
কানাডার প্রধানমন্ত্রী মার্ক কার্নি বলেছেন, তার দেশ যুক্তরাষ্ট্রের কাছ থেকে যথাযথ সম্মান প্রাপ্য এবং তারা কেবল নিজেদের শর্তেই প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সাথে বাণিজ্য ও নিরাপত্তা আলোচনায় যাবে।
বিবিসিকে তিনি বলেছেন, কানাডার সার্বভৌমত্বকে সম্মান করে যখন 'কোন সিরিয়াস আলোচনা হবে' তখনি তিনি কেবল ওয়াশিংটন সফর করবেন।
কানাডার প্রধানমন্ত্রীর দপ্তর জানিয়েছে, নির্বাচনের ফলাফলের পর মার্ক কার্নি ও ডোনাল্ড ট্রাম্প কথা বলেছেন এবং নিকট ভবিষ্যতে সাক্ষাৎ করতে সম্মত হয়েছেন।
"নেতারা স্বাধীন ও সার্বভৌম জাতি হিসেবে পারস্পারিক উন্নতির জন্য কানাডা ও যুক্তরাষ্ট্রের একযোগে কাজ করার গুরুত্বের বিষয়ে একমত হয়েছে," এক বিবৃতিতে বলা হয়েছে।
ট্রাম্পও মি. কার্নিকে নির্বাচনে জেতার জন্য অভিনন্দনের কথা জানিয়েছেন।
ট্রাম্প দ্বিতীয় মেয়াদে হোয়াইট হাউজে আসার পর থেকে কয়েকবারই কানাডাকে আমেরিকার '৫১তম রাজ্য' হিসেবে উল্লেখ করেছেন। মঙ্গলবারও হোয়াইট হাউজ থেকে একই কথার পুনরাবৃত্তি করা হয়েছে।
"কানাডাকে আমেরিকার ৫১তম রাজ্য করতে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের পরিকল্পনায় নির্বাচন কোন প্রভাব ফেলবে না," হোয়াইট হাউজের উপ-মুখপাত্র আন্না কেলি বলেছেন।
কার্নি সোমবারের নির্বাচনে ঐতিহাসিক জয় পেয়েছেন। তিনি বলেছেন ' এ ধরনের পরিস্থিতি কোনো কালেই হবে না'।
"সত্যি বলতে অন্যকে অসম্মানের মাধ্যমে এটা কখনোই হবে বলে মনে করি না...সেটা পানামা, গ্রিনল্যান্ড বা অন্য যেখানেই হোক না কেন," বলেছেন তিনি।
তিনি বলেছেন, যুক্তরাষ্ট্রের সাথে বাণিজ্য চুক্তি করতে হলে তা হতে হবে দু পক্ষের জন্যই সমান। তিনি একই সাথে ইউরোপীয় ইউনিয়ন ও যুক্তরাজ্যের সাথে বাণিজ্য সম্পর্ক তৈরির কথা বলেছেন।

ছবির উৎস,Reuters
যুক্তরাষ্ট্রের সাথে সম্পর্কের টানাপড়েন
কানাডার ব্যবসায়ীদের জন্য যুক্তরাষ্ট্র বড় বাজার। দেশটির রপ্তানির ৭৫ শতাংশের গন্তব্য এটি। অন্যদিকে যুক্তরাষ্ট্রের রপ্তানির মাত্র ১৭ শতাংশ কানাডায় আসে।
কানাডা আবার আমেরিকার অপরিশোধিত তেলের বড় সরবরাহকারী। কানাডার সাথে আমেরিকার বাণিজ্য ঘাটতি ২০২৪ এসে ৪৫ বিলিয়ন ডলারে দাঁড়িয়েছে।
ট্রাম্পের '৫১তম রাজ্য' বিষয়ক কথাবার্তা ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রুডোকে 'গভর্নর' হিসেবে আখ্যায়িত করাসহ বিভিন্ন কারণে কানাডা ও যুক্তরাষ্ট্রের সম্পর্কে গত কয়েক মাসে টানাপড়েন তৈরি হয়েছে।
যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট একই সাথে বৈশ্বিক যে বাণিজ্য যুদ্ধের সূচনা করেছেন, সেখানে প্রথম যেসব দেশের ওপর শুল্ক চাপানো হয়েছে কানাডা তার একটি।
ট্রাম্প কানাডার বিভিন্ন পণ্যের ওপর ২৫ শতাংশ শুল্ক চাপিয়েছেন। এর মধ্যে সব ধরনের অ্যালুমিনিয়াম ও স্টিলকেও রাখা হয়েছে।
জবাবে কানাডাও যুক্তরাষ্ট্রের পণ্যের ওপর প্রায় ৪২ বিলিয়ন ডলারের পাল্টা শুল্ক আরোপ করেছে।
কার্নি বলেছেন, ট্রাম্পের সাথে আলোচনা হবে 'আমাদের শর্তে, তাদের শর্তে নয়'।
"একটি অংশীদারিত্ব হতে হবে, অর্থনৈতিক ও নিরাপত্তা অংশীদারিত্ব," বলেছেন তিনি। "অতীতে আমাদের মধ্যে যা ছিলো, এটা হবে তার চেয়ে ভিন্ন"।

