
গাজীপুর মহানগরীর পুবাইল থানাধীন হায়দরাবাদ এলাকায় মসজিদ কমিটির দুই পক্ষের রোষানলে পড়ে সাজানো বলাৎকারের ঘটনায় পিটুনির শিকার হয়ে কারাগারে মৃত্যুবরণ করেছেন আখলা দুল জামে মসজিদের ইমাম ও খতিব রহিজ উদ্দিন (৩৫)। গতকাল বুধবার ওই এলাকায় গিয়ে স্থানীয় লোকজনের সাথে কথা বলে এই সব তথ্য জানা গেছে। এই মৃত্যুর ঘটনায় মুসল্লিদের মধ্যে চরম ক্ষোভ বিরাজ করছে। দোষীদের শাস্তির দাবিতে হয়েছে মানববন্ধন।
এলাকার একাধিক সূত্র জানায়, আখলাদুল জামে মসজিদে আহলে হাদিস ও আহলে সুন্নাত আল জামাত মুসল্লিদের মধ্যে কমিটি নিয়ে বিরোধ চলছিল। আহলে হাদিসের মুসল্লিরা মসজিদের ইমাম রহিজ উদ্দিনের ঘোর বিরোধিতা করে আসছিলেন। আখলাদুল জামে মসজিদের আহলে সুন্নাত আল জামাত মুসল্লিরা প্রায় দুই মাস আগে রহিজ উদ্দিনকে ইমাম ও খতিব নিয়োগ দেন। এই নিয়োগের পর থেকেই দুই পক্ষের মধ্যে বিরোধ চলে আসছিল। আখলাদুল জামে মসজিদটি প্রতিষ্ঠা করেন ওই এলাকার রিয়াজউদ্দিন। এই মসজিদের পাশে একটি মাজার শরীফ রয়েছে। আহলে হাদিসের মুসল্লীরা এই মাজারের ঘোর বিরোধী ছিলেন। এই মসজিদের মুতওয়ালি শাহাবুদ্দিন পাঠান বলেন, গত রোববার মিথ্যা বলাৎকারের ঘটনা সাজিয়ে মসজিদের ইমাম ও খতিব রহিজ উদ্দিনকে গাছে বেঁধে বেধড়ক মারধর করে পুলিশের সোপর্দ করা হয়।
তিনি বলেন, যারা রহিজ উদ্দিনকে মারধর করে পুলিশে দিয়েছে তারা বলছে গত তিন মাস ধরে মসজিদের ইমাম রহিজ উদ্দিন শিশুদের বিভিন্ন কৌশলে বলাৎকার করে আসছিল। অথচ এই মসজিদে রহিজ উদ্দিনের নিয়োগ দুই মাস হয়নি। সুপরিকল্পিতভাবে তারা এই বলাৎকারের ঘটনা সাজিয়েছে।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে ওই এলাকার একাধিক ব্যক্তি জানায়, আখলা দুল জামে মসজিদের সাধারণ সম্পাদক হাবিবুর রহমান হাবিবের নেতৃত্বে বলাৎকারের অভিযোগ এনে গাছে বেঁধে মসজিদের ইমাম রহিজ উদ্দিনকে বেধড়ক পিটিয়ে পুলিশে সোপর্দ করে এবং মাইজ উদ্দিন নামে এক ব্যক্তিকে তার স্কুলপড়–য়া ছেলে সাদিক কে বলৎকারের অভিযোগ এনে বাদী বানিয়ে পুবাইল থানায় মামলা দায়ের করতে সহযোগিতা করেন।
এ ব্যাপারে মসজিদ কমিটির সাধারণ সম্পাদক হাবিবুর রহমান হাবিব বলেন, এর আগেও মসজিদের ইমাম রহিজ উদ্দিন শিশুদের সাথে একাধিক ঘটনা ঘটিয়েছে। সুনির্দিষ্ট অভিযোগে এলাকাবাসী তাকে সামান্য চর থাপ্পড় দিয়ে পুলিশে সোপর্দ করেছে। পরে মাইজ উদ্দিন বাদী হয়ে তার ছেলেকে বলাৎকারের অভিযোগে মামলা দায়ের করেন। তবে এ ঘটনায় তার নেতৃত্ব দেয়ার কথা তিনি অস্বীকার করেন।
গাজীপুর কারাগারে মৃত্যুবরণকারী রহিজ উদ্দিনের স্ত্রী সাজেদা বেগম জানান, তার স্বামীকে পরিকল্পিতভাবে বলৎকারের অপবাদ দিয়ে পিটিয়ে হত্যা করা হয়েছে। তিনি তার স্বামীথ হত্যা কারীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবি করেন।
কারাগারে মৃত্যুবরণকারী রহিজ উদ্দিনের শ্যালক হাফেজ মাওলানা ওমর ফারুক এ বিষয়ে বলেন, ঘটনার সাথে জড়িতদের বিরুদ্ধে আমরা পুবাইল থানায় মামলা করতে গেলে পুলিশ মামলা নেয়নি। পুলিশ বলছে তদন্ত করে ব্যবস্থা নেবে। গাজীপুর মহানগরীর পুবাইল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি)
আমিরুল ইসলাম জানান, যেহেতু কারাগারে তার মৃত্যু হয়েছে বিষয়টি তদন্ত করে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে।
অপরদিকে মসজিদের ইমাম ও খতিব রহিজ উদ্দিন হত্যাকাÐের সাথে জড়িতদের গ্রেফতার ও দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবিতে টঙ্গীতে মানববন্ধন করেছে আহলে সুন্নাত আল জামায়াত। মানববন্ধনে বক্তারা বলেন, ২৪ ঘণ্টার মধ্যে জড়িতদের গ্রেফতার করে আইনের আওতায় আনা না হলে কঠোর কর্মসূচি দেয়া হবে। এছাড়া বুধবার দুপুরে আহলে সুন্নাত আল জামায়াতের গাজীপুর নেতৃবৃন্দ ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে মসজিদের মুতওয়ালি ও স্থানীয় লোকজনদের সাথে এ বিষয়ে কথা বলেন।
উল্লেখ্য, গত রোববার সকালে গাজীপুর মহানগরীর পুবাইল থানাধীন হায়দরাবাদ এলাকায় স্কুল পড়–য়া এক কিশোরকে বলৎকারের অভিযোগ এনে আখলাদুল জামে মসজিদের ইমাম ও খতিব রহিজ উদ্দিনকে গাছে বেঁধে বেধড়ক পিটুনি দিয়ে এলাকার কতিপয় ব্যক্তি পুলিশে সোপর্দ করে। পরে পুবাইল থানায় মাইজ উদ্দিন নামে এক ব্যক্তি বাদী হয়ে তার ছেলেকে বলাৎকারের অভিযোগ এনে মামলা দায়ের করেন। পুলিশ ওই মামলায় রহিজ উদ্দিনকে গ্রেফতার দেখিয়ে আদালতে প্রেরণ করলে আদালত তাকে গাজীপুর কারাগারে প্রেরণের নির্দেশ প্রদান করেন। ওই দিন রাত ৩টার দিকে কারাগারে সে অসুস্থ হয়ে পড়লে তাকে গাজীপুরের শহীদ তাজউদ্দিন আহমদ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে প্রেরণ করা হয়। এ সময় কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।