Image description

৩০ কোটি টাকার কাজ বাগিয়ে নিতে তৎপর ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান। অন্যদিকে, অবৈধভাবে কাজ পাইয়ে দিতে সংশ্লিষ্ট প্রকল্প পরিচালকের আগ্রহও বেশ। কিন্তু উভয়ের মাঝে বাধা হয়ে দাঁড়ান মূল্যায়ন কমিটির আহ্বায়ক। অসত্যের কাছে কভু নত নাহি হবে শির। অবশেষে মূল্যায়ন কমিটির আহ্বায়ক হয়ে গেলেন ‘ফ্যাসিস্টদের দোসর’।

সম্প্রতি স্থানীয় সরকার বিভাগের আওতাধীন জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরের (ডিপিএইচই) একটি টেন্ডার প্রক্রিয়ায় এমন ঘটনা ঘটে। বিষয়টি সংশ্লিষ্ট মহলে বেশ বিতর্কের জন্ম দেয়। শুধু ‘ফ্যাসিস্টদের দোসর’ অপবাদ দিয়েই ক্ষান্ত হননি ওই ঠিকাদার। ভুয়া সনদের বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি এ প্রতিবেদককে হুমকি দিয়ে বলেন, ‘আমি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ডিগ্রি নিয়ে ব্যবসা করতে এসেছি। ব্যাকগ্রাউন্ড কিন্তু অনেক শক্ত।’

সর্বশেষ আটকে দেওয়া হয়েছে টেন্ডার প্রক্রিয়া। বিষয়টি নিয়ে বাংলাদেশ পাবলিক প্রকিউরমেন্ট অথরিটি (বিপিপিএ) শুনানি করেছে। তাদের মতামতের ভিত্তিতে পরবর্তী পদক্ষেপ গ্রহণ করা হবে।

সম্প্রতি স্থানীয় সরকার বিভাগের আওতাধীন জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরের (ডিপিএইচই) একটি টেন্ডার প্রক্রিয়ায় এমন ঘটনা ঘটে। বিষয়টি সংশ্লিষ্ট মহলে বেশ বিতর্কের জন্ম দেয়। শুধু ‘ফ্যাসিস্টদের দোসর’ অপবাদ দিয়েই ক্ষান্ত হননি ওই ঠিকাদার। ভুয়া সনদের বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি এ প্রতিবেদককে হুমকি দিয়ে বলেন, ‘আমি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ডিগ্রি নিয়ে ব্যবসা করতে এসেছি। ব্যাকগ্রাউন্ড কিন্তু অনেক শক্ত।’
 

টেন্ডার নোটিশ থেকে জানা যায়, গত বছরের ২০ অক্টোবর ‘পানির গুণগতমান পরীক্ষা ব্যবস্থাপনা শক্তিশালীকরণ’ প্রকল্পে ই-জিপিতে (ই–গভর্নমেন্ট প্রকিউরমেন্ট) টেন্ডার আহ্বান করে স্থানীয় সরকার বিভাগের আওতাধীন জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তর (ডিপিএইচই)। যার টেন্ডার আইডি নম্বর- ১০২৬৫৭৩। এটি উন্মুক্ত করা হয় গত বছরের ১১ নভেম্বর। যার মাধ্যমে প্রকল্পের জন্য প্রায় ২৫ ধরনের ইক্যুইপমেন্ট (যন্ত্রপাতি) কেনার কথা।

dhakapost
গত বছরের ২০ অক্টোবর ‘পানির গুণগতমান পরীক্ষা ব্যবস্থাপনা শক্তিশালীকরণ’ প্রকল্পে ই-জিপিতে (ই–গভর্নমেন্ট প্রকিউরমেন্ট) টেন্ডার আহ্বান করা হয় / ফাইল ছবি