ছবির উৎস,EPA
মার্ক কার্নি শুল্ক বিষয়ে ট্রাম্পকে মোকাবেলার ক্ষেত্রে বৈশ্বিক অর্থনৈতিক সংকট মোকাবেলায় তার অভিজ্ঞতাকে তুলে ধরেছেন।
প্রধানমন্ত্রী হওয়ার আগে কার্নি কোন রাজনৈতিক দায়িত্ব পালন করেননি।
২০০৮ সালের বৈশ্বিক মন্দার সময় তিনি ব্যাংক অফ কানাডার নেতৃত্ব দিয়েছেন এবং ব্রিটিশ নাগরিকদের বাইরে তিনিই প্রথম ব্যক্তি হিসেবে ২০১৩ থেকে ২০২০ সাল পর্যন্ত ব্যাংক অফ ইংল্যান্ডের শীর্ষ পদে ছিলেন।
তিনি বলেছেন, যুক্তরাষ্ট্রের ৪০টিরও বেশি রাজ্যের জন্য কানাডা সবচেয়ে বড় গ্রাহক।
"মনে রাখতে হবে আমরা তাদের গুরুত্বপূর্ণ জ্বালানি সরবরাহ করি। আমরা তাদের কৃষকদের জন্য সার সরবরাহ করি," কার্নি বিবিসিকে বলেছেন।
"আমাদের সম্মান প্রাপ্য। আমরা সম্মান প্রত্যাশা করি। আমি নিশ্চিত সেটি আমরা আবার যথাযথভাবেই পাবো এবং এরপর আমরা এসব নিয়ে আলোচনা করতে পারি"।
কানাডা, যুক্তরাষ্ট্র ও মেক্সিকোর মধ্যে গভীর অর্থনৈতিক সম্পর্ক আছে। প্রতিদিন কয়েক বিলিয়ন পাউন্ডের পণ্য এক দেশ থেকে আরেক দেশে যায়।
এর মধ্যে শুল্ক আরোপের ঘটনা এসব দেশের কয়েক দশকের সহযোগিতামূলক সম্পর্ককে হুমকির মুখে ফেলেছে।
ট্রাম্পের যুক্তি হলো, এই শুল্ক আমেরিকানদের নিজেদের পণ্য কিনতে উৎসাহিত করবে, যা আমেরিকার উৎপাদন ও কর্মসংস্থান বাড়াবে।

ছবির উৎস,Getty Images
মিত্রদের সাথে বাণিজ্য পরীক্ষার মুখে
আমেরিকার শুল্ক আরোপের ক্ষেত্রে বৈশ্বিক বাণিজ্যে প্রধান প্রতিপক্ষ হলো চীন। কিন্তু নতুন শুল্ক আরোপের পর বিশ্বের বৃহত্তম অর্থনীতির দেশটির মিত্ররা এখন নতুন চুক্তি করতে চাইছে।
মার্ক কার্নি বলেছেন, কেউ ভাবতে পারেন বাণিজ্যে বৈচিত্র্য আনতে কানাডা ও যুক্তরাজ্য একটি মুক্ত বাণিজ্য চুক্তি করতে পারে কিন্তু দুদেশের মধ্যকার বাণিজ্যের ৯৫ শতাংশ ইতোমধ্যেই শুল্ক-মুক্ত।
"আমরা দু'দেশের বা সম-চিন্তার দেশগুলোর মধ্যে অংশীদারিত্বের আরও সম্প্রসারণ করতে পারি। প্রতিরক্ষা অংশীদারিত্ব এবং অন্য যেসব বিষয়ে আলোচনা শুরু হয়েছে। সুতরাং অনেক কিছু করার আছে," বলেছেন তিনি।
মি. কার্নিকে নির্বাচনে জয়ের পর অভিনন্দন জানিয়ে যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রী স্যার কিয়ের স্টারমার বলেছেন, "আমি জানি আমরা প্রতিরক্ষা, নিরাপত্তা, বাণিজ্য ও বিনিয়োগের বিষয়ে ঘনিষ্ঠভাবে কাজ করা অব্যাহত রাখবো"।
বিবিসিকে দেয়া সাক্ষাৎকারে কার্নি বলেছেন, বিশ্ব বাণিজ্যের ভবিষ্যৎ গতিপথ নির্ধারণে জুনে কানাডায় জি-৭ সম্মেলনটি হবে গুরুত্বপূর্ণ। তিনি এও বলেছেন, এটি আসলে পরীক্ষা নেবে যে বিশ্বের সবচেয়ে অগ্রসর সাত অর্থনীতির দেশ এখনো সমমনা দেশ হিসাবেই রয়েছে কি-না।