Image description

চলতি বছরের শুরুতে সারা দেশে কারণ খুন, ধর্ষণ, ডাকাতি এবং চাঁদাবাজির ঘটনা ভয়াবহভাবে বেড়ে যাওয়ার পরিপ্রেক্ষিতে ফেব্রুয়ারির শুরুর দিকে অন্তবর্তী সরকারের নির্দেশে ‘অপারেশন ডেভিল হান্ট’ শুরু করে আইনশৃঙ্খলাবাহিনী। এসময় নিরাপত্তা নিয়ে ভয় বাড়ার পাশাপাশি আইনশৃঙ্খলা সংক্রান্ত ভুল তথ্যও ব্যাপকভাবে বেড়েছে।

আজ শুক্রবার তথ্য যাচাইকারী প্রতিষ্ঠান ডিসমিসল্যাব এক প্রতিবেদনে এসব তথ্য জানিয়েছে। সংস্থাটির ত্রৈমাসিক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ২০২৪ সালের শেষ প্রান্তিকে আইনশৃঙ্খলা সম্পর্কিত ভুল তথ্য ছিল ১ শতাংশ। ২০২৫ সালের প্রথম প্রান্তিকে তা বেড়ে ৯ শতাংশে উন্নীত হয়েছে। সংখ্যার হিসেবে, গত প্রান্তিকে এ ধরনের ভুল তথ্য ছিল মাত্র ১১টি। সেটি এ বছরের প্রথম তিন মাসে ৭ গুন বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৭৭টিতে। ২০২৫ সালের প্রথম তিন মাসে বাংলাদেশ সংশ্লিষ্ট আটটি ফ্যাক্টচেকিং ওয়েবসাইটে প্রকাশিত প্রতিবেদন বিশ্লেষণ করে এমন চিত্র পেয়েছে ডিসমিসল্যাব।

ডিসমিসল্যাবের গবেষণায় দেখা গেছে, তথ্য যাচাইয়ের ক্ষেত্রে রাজনীতিই বাংলাদেশে প্রধান বিষয়। চলতি বছরের প্রথম তিন মাসে যাচাই করা তথ্যের প্রায় অর্ধেকই—৪৫ শতাংশ রাজনীতি সম্পর্কিত ছিল। এরপর ছিল ধর্ম সংক্রান্ত ভুল তথ্য ১৩ শতাংশ, যা আগের প্রান্তিকের তুলনায় সামান্য কম।

জানুয়ারি থেকে মার্চ—এই তিন মাসে আটটি তথ্য যাচাই সংস্থা ১ হাজার ২৩৬টি তথ্য যাচাইয়ের প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে। এর মধ্যে স্বতন্ত্র ভুল তথ্যের বিষয় পাওয়া গেছে ৮৬৭টি, যা আগের প্রান্তিকে রেকর্ড করা ৮১৬টির তুলনায় সামান্য বেশি।

বেড়েছে অপরাধ-সম্পর্কিত ভুল তথ্য
চলতি বছরের প্রথম তিন মাসে প্রচারিত খুন, ধর্ষণ, ছিনতাই এবং ডাকাতি সংক্রান্ত খবর ছিল ৭০ শতাংশ। এর মধ্যে বেশ কয়েকটি ঘটনা ছিল ভারতের, যা বাংলাদেশের বলে ভুলভাবে প্রচার করা হয়েছে। ফেব্রুয়ারিতে একটি ইউটিউব চ্যানেলে হোটেল থেকে লাফিয়ে পড়া এক ভিডিও প্রচার করে বাংলাদেশের বলে দাবি করা হয়, কিন্তু সেটি ছিল মূলত ইন্দোনেশিয়ার। এ ছাড়া বাংলাদেশের অনেক পুরোনো ঘটনার ভিডিও সাম্প্রতিক বলে প্রচার করা হয়েছে।

 

এসব ভিডিও যাচাই করে ডিসমিসল্যাব বলেছে, গত বছরের শেষ তিন মাসের তুলনায় চলতি বছরের প্রথম তিন মাসে অপরাধ সংক্রান্ত ভুল তথ্যের প্রচার তীব্র হয়েছে। গত বছেরর শেষ প্রান্তিকে যা ছিল ১ শতাংশ, এ বছরের প্রথম প্রান্তিকে তা ৯ শতাংশ উন্নীত হয়েছে।