সেগুলো হলো- ১. ইউভি-ভিসিবল স্পেকট্রোফটোমিটার (ডাবল বিম), ২. ডিস্টিলেশন ইউনিট, ৩. ল্যাবরেটরি ফিউম হুড, ৪. সাইন্টিফিক/ফার্মেসি/মেডিকেল রেফ্রিজারেটর, ৫. ব্যালেন্স (রাফ), ৬. ব্যালেন্স (অ্যানালিটিক্যাল) উইথ অটো ইন্টারনাল ক্যালিব্রেশন, ৭. মেমব্রেন ফিল্টারেশন ইউনিট উইথ ভ্যাকুয়াম পাম্প, ৮. পোর্টেবল পিএইচ মিটার উইথ ওআরপি প্রোব ইনক্লুডিং লং ক্যাবল, ৯. মাল্টিমিটার (পিএইচ, ইসি, টিডিএস, স্যালিনিটি, ডিও, ওআরপি, টেম্প, ফ্লোরাইড), ১০. বেঞ্চটপ আয়ন সিলেক্টিভ মিটার, ১১. সিওডি রিঅ্যাক্টর উইথ ফিফটি ভাইটালস, ১২. ম্যাগনেটিক স্টেরার উইথ হট প্লেট, ১৩. ভর্টেক্স মিক্সচার, ১৪. হট ওয়াটার বাথ উইথ থার্মোস্ট্যাট, ১৫. ওপেন এয়ার প্ল্যাটফর্ম শেকার উইথ ইউনিভার্সাল প্ল্যাটফর্ম অ্যান্ড ক্ল্যাম্প, ১৬. আলট্রাসনিক পিপেট ওয়াশার, ১৭. আলট্রাসনিক বাথ, ১৮. মাইক্রোপ্রসেসর কন্ট্রোলড ডিজিটাল ওভেন, ১৯. টারবিডিটি মিটার, ২০. ডিফারেন্ট কিট (১ লট), ফিজিকো-কেমিক্যাল অ্যান্ড ব্যাকটেরিয়াল কিট, ২১. অনলাইন আনইনটারাপ্টেড পাওয়ার সাপ্লাই (ইউপিএস), ২২. ইনকিউবেটর (বিওডি, এফসি, টিসি, ই-কোলাই), ২৩. ২ টন এয়ার কন্ডিশনার (এসি), ২৪. অনলাইন আনইনটারাপ্টেড পাওয়ার সাপ্লাই (ইউপিএস) এবং ২৫. ২ টন এয়ার কন্ডিশনার (এসি)।

 

মোট ছয়টি প্রতিষ্ঠান (কোম্পানি) টেন্ডার আহ্বানে সাড়া দিয়ে অংশগ্রহণ করে। প্রতিষ্ঠানগুলো হলো- ১. রোজ মাক১ ট্রেড ইন্টারন্যাশনাল, উল্লিখিত দর ২৫ কোটি ৩৯ লাখ টাকা, ২. সানজিদা ট্রেডিং কম., ২৫ কোটি ৪৫ লাখ টাকা, ৩. এম/এস বেলাল এন্ড ব্রাদার্স, ২৫ কোটি ৫২ লাখ টাকা, ৪. ওএমসি লিমিটেড, ২৫ কোটি ৭০ লাখ টাকা, ৫. মার্কস ট্রেডিং লিমিটেড, ২৬ কোটি ৮০ লাখ টাকা এবং ৬. বাংলাদেশ অ্যাডভান্স টেকনোলজিস, তাদের উল্লিখিত দর ২৭ কোটি ৭৯ লাখ টাকা।

বিপিপিএ-এর মতামতে জানানো হয়, দরপত্র উপাত্ত শিট (পিডিএস)-এ বর্ণিত শর্তানুযায়ী সরবরাহকারী হিসেবে অভিজ্ঞতা দরপত্রদাতার সাধারণ বা বিশেষ অভিজ্ঞতা হিসেবে বিবেচিত হবে। ‘লোকাল এজেন্ট’-এর ভূমিকা মূলত সরবরাহকারীর পক্ষে চুক্তি বাস্তবায়নে সহায়ক ভূমিকা পালন করে বিধায় ‘লোকাল এজেন্ট’ হিসেবে কাজের অভিজ্ঞতাকে ‘স্পেসিফিক এক্সপেরিয়েন্স’ হিসেবে বিবেচনা করার সুযোগ নেই

