
ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ে (ইবি) ছাত্রলীগের রাজনীতির সঙ্গে সংশ্লিষ্টতার অভিযোগ ও জুলাই অভ্যুত্থানে আন্দোলনকারীদের 'দুর্বৃত্ত' সম্বোধন করে নিউজ প্রকাশ ও ওয়াসিফ আল আবরার নামে এক সাংবাদিক মারধরের শিকার হয়েছেন।
আবরার কমিউনিকেশন এন্ড মাল্টিমিডিয়া জার্নালিজম বিভাগের ২০২১-২২ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী এবং একটি অনলাইন পত্রিকার বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিনিধি। মঙ্গলবার (২৯ এপ্রিল) দিবাগত রাত ১২টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের শাহ আজিজুর রহমান হলে এ ঘটনা ঘটে।
জানা যায়, আন্দোলনকারীদের দুর্বৃত্ত সম্বোধন করে নিউজ প্রকাশ ও ছাত্রলীগের রাজনীতির সঙ্গে জড়িত থাকার অভিযোগে বিশ্ববিদ্যালয়ের শাহ আজিজুর রহমান হলের প্রভোস্ট হল থেকে তাকে চলে যেতে বলেন। কিন্তু হল থেকে স্থায়ীভাবে না গিয়ে অবৈধ সিটে মাঝে মাঝেই ওই হলে থাকতেন আবরার। পরবর্তীতে শিক্ষার্থীরা আবরারের বিরুদ্ধে অভিযোগ করলে তাকে ৩ দিনের মধ্যে হল ছেড়ে দিতে বলেন হল প্রভোস্ট। এরপর মঙ্গলবার রাতে হল ছেড়ে চলে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেন আবরার। হল ছেড়ে যাওয়ার সময় সহ-সমন্বয়ক নাহিদ হাসান, সাজ্জাত শেখ, ইসমাইল হোসেন রাহাত, সায়েম আহমেদ জানতে চান কেন আবরার হল ছেড়ে যাচ্ছে? এসময় শিক্ষার্থীরা উচ্চবাচ্য শুরু করেন। পরে সেখানে ধস্তাধস্তিতে আবরার অসুস্থ হয়ে পড়েন ফলে তাকে ইবি মেডিকেলে নিয়ে যাওয়া হয়। তবে আবরারকে শেল্টার দেওয়া পক্ষের দাবি আবরারকে মারধর করা হয়েছে। এদিকে আবরারকে ইবি মেডিকেলে নিয়ে যাওয়া হলে ডা. পারভেজ তার নিরাপত্তাসহ সামগ্রিক বিবেচনায় কুষ্টিয়া সদর হাসপাতালে পাঠান।
আরও জানা যায়, আন্দোলনকারীদের দুর্বৃত্ত সম্বোধন ও কলেজে থাকাকালীন সময়ে ছাত্রলীগের সঙ্গে সম্পৃক্ততার অভিযোগ রয়েছে আবরারের বিরুদ্ধে। এছাড়া ছাত্রলীগের কর্মসূচিতে আবরারের অংশ নেওয়ার বেশকিছু ছবি অনলাইনে ভাইরাল হয়। এ নিয়ে আন্দোলনকারীরা তার কর্মকাণ্ড নিয়ে সংশয় পোষণ করেন এবং সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বিভিন্ন সময় অভিযোগ তোলেন। কিন্তু অভিযোগ রয়েছে সমন্বয়কদের একটি পক্ষের সঙ্গে আঁতাত করে চলেন আবরার এবং ক্যাম্পাসে গাঁ ফুলিয়ে চলাফেরা করেন। সূত্র জানায়, আঁতাতকারী সহ-সমন্বয়করা হলেন নাহিদ হাসান, সাজ্জাত শেখ, ইসমাইল হোসেন রাহাত, সায়েম আহমেদ।
এ নিয়ে অন্যান্য সমন্বয়করা ক্ষোভ ও দুঃখ প্রকাশ করেন এবং জুলাই অভ্যুত্থানের কিছু সহযোদ্ধাদের বিরুদ্ধে শহীদদের রক্তের সঙ্গে বেঈমানি করার অভিযোগ তোলেন। অভিযোগ করে তারা বলেন, আবরার ছিলেন ছাত্রলীগের মদদপুষ্ট সাংবাদিক। আন্দোলন চলাকালে এবং ৫ আগস্ট পরবর্তী নানা বিতর্কিত নিউজ করে ক্যাম্পাসকে অস্থিতিশীল করার চেষ্টা করেছে। এখনো তার সে তৎপরতা অব্যাহত রয়েছে। এদিকে ওই সাংবাদিককে মারধরের ঘটনায় ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদকসহ ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা প্রতিবাদ জানিয়েছেন। তবে অন্য পক্ষের দাবি জুলাই অভ্যুত্থানে আবরার গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন।
