ফেললাম আমরা।’
মা-বাবার তৃতীয় সন্তান রাহাত। তার বড় দুই ভাই রয়েছে। তবে তারা অসুস্থ। রাহাতের চাচা জাহাঙ্গীর আলম বলেন, আমার ভাইয়ের যে ছেলেটা মেধাবী ছিল, খেলাধুলায় সেরা ছিল, সেই ছেলেটাই নেই।
সহপাঠীদের সঙ্গে রাহাতের কোনো ঝগড়া হয়েছে কি না, এ তথ্য নিশ্চিত করতে পারেননি সানোয়ারা ইসলাম বালক উচ্চবিদ্যালয়ের শিক্ষকরা। বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আবুল মনসুর চৌধুরী বলেন, স্কুলে রাহাতের সঙ্গে বন্ধুদের ঝগড়ার বিষয়ে কোনো তথ্য আমাদের কাছে ছিল না। আমাদের কাছে কোনো অভিযোগও করা হয়নি। আমি শ্রেণিশিক্ষককে জিজ্ঞেস করেছি, তিনিও কিছুই জানেন না। রাহাতের মা আমাদের বলেছেন, ১০-১২ দিন আগে রাহাত একদিন বাসায় ফিরে তাঁকে বলেছে, কয়েকটা ছেলের সঙ্গে তার গণ্ডগোল হয়েছে। তার মা এ বিষয়ে তাদের সঙ্গে ঝগড়া না করার জন্য বলেছিলেন।’ ঘটনার পর সানোয়ারা ইসলাম বালক উচ্চবিদ্যালয়ের তিন শিক্ষককে নিয়ে তদন্ত কমিটি করা হয়েছে বলে প্রধান শিক্ষক জানিয়েছেন।
রাহাতের বাবার একটি গ্রিলের ওয়ার্কশপ রয়েছে। জানতে চাইলে তিনি বলেন, দুই মাস আগে স্কুলে বসা নিয়ে সহপাঠীদের সঙ্গে তার ছেলের কথা-কাটাকাটি হয়। সেটি মীমাংসাও হয়ে যায়। কিন্তু এই ঘটনার জেরে তার ছেলেকে বুধবার টিফিন ছুটির পর নদীর তীরে নিয়ে যায় সহপাঠীরা। তারাই মেরে নদীতে ফেলে দেয় বলে তিনি দাবি করেন।
পুলিশ জানায়, মঙ্গলবার সকালে রাহাত স্কুলে গিয়েছিল। কিন্তু ছুটির পর বন্ধুদের সঙ্গে বেরিয়ে আর বাসায় ফেরেনি। চান্দগাঁও থানার ওসি আফতাব উদ্দিন বলেন, চার বন্ধু মিলে এক বন্ধুকে হত্যার অভিযোগ উঠেছে। এ ঘটনায় চারজনকে থানা হেফাজতে নিয়ে আসা হয়েছে। তদন্তের পরে বিস্তারিত জানানো হবে।