অভিযোগ ওঠে, প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে সর্বোচ্চ দরদাতা ‘বাংলাদেশ অ্যাডভান্স টেকনোলজিস’ প্রতিষ্ঠানকে কাজ দিতে নানাভাবে চাপ আসতে থাকে। যদিও টেন্ডার নোটিশের বিভিন্ন শর্ত অনুযায়ী একটি প্রতিষ্ঠানও উপযুক্ত হিসেবে বিবেচিত হয়নি। যথাযথ কাগজপত্র জমা দিতে না পারলেও সর্বোচ্চ দরদাতা ‘বাংলাদেশ অ্যাডভান্স টেকনোলজিস’ প্রতিষ্ঠানটি লোকাল এজেন্ট সনদে যেকোনো উপায়ে কাজ পেতে তোড়জোড় শুরু করে। কাগজপত্র ঠিক না থাকলেও প্রতিষ্ঠানটিকে কাজ পাইয়ে দিতে প্রকল্প পরিচালক মুন্সী মো. হাচানুজ্জামানও বেশ আগ্রহ দেখান। তবে, মূল্যায়ন কমিটির আহ্বায়ক জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরের অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী জহির উদ্দিন দেওয়ান বাধা হয়ে দাঁড়ান। তিনি কোনোভাবেই অন্যায়ের কাছে মাথা নত করতে চান না। ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান নানাভাবে প্রলোভন দেখালেও তিনি তার নীতিতে অটল থাকেন।

ঠিকাদারের সনদ বিবেচনার সুযোগ নেই, বিপিপিএ-এর সুস্পষ্ট মতামত

এর আগে বাংলাদেশ পাবলিক প্রকিউরমেন্ট অথরিটির (বিপিপিএ) কাছে লোকাল এজেন্টের সনদ বিবেচনায় নিয়ে ওই ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানকে কাজ দেওয়া যাবে কি না, এ সংক্রান্ত বিষয়ের ওপর মতামত জানতে চেয়েছিল জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তর। বিষয়টি আমলে নিয়ে সুস্পষ্ট মতামত দেয় বিপিপিএ।

dhakapost
ভুয়া সনদে কাজ পাইয়ে দিতে বিপিপিএ-তে ঠিকাদারের পক্ষে তদবির করার অভিযোগ উঠেছে প্রকল্প পরিচালক ও মূল্যায়ন কমিটির সদস্যের বিরুদ্ধে / প্রতীকী ছবি

বিপিপিএ-এর দায়িত্বশীল কর্মকর্তা ঢাকা পোস্টকে জানান, ‘পানির গুণগতমান পরীক্ষা ব্যবস্থা শক্তিশালীকরণ’ প্রকল্পের ১০২৬৫৭৩-এর টেন্ডার আইডির বিষয়ে মতামত জানতে চেয়েছিল সংশ্লিষ্ট দপ্তর। তাদের জানতে চাওয়ার পরিপ্রেক্ষিতে পণ্য ও সংশ্লিষ্ট সেবা ক্রয়ের ক্ষেত্রে দরপত্রে অংশগ্রহণকারী দরপত্রদাতার লোকাল এজেন্ট হিসেবে দাখিলকৃত ‘স্পেসিফিক এক্সপেরিয়েন্স’ বিবেচনার বিষয়ে মতামত দিয়েছে বিপিপিএ।

 

বিপিপিএ-এর মতামতে জানানো হয়, দরপত্র উপাত্ত শিট (পিডিএস)-এ বর্ণিত শর্তানুযায়ী সরবরাহকারী হিসেবে অভিজ্ঞতা দরপত্রদাতার সাধারণ বা বিশেষ অভিজ্ঞতা হিসেবে বিবেচিত হবে। ‘লোকাল এজেন্ট’-এর ভূমিকা মূলত সরবরাহকারীর পক্ষে চুক্তি বাস্তবায়নে সহায়ক ভূমিকা পালন করে বিধায় ‘লোকাল এজেন্ট’ হিসেবে কাজের অভিজ্ঞতাকে ‘স্পেসিফিক এক্সপেরিয়েন্স’ হিসেবে বিবেচনা করার সুযোগ নেই। ডিপিএইচই-কে পাঠানো বিপিপিএ-এর চিঠিটি ঢাকা পোস্টের কাছে সংরক্ষিত আছে।

