
আগামী মে মাসের মধ্যে রাজধানীর সাত কলেজ নিয়ে প্রস্তাবিত ঢাকা সেন্ট্রাল ইউনিভার্সিটির চূড়ান্ত রূপ দেওয়ার লক্ষ্যে কাজ করছে বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন (ইউজিসি)। এরপর জুন-জুলাই মাসে এই বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে ২০২৪-২৫ শিক্ষাবর্ষের স্নাতক (সম্মান) প্রথম বর্ষে ভর্তি কার্যক্রম শুরু হতে পারে। নতুন এই বিশ্ববিদ্যালয়ের হেডকোয়ার্টার্স হতে পারে ঢাকা কলেজ ক্যাম্পাস। প্রশাসকের দায়িত্বও পালন করবেন ঢাকা কলেজের অধ্যক্ষ।
ইউজিসির পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় বিভাগের দায়িত্বপ্রাপ্ত সদস্য অধ্যাপক মোহাম্মদ তানজীমউদ্দিন খান কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘বিশ্ববিদ্যালয়টি নতুনভাবে কার্যক্রম শুরু করলেও বর্তমান শিক্ষার্থীরা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনেই ভর্তি হয়েছে। তাই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের নির্দেশনার প্রয়োজন হবে। এ জন্য ইউজিসির প্রস্তাবিত ব্যবস্থাটি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সিন্ডিকেটে অনুমোদিত হতে হবে। এরই মধ্যে সিন্ডিকেট হয়েছে বলে আমরা জেনেছি।এখন কার্যপত্র পেলে তা নিয়ে আমরা পরবর্তী পদক্ষেপের দিকে যাব।’
সাত কলেজকে বিশ্ববিদ্যালয়ে রূপান্তর কমিটির অন্যতম সদস্য মোহাম্মদ তানজীমউদ্দিন খান আরো বলেন, ‘আমরা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সিন্ডিকেটের কার্যপত্র পাওয়ার পর শিক্ষা উপদেষ্টার সঙ্গে বসব। এরপর এ বিষয়ে প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গেও বসার প্রয়োজন হতে পারে। বিশ্ববিদ্যালয়টি শুরু করার জন্য উপদেষ্টা পরিষদের অনুমোদন শেষে একটি অধ্যাদেশ জারি করতে হবে। সব মিলিয়ে আমরা আশা করছি, আগামী মে মাসের মধ্যেই ঢাকা সেন্ট্রাল ইউনিভার্সিটির সব কাজ শেষ করতে পারব। এর পরই বিশ্ববিদ্যালয়টিতে ভর্তি কার্যক্রম শুরু করা যাবে।’
অধ্যাপক তানজীমউদ্দিন খান বলেন, ‘সাত কলেজের অধ্যক্ষদের মধ্য থেকে একজন প্রশাসক নিয়োগ করা হবে। আমরা এরই মধ্যে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে এসংক্রান্ত প্রস্তাব পাঠিয়েছে। সেটাও আশা করছি শিগগিরই হয়ে যাবে। আর যিনি প্রশাসক হবেন, তাঁর ক্যাম্পাসেই এই বিশ্ববিদ্যালয়ের কার্যালয় হবে।’
সাত কলেজের কার্যক্রম পরিচালনার ব্যাপারে ইউজিসি তাদের রূপরেখায় বলেছে, একটি সমন্বিত কাঠামোর অধীনে চলবে রাজধানীর সাত কলেজ। ইউজিসির একজন সদস্য ও অধিভুক্ত কলেজের একজন অধ্যক্ষের নেতৃত্বে একটি ‘নজরদারি সংস্থা’র অধীনে সার্বিক কার্যক্রম পরিচালিত হবে। এতে ঢাবি প্রশাসনের সংশ্লিষ্ট দপ্তরের প্রতিনিধি থাকবেন। পূর্ণাঙ্গ বিশ্ববিদ্যালয় হওয়ার আগ পর্যন্ত এই কাঠামোতে চলবে। তবে এই কাঠামোর অধীনে সব হিসাব ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আলাদা ব্যাংক অ্যাকাউন্টে পরিচালিত হবে।
প্রশাসনিক কার্যক্রম পরিচালনার জন্য ঢাবির রেজিস্ট্রার দপ্তর মনোনীত কর্মকর্তা, পরীক্ষাসংক্রান্ত যাবতীয় কার্যক্রম পরিচালনার জন্য ঢাবির পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক দপ্তর মনোনীত কর্মকর্তা, অর্থ ও হিসাব সংক্রান্ত কার্যক্রম পরিচালনার জন্য ঢাবির সংশ্লিষ্ট শাখার মনোনীত প্রতিনিধি দায়িত্ব পালন করবেন।
ইউজিসি জানায়, সাত কলেজের ভর্তি, পরীক্ষা ও অন্যান্য কার্যক্রম সংক্রান্ত তথ্য আদান-প্রদানের জন্য নিজ নিজ কলেজের অধ্যক্ষের নিয়ন্ত্রণে একটি করে হেল্প ডেস্ক থাকবে। নিয়োগপ্রাপ্তির পরই প্রস্তাবিত সাময়িক কাঠামোর পরিচালক জনবলের প্রস্তাবসহ কাঠামোর কার্যক্রমের অপারেশন ম্যানুয়াল প্রণয়ন করে সিন্ডিকেটে অনুমোদনের লক্ষ্যে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে দাখিল করবেন। কমিশন সমন্বিত কাঠামোর সার্বিক তত্ত্বাবধানসহ সময়ে সময়ে প্রয়োজনীয় পরামর্শ দেবে।
ঢাকার এই সাত সরকারি কলেজ হলো ঢাকা কলেজ, ইডেন মহিলা কলেজ, সরকারি শহীদ সোহরাওয়ার্দী কলেজ, কবি নজরুল সরকারি কলেজ, বেগম