এ নিয়ে একইদিন দিবাগত রাত ২ টার দিকে আন্দোলনকারীদের ২টি পক্ষ বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি অধ্যাপক ড. নকীব মোহাম্মদ নসরুল্লাহর বাসভবনের সামনে অবস্থান নেন। এসময় উভয়পক্ষের মধ্যে কথাকাটাকাটি শুরু হয় এবং পরবর্তীতে তা হাতাহাতির পর্যায়ে গড়ায়। এসময় বিশ্ববিদ্যালয়ের ট্রেজারার অধ্যাপক ড. জাহাংগীর আলম উভয়পক্ষকে শান্ত করেন এবং পরে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অধ্যাপক ড. শাহিনুজ্জামানকে বিষয়টি সমাধানের জন্য বলেন তিনি। এরপর প্রক্টর অফিসে উভয়পক্ষের মধ্যে আলোচনা শুরু হয় এবং বুধবার সকালে আলোচনা শেষ হয়।
সহ-সমন্বয়ক তানভির মন্ডল বলেন, আমাদের মাঝে তৃতীয় পক্ষ ঢুকে এরকম অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটানোর চেষ্টা করতেছে। আমরা এই ঘটনার তদন্ত পূর্বক সুষ্ঠু বিচার চাই এবং বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনসহ ফ্যাসিবাদ বিরোধী সকল শিক্ষার্থীদেরকে ধৈর্য্য ধারণ করে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনকে সহযোগিতা করার অনুরোধ করছি। এছাড়া সকলের মাঝে যাতে অনৈক্য দেখা না দেয়, সে ব্যাপারে আহ্বান জানাচ্ছি।
আবরারের ছাত্রলীগ সংশ্লিষ্টতা ছিল না দাবি করে সহ-সমন্বয়ক নাহিদ হাসান বলেন, ওয়াসিফ আল আবরারকে হল থেকে নামা না নামানোর ঘটনাকে কেন্দ্র করে শাহ আজিজুর রহমান হলে একটি উত্তেজনাকর পরিস্থিতি তৈরি হয়। তখন আমি ও আমার সহযোদ্ধারা সেখান যাই। পরে আবরারকে ইবি মেডিকেলে পাঠানো হয়। এসময় আমাকে হেনস্তা করা হলে আমরা ভিসি বাসভবনের সামনে অবস্থান নেয়। এসময় আরও একটি পক্ষ সেখানে যাওয়ার পর বিরূপ মন্তব্য করা হলে হাতাহাতি ও বাকবিতন্ডা হয়। পরে প্রক্টরিয়াল বডি আশ্বস্ত করলে আমরা সেখান থেকে প্রক্টরিয়াল অফিসে বসে আলোচনা করি। আমি আশাবাদি সুষ্ঠু তদন্তের মাধ্যমে এ ঘটনায় সুষ্ঠু বিচার হবে।
বিশ্ববিদ্যালয়ের কর্তব্যরত চিকিৎসক ডা. পারভেজ হাসান বলেন, তার তেমন গুরুতর কিছু হয় নি। আমরা ধারণা করছি তার শ্বাসনালীতে আঘাত লেগেছে। প্রথমে সে সুস্থই হয়ে গেছিল। পরে শ্বাস নিতে সমস্যা হচ্ছিল এবং বমি করছিল। এসময় রোগীর সঙ্গে কথা বলে এবং বাইরে থেকে আবার তার উপর আক্রমণ হতে পারে এমন কথা শুনে তার নিরাপত্তার কথাসহ যাবতীয় বিষয় চিন্তা করে তাকে কুষ্টিয়ায় পাঠিয়েছি।
এবিষয়ে হলটির প্রভোস্ট অধ্যাপক ড. এ.টি.এম মিজানুর রহমান বলেন, আমাদের হলে ছেলেটার এটাচমেন্ট নেই তাই আমরা তাকে বললাম যে তুমি তোমার হলে চলে যাও। পরশুদিন আমি ওর রুমমেটকে বলেছিলাম আবরার যাতে রুমে এসে না থাকে, যেহেতু ওর বিষয়ে অনেক অভিযোগ রয়েছে। এটা জানার পরেও আমার কথা অমান্য করে সে হলে এসে থাকছে। অন্যান্য শিক্ষার্থীদেরকে উসকে দিচ্ছে। এতে উত্তেজনার সৃষ্টি হয়েছে। এছাড়া গতরাতে যারা ওকে নামিয়ে দেওয়ার জন্য গিয়েছিল তারাও আমার সাথে কথা বলে যায়নি। এটা তো হল প্রশাসনের দায়িত্ব। দুই পক্ষকেই আমি মেনে নিতে পারছি না।
এ বিষয়ে প্রক্টর অধ্যাপক ড. শাহিনুজ্জামান বলেন, ঘটনার পরে আমরা উভয়পক্ষকে নিয়ে বসেছিলাম। হল প্রশাসন ও বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন কর্তৃক আলাদা দুটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হবে। তদন্ত কমিটির প্রতিবেদনের ভিত্তিতে পরবর্তীতে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
এ বিষয়ে ভিসি ড. নকীব মোহাম্মদ নসরুল্লাহ বলেন, আমি প্রক্টরকে বলেছি, এ বিষয়ে প্রক্টর যাবতীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করবে।