সেখানে আরও উল্লেখ করা হয়, টেন্ডার নোটিশের শর্তানুযায়ী চারটি কাজে সরাসরি ২০ কোটি টাকার অভিজ্ঞতা চাওয়া হয়েছে। কিন্তু বাংলাদেশ অ্যাডভান্স টেকনোলজিস তিনটি কাজে প্রায় ১৫ কোটি টাকার সরাসরি অভিজ্ঞতা দেখালেও একটি কাজে লোকাল এজেন্ট হিসেবে প্রায় সাত কোটি টাকার অভিজ্ঞতা সনদ দাখিল করেছে। লোকাল এজেন্টের এ সনদ কোনোভাবেই বিবেচনার সুযোগ নেই বলে স্পষ্টভাবে ডিপিএইচই-কে জানিয়েছে বাংলাদেশ পাবলিক প্রকিউরমেন্ট অথরিটি।

ভুয়া সনদে কাজ দিতে বিপিপিএ-তে ঠিকাদারের পক্ষে পিডির তদবির

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বিপিপিএ-এর এক কর্মকর্তা ঢাকা পোস্টকে বলেন, ওই ঠিকাদারের পক্ষে জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরের প্রকল্প পরিচালক হাচানুজ্জামান বাংলাদেশ পাবলিক প্রকিউরমেন্ট অথরিটিতে (বিপিপিএ) বেশ কয়েকবার তদবির করেছেন। পিডি ঠিকাদারকে সঙ্গে নিয়ে এখানে আসতেন। যথাসাধ্য চেষ্টাও করেছেন। কিন্তু বিপিপিএ আইনের বাইরে গিয়ে কারও পক্ষে সিদ্ধান্ত বা মতামত দিতে পারে না।

রোহিঙ্গা প্রকল্পেও সময়মতো মালামাল দেয়নি অ্যাডভান্স টেকনোলজিস

রোহিঙ্গা সংকট মোকাবিলায় জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরের ‘মাল্টি সেক্টর’ প্রকল্পে সময়মতো মালামাল সরবরাহ না করার অভিযোগ রয়েছে বাংলাদেশ অ্যাডভান্স টেকনোলজিস-এর বিরুদ্ধে। ২০২৪ সালের ১১ এপ্রিলের মধ্যে প্রতিষ্ঠানটির মালামাল সরবরাহের কথা থাকলেও তা করতে ব্যর্থ হয়। পরবর্তীতে একাধিকবার তাগাদা দিলেও প্রতিষ্ঠানটি যোগাযোগ করেনি। ফলে পরীক্ষাগারের কার্যক্রম বিঘ্নিত হচ্ছে। এ বিষয়ে তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী চিঠির মাধ্যমে প্রধান প্রকৌশলীকে বিস্তারিত জানান। ওই চিঠির একটি কপি ঢাকা পোস্টের কাছে সংরক্ষিত আছে।

dhakapost
বাংলাদেশ অ্যাডভান্স টেকনোলজিস-এর সত্ত্বাধিকারী মো. আব্দুস সালাম / ছবি- সংগৃহীত

চার ক্যাটাগরির ত্রুটিপূর্ণ মালামাল সরবরাহ

‘পানির গুণগতমান পরীক্ষা ব্যবস্থা শক্তিশালীকরণ’ প্রকল্পে চার ক্যাটাগরির ত্রুটিপূর্ণ মালামাল সরবরাহ করে ‘বাংলাদেশ অ্যাডভান্স টেকনোলজিস’। মালামাল যাচাইয়ে গঠিত চার সদস্যের কমিটি এ ত্রুটি চিহ্নিত করে এবং সবগুলো মাল পরিবর্তনের সুপারিশ করে। তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলীর নেতৃত্বে গঠিত কমিটি তাদের প্রতিবেদনে এ তথ্য জানায়। প্রতিবেদনটি ঢাকা পোস্টের কাছে সংরক্ষিত রয়েছে।

 

