Image description

রাজশাহী অঞ্চলে বেড়েছে আত্মহননের সংখ্যা। বয়ো বৃদ্ধ থেকে শুরু করে কিশোর-কিশোরী কিংবা তরুণ-যুবক-যুবতীরা কেউই বাদ যাচ্ছে না। সমীক্ষা বলছে মাসে ত্রিশটিরও বেশি সংখ্যক আত্মহত্যার ঘটনা ঘটছে অঞ্চলটিতে। 

 

চিকিৎসক ও বিশেষজ্ঞরা বলছেন, মনোরোগ চিকিৎসাকে পাগলের চিকিৎসা না মনে করে তা স্বাভাবিকভাবে নেয়া এবং পরিবার ও সমাজকে ভুক্তভোগীর পাশে দাঁড়ানো জরুরি। সেই সঙ্গে চিকিৎসার ফলোআপ না করলে এ সংখ্যা আরও বেড়ে যেতে পারে। 

গত ১৪ এপ্রিল পয়লা বৈশাখের দিন রাজশাহীর নন্দনগাছি স্টেশনে ষাটোর্ধ রুহুল আমিন খুব ঠান্ডা মাথায় ট্রেনের নিচে শুয়ে আত্মহত্যা করেন। সেই ভিডিও ভাইরাল হয় সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে। জানা যায় ঋণের বোঝা সইতে না পেরে তার এমন সিদ্ধান্ত। একইভাবে ২০২৪ সালের জুনে পুঠিয়ার তরুণী রেমীর আত্মহত্যার ভিডিও তখন দেশ জুড়ে আলোচনার সৃষ্টি করে।

হাসপাতালের তথ্য, গণমাধ্যমের খবর বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে রাজশাহীতে চলতি বছর উল্লেখযোগ্য হারে বেড়েছে আত্মহত্যার সংখ্যা। এর মধ্যে রয়েছে- ১১ জানুয়ারি রুয়েট শিক্ষার্থী মেহেদী হাসান, ১১ ফেব্রুয়ারি পুলিশের এএসআই আমিনুল ইসলাম, ২১ ফেব্রুয়ারি রাবি: শিক্ষার্থী সিফাতুল্লাহ, ১ মার্চ দুর্গাপুরে দুজন গৃহবধূ বিষপান করেন। চেষ্টা করেন আরও ৬ জন, ৬ এপ্রিল ৮ তলা ভবন থেকে লাফিয়ে আত্মহত্যা করেন বুয়েটের সাবেক শিক্ষার্থী ও আমেরিকা প্রবাসী ফারিহা নাজনীন, ২০ এপ্রিল পুলিশের কনস্টেবল মাসুদ রানা।

রাজশাহী মেডিকেল কলেজের মর্গে প্রায় প্রতিদিনই বিভাগের বিভিন্ন জেলা থেকে আত্মহত্যার মরদেহ ময়নাতদন্তের জন্য আসছে। হাসপাতালটির মুখপাত্র বলছেন, শুধু এপ্রিল মাসেই তারা এই ধরণের মরদেহ বা মৃত্যুর ঘটনা পেয়েছেন ৩৫টি। এর বাইরেও রয়েছে আরও বড় সংখ্যক অংশ যারা পুলিশি তদন্তের বাইরে।

রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল জরুরি বিভাগের ইনচার্জ ডা. শংকর কে বিশ্বাসের মতে, বর্তমানে দেশে প্রতি লাখে চারজন আত্মহত্যা করছে। যাদের মধ্যে ১০ থেকে ১৯ বছর বয়সীরাই বেশি। এছাড়াও প্রাপ্তবয়স্করা আত্মহত্যা করছেন ঋণ পরিশোধ না করতে পেরে কিংবা সাংসারিক ঝামেলায়। তবে যারা বেঁচে যাচ্ছেন তারা পরবর্তীতে ফলোআপ চিকিৎসা না করায় ঝুঁকি কাটছে না।

মনোবিজ্ঞানী অধ্যাপক ড. আকতার বানুর মতে, প্রাতিষ্ঠানিকভাবে মানসিক স্বাস্থ্য দেখভাল করার বিষয়টি জরুরি হয়ে পড়েছে। এছাড়াও পারিবারের সদস্যদের সহায়তা, প্রশাসনের সহায়তা এবং মানসিক রোগকে রোগ হিসেবে মেনে নেয়ার প্রবণতা গড়ে তুলতে হবে।

বিশ্লেষকরা বলছেন, আত্মহত্যা কমাতে নারীর ক্ষমতায়ন, সম্পদে তার অধিকার নিশ্চিত করা। ঋণ গ্রহণ ও পরিশোধে সহজ শর্ত আরোপ, সকল হাসপাতালে মনোরোগ বিশেষজ্ঞ দ্বারা কাউন্সিলিং চালুর ব্যবস্থা করা প্রয়োজন।