Image description

উখিয়ায় আশ্রিত রোহিঙ্গা শিবিরে রোহিঙ্গাদের জন্য দেওয়া হয় দেশি-বিদেশি এনজিও সংস্থার অর্থায়নে নিত্য প্রয়োজনীয় পণ্য সামগ্রী। পরিবারের মাথাপিছু সংখ্যা হিসাব করে এসব নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসপত্রের পাশাপাশি প্রসাধনী, তৈজসপত্র ও বিনোদন সামগ্রীও বিনামূল্যে প্রদান করে যাচ্ছে বিভিন্ন এনজিও সংস্থাগুলো। বিনামূল্যে পাওয়া এ সকল সামগ্রী রোহিঙ্গারা ব্যবহার না করে অন্যত্র বেচা-বিক্রি করে দিচ্ছে প্রতিনিয়ত। এসবের নেপথ্যে রয়েছে স্থানীয় মুনাফালোভী চক্র। রোহিঙ্গাদের রেশনের পণ্যসামগ্রী কম দামে ক্রয় করে নিতে স্থানীয় অসাধু ব্যক্তিদের মধ্যে চলে গ্রুপ ভিত্তিক প্রতিযোগিতা। তাদের মূল চালিকাশক্তি এনজিও- আইএনজিও'র নিয়োগ পাওয়া এজেন্টরা। 

অনুসন্ধানে উঠে এসেছে, রোহিঙ্গাদের ব্যবহারের জন্য যে সকল নিত্যপ্রয়োজনীয় খাদ্যসামগ্রী পায়, তার অধিকাংশ পণ্য চলে যায় মুনাফালোভী অসাধু চক্রের কাছে। এসবের জন্য রোহিঙ্গা এবং স্থানীয়রা মিলে গড়ে তুলেছে ক্রয় বিক্রয় সিন্ডিকেট। ২০১৭ সালে রোহিঙ্গা আসার পর কোন পরিবারের ৮/১০ জন সদস্য ছিল। সেভাবেই তারা নিবন্ধিত হয়।
পরবর্তীতে ব্লক ও ক্যাম্প স্থানান্তরিত হয়ে অসংখ্য রোহিঙ্গা একাধিক রেশন কার্ডে নিবন্ধন করে। আবার অনেকে মালয়েশিয়া, সৌদি আরব, থাইল্যান্ডসহ বিভিন্ন দেশে বৈধ ও অবৈধভাবে চলে যায়। কিন্তু তাদের নামে নিয়মিত রেশন ও অন্যান্য ত্রাণ সামগ্রী উত্তোলন বন্ধ হয়নি। তাদের চাহিদার তুলনায় বেশি পাচ্ছে রেশন। সেখানে ক্যাম্প কেন্দ্রিক ব্লকের মাঝিরাও জড়িত রয়েছে বলে জাবা গেছে।

বিশেষ করে চাল, ডাল, তেল, ডিম, মাছ, মুরগী, শুকনো মাছ,সাবান, প্রভৃতি নিত্য প্রয়োজনীয় পণ্য ক্রয় বিক্রয়ের একাধিক সিন্ডিকেট সক্রিয় রয়েছে। তারা এসব পণ্য কম দামে ক্রয় করে গুদামজাত করে। পরবর্তীতে একই সামগ্রী নির্দিষ্ট একটি মুনাফা নিয়ে পুনরায় ভেন্ডরদের হস্তান্তর করেন।

 

বিশ্ব খাদ্য কর্মসূচির অর্থায়নে নিবন্ধিত প্রত্যেক রোহিঙ্গার নিয়মিত উপরিউক্ত মালামাল বিতরণ করা হয়। আর এসব পণ্য বিতরণে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে একাধিক ভেন্ডর। ভেন্ডররা যোগসাজশে ত্রাণের এসব মালামালগুলো ক্রয় বিক্রয়ের সিন্ডিকেটগুলোর আশ্রয়-প্রশ্রয়দাতা হিসাবে কাজ করেন। উচ্চ মূল্যে এসব সামগ্রী ভেন্ডররা বিভিন্ন উন্নয়ন সহযোগী সংস্থার মাধ্যমে রোহিঙ্গাদের বিতরণ করে। উদ্বৃত্ত বা অতিরিক্ত পণ্য সামগ্রী কম মূল্যে তারাই আবার রোহিঙ্গাদের মাধ্যমে ক্রয় করে গুদামজাত করে ফের রোহিঙ্গাদের বিতরণ করে। প্রতিটি ক্যাম্পে রোহিঙ্গা এবং স্থানীয় চিহ্নিত একটি প্রভাবশালী সিন্ডিকেট এসবের লেনদেন ঘটান।
কুতুপালং, বালুখালী, থাইংখালী এরিয়াতে অধিকাংশ ক্যাম্পগুলোতে রয়েছে এসব ত্রাণ চোর সিন্ডিকেটের গুদাম। এসব গুদাম মজুদাগার হিসাবে প্রাথমিকভাবে উঠে এসেছে স্থানীয় চক্রদের নাম। থাইংখালীতে রয়েছে, জয়নাল মেম্বার, নুরুল হাকিম প্রকাশ মনিয়া। রোহিঙ্গা লেবার দিয়ে এসব কালোবাজারিরা প্রতিটি ক্যাম্প হতে পণ্যসামগ্রী সংগ্রহ করে বিভিন্ন বড় বড় দোকান এবং ভাসমান দোকানে বেচা-বিক্রি করেন। ঐসব স্থান থেকে অনেক সময় ভেন্ডররাও অল্প দামে পণ্য সংগ্রহ করে বেশি দামে রোহিঙ্গাদের বিতরণ করেন।

 

পালংখালী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান এম গফুর উদ্দিন চেয়ারম্যান বলেন, রোহিঙ্গারা  তাদের ত্রাণ গুলো অন্য জায়গায় বিক্রি করছে বলে স্থানীয় সিন্ডিকেটরা সুযোগ পাই। ফ্রি জিনিসের মূল্য থাকেনা। সেই কারণে তারা এসবকে দাম দেয় না। 

এদিকে রোহিঙ্গা ক্যাম্পে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর দায়িত্বে থাকা এপিবিএন পুলিশের একাধিক সূত্র বলছে, রোহিঙ্গারা ক্যাশ টাকার জন্য মূলত তাদের ত্রাণ গুলো অন্য জায়গায় বিক্রি করে দেয়। এসবের জন্য এনজিও সংস্থাগুলোকেও দায়ী করছেন তারা।

শরণার্থী ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশনার (অতিরিক্ত সচিব) মোহাম্মদ মিজানুর রহমান জানান, রোহিঙ্গারা এসব ত্রাণ ক্রয় বিক্রয় ঘটাতে গিয়ে তারা নিজেদের ক্ষতি করছে। নিজেরা নিজেদের ক্ষতি চাইলে অন্যরা কি করবে। তারপরও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে এসবের জন্য কঠোর হতে বলা আছে।