‘ফ্যাসিস্টদের দোসর’ বলে ঠিকাদারের হুমকি

উত্থাপিত অভিযোগের বিষয়ে বাংলাদেশ অ্যাডভান্স টেকনোলজিস-এর স্বত্বাধিকারী মো. আব্দুস সালামের সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়। তিনি ঢাকা পোস্টকে বলেন, ‘সর্বোচ্চ দরদাতা হিসেবে কাজটি পাওয়ার দাবিদার আমি। দীর্ঘ ২০ থেকে ২২ বছর ধরে ব্যবসা করি। আমরা জানি কোন টেন্ডারের মধ্যে কী আছে। আমার অভিজ্ঞতার সনদ বাংলাদেশ পাবলিক প্রকিউরমেন্ট অথরিটির রিভিউ প্যানেল ক্লিয়ার করে দিয়েছে। আমরা তো আইনের ঊর্ধ্বে নই। পিপিআর-২০০৮ এর ৬০ (৫) ধারায় বলা আছে, রিভিউ প্যানেলের সিদ্ধান্তই চূড়ান্ত। এ সিদ্ধান্ত সকল পক্ষ মেনে নেবে। এছাড়া, আইএমইডি-এর একটি পরিপত্র আছে। সেখানেও বলা আছে, রিভিউ প্যানেলের সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত এবং বাদ দেওয়ার কোনো সুযোগ নেই।’

ভুয়া সনদে কাজ পাইয়ে দিতে বিপিপিএ-তে ঠিকাদারের পক্ষে তদবির করার অভিযোগ উঠেছে প্রকল্প পরিচালক ও মূল্যায়ন কমিটির সদস্য মুন্সী মো. হাচানুজ্জামানের বিরুদ্ধে। অভিযোগের বিষয়ে জানতে তার মোবাইল ফোনে একাধিকবার কল দেওয়া হয়। কিন্তু তিনি রিসিভ করেননি। পরে হোয়াটসঅ্যাপে যোগাযোগ করা হয় এবং অভিযোগের বিষয়ে লিখিত বক্তব্য চাওয়া হলেও তিনি সাড়া দেননি

তিনি বলেন, ‘আমি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ডিগ্রি নিয়ে ব্যবসা করতে এসেছি। ব্যাকগ্রাউন্ড কিন্তু অনেক শক্ত। আমরা বুঝি কোন কাগজে কী লেখা আছে। প্রকল্পের চার টেন্ডারে ২০ কোটি টাকার কাজের অভিজ্ঞতা চাওয়া হয়েছে। সেটা আমার আছে। পাশাপাশি ২৫ কোটি টাকার ক্রেডিট লাইন দিয়েছে। এখন আমার ওপর অন্যায় করা হচ্ছে এবং অবিচার করা হচ্ছে।’  

‘এই বৈষম্যবিরোধী বাংলাদেশে বৈষম্যের শিকার হবো, মেনে নেওয়া যায় না। আমি আদালতের দ্বারস্থ হয়েছি। মাননীয় হাইকোর্ট যেটা ভালো মনে করেন...।’ এরপর ঠিকাদার এ প্রতিবেদককে ‘ফ্যাসিস্টদের দোসর’ বলে হুমকি দিতে থাকেন।

dhakapost
প্রকল্প পরিচালক ও মূল্যায়ন কমিটির সদস্য মুন্সী মো. হাচানুজ্জামান / ছবি- সংগৃহীত

বক্তব্য চেয়ে সাড়া মেলেনি প্রকল্প পরিচালকের

ভুয়া সনদে কাজ পাইয়ে দিতে বিপিপিএ-তে ঠিকাদারের পক্ষে তদবির করার অভিযোগ উঠেছে প্রকল্প পরিচালক ও মূল্যায়ন কমিটির সদস্য মুন্সী মো. হাচানুজ্জামানের বিরুদ্ধে। অভিযোগের বিষয়ে জানতে তার মোবাইল ফোনে একাধিকবার কল দেওয়া হয়। কিন্তু তিনি রিসিভ করেননি। পরে হোয়াটসঅ্যাপে যোগাযোগ করা হয় এবং অভিযোগের বিষয়ে লিখিত বক্তব্য চাওয়া হলেও তিনি সাড়া দেননি। উল্টো প্রকল্প পরিচালক ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের মালিককে দিয়ে এ প্রতিবেদককে ভয়ভীতি দেখান।

 