রাজনৈতিক ভুল তথ্য
চলতি বছরের প্রথম প্রান্তিকে যাচাই করা ভুল তথ্যের ৪৫ শতাংশই রাজনৈতিক। আগের বছরেও রাজনীতি সংক্রান্ত ভুল তথ্য প্রচারিত হয়েছে। বিভিন্ন রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে সবচেয়ে বেশি ভুল তথ্য ছড়িয়েছে আওয়ামী লীগ (৩৪.৮%) ও অন্তর্বর্তীকালীন সরকারকে (২১.৮%) কেন্দ্র করে। তবে ভুল তথ্যের ভাষ্য বিশ্লেষণে দেখা যায় আওয়ামী লীগকে কেন্দ্র করে প্রচারিত ভুল তথ্যগুলোর অধিকাংশই (৬৮%) ছিল ইতিবাচক। অন্যদিকে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার, বিএনপি, জামায়াত-শিবির ও সমন্বয়কদের নিয়ে ছড়ানো অধিকাংশ ভুল তথ্য ছিল নেতিবাচক।

ধর্ম সম্পর্কিত ভুল তথ্য
ধর্ম সম্পর্কিত ভুল তথ্যের সংখ্যা এই প্রান্তিকে এসে কিছুটা কমেছে। গত বছরের শেষ প্রান্তিকে ধর্ম সংক্রান্ত ভুল তথ্যের পরিমাণ ছিল মোট যাচাইকৃত ভুল তথ্যের ১৮ শতাংশ, যা চলতি বছরের প্রথম প্রান্তিকে কমে দাড়িয়েছে ১৩ শতাংশে। তবে এর ধরন ছিল একই রকমের। যেসন পুরোনো বা সম্পাদিত ছবি-ভিডিও সাম্প্রতিক বলে প্রচার করা। কখনো প্রেক্ষাপট পরিবর্তন করে ভুল তথ্য প্রচার কিংবা ভারতের ছবি-ভিডিও বাংলাদেশের দাবিতে প্রচার করা হয়েছে। ৫ আগস্টের পর থেকে বাংলাদেশে সংখ্যালঘু নির্যাতন সংক্রান্ত যেসব ভুয়া দাবি ছড়াতে দেখা গেছে, এ বছরের প্রথম তিন মাসেও প্রায় একই ধরনের ভুল তথ্য ছড়িয়েছে।

বেড়েছে গণমাধ্যমে প্রকাশিত ভুল তথ্য 
বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমে প্রকাশিত ভুল তথ্যের পরিমাণ বাড়তে দেখা গেছে এ বছরের প্রথম প্রান্তিকে। ২০২৪ সালের চতুর্থ প্রান্তিকে গণমাধ্যমে প্রকাশিত ভুল তথ্য নিয়ে প্রকাশিত হয়েছিল ২৭টি ফ্যাক্টচেক প্রতিবেদন। সেখানে এ বছরের প্রথম তিন মাসে এই সংখ্যা দ্বিগুন বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৫৪টিতে। গণমাধ্যমে প্রকাশিত এসব ভুল তথ্যের ২৪ শতাংশ ছিল রাজনীতি সংশ্লিষ্ট। 

ভুল তথ্য বেশি ছড়িয়েছে ভিডিওর মাধ্যমে
বাংলাদেশে বরাবরই বেশি ভুল তথ্য ছড়াতে দেখা যায় ভিডিওর মাধ্যমে। এ বছরের প্রথম প্রান্তিকেও ভিডিওর মাধ্যমে ছড়িয়েছে ৪২ শতাংশ ভুল তথ্য। এরপরে ছবি সংক্রান্ত ২৫ শতাংশ ও গ্রাফিক কার্ড সংক্রান্ত ১৯ শতাংশ ভুল তথ্য।

সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে সংবাদ প্রচারের জন্য সংবাদমাধ্যমগুলো যে ধরনের ফটোকার্ড ব্যবহার করে, সেগুলো সম্পাদনা করে ভুল তথ্য ছড়ানোর একটি প্রবণতা দেখা যায় বাংলাদেশে। এবারের প্রান্তিকেও ১২৫টি ভুল তথ্য ছড়ানো হয়েছে সংবাদমাধ্যমের সোশ্যাল মিডিয়া ফটোকার্ড সম্পাদনা করে। এসব ভুল তথ্যের ৭১ শতাংশ ছিল রাজনীতি সংশ্লিষ্ট।