বিপিপিএ থেকে মতামত পেলে প্রতিবেদন দেব : মূল্যায়ন কমিটির সদস্য

স্থানীয় সরকার বিভাগের পানি সরবরাহ-১ শাখার উপসচিব ও মূল্যায়ন কমিটির সদস্য মো. হাসান হাবিব ঢাকা পোস্টকে বলেন, ‘বাংলাদেশ পাবলিক প্রকিউরমেন্ট অথরিটিতে (বিপিপিএ) ওই টেন্ডার নিয়ে গত ১৭ মার্চ শুনানি হয়েছে। এখনও বিপিপিএ থেকে কোনো চিঠি আসেনি। বিপিপিএ তাদের মতামত জানানোর পর আমরা মূল্যায়ন প্রতিবেদন দেব। বিপিপিএ থেকে প্রতিবেদন না আসা পর্যন্ত কথা বলতে পারব না। আপাতত এ টেন্ডারের কাজ স্থগিত রাখা হয়েছে।’

ভয়ভীতি দেখিয়ে কাজ পাওয়ার সুযোগ নেই : মূল্যায়ন কমিটির আহ্বায়ক

জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরের অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী (পানি সম্পদ) ও মূল্যায়ন কমিটির আহ্বায়ক মো. জহির উদ্দিন দেওয়ান ঢাকা পোস্টকে বলেন, ‘পানির গুণগতমান পরীক্ষা ব্যবস্থাপনা শক্তিশালীকরণ’ প্রকল্পের একটি টেন্ডারে মূল্যায়ন কমিটির আহ্বায়ক করা হয়েছে আমাকে। আমরা এখনও মূল্যায়ন রিপোর্ট জমা দিইনি। তবে, খুব শিগগিরই দেওয়া হবে। পাবলিক প্রকিউরমেন্ট আইন ও বিধি অনুসারে মূল্যায়ন করতে আমরা বদ্ধপরিকর।’

dhakapost
আইনের ব্যত্যয় হলে দুদককে জানানো উচিত : অধ্যাপক এনামুল হক / ছবি- ঢাকা পোস্ট

ভুয়া সনদে ৩০ কোটি টাকার কাজটি পেতে নানাভাবে আপনাদের ওপর চাপ প্রয়োগ করা হচ্ছে— এমন অভিযোগ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, “চেষ্টা থাকে সততা ও নিষ্ঠার সঙ্গে কাজ করার। অনিয়মকে কখনও প্রশ্রয় দিইনি এবং দিবও না। পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে অন্যায়ের বিরুদ্ধে কাজ করার অধিকতর সুযোগ তৈরি হয়েছে। তারা আমাকে ‘ফ্যাসিস্টদের দোসর’ আখ্যা দিয়েছে। যতই চাপ সৃষ্টি করুক কিংবা ভয়ভীতি দেখাক, বিধি লঙ্ঘনের মাধ্যমে কাজ নেওয়ার কোনো সুযোগ নেই। এখন এর বেশি আর কিছু বলতে পারব না।”

 

আইনের ব্যত্যয় হলে দুদককে জানানো উচিত : অধ্যাপক এনামুল হক 

ভুয়া সনদে কাজ পাওয়ার বিষয়ে ইউসিএসআই ইউনিভার্সিটির ডেপুটি ভাইস চ্যান্সেলর অধ্যাপক এ কে এনামুল হক ঢাকা পোস্টকে, যেকোনো টেন্ডারে আইনের ব্যত্যয় হলে, সেটা গ্রহণযোগ্য হতে পারে না। যদি আইনের ব্যত্যয় হয়, তাহলে এটা নিয়ে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ তদন্ত করতে পারে। বর্তমানে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) খুবই অ্যাকটিভ। ঠিকাদার অথবা মূল্যায়ন কমিটির কেউ যদি কাজ পেতে আইনের ব্যত্যয়কে সমর্থন করেন তাহলে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ দুদকে অভিযোগ করতে পারে। দুদক অভিযোগ পেলে অ্যাকশনে চলে যাবে।

এক প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, ‘বিপিপিএ সুস্পষ্ট মতামত দেওয়ার পরও অনৈতিকভাবে চেষ্টা করা উচিত নয়। যদি টেন্ডারে অভিজ্ঞতা সনদ বাধ্যতামূলক হয় এবং সনদ যদি ভুয়া হয়, তাহলে কিন্তু সেটা আইনের ব্যত্যয় হয়। কর্মকর্তারা যদি বর্তমান সরকারের আমলে এমন অনৈতিক কাজ করেন কিংবা কাজ পাইয়ে দিতে প্রভাবিত করেন, সেটা তো আরও ভয়ংকর। আমার মনে হয়, সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে প্রচলিত আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া প্রয়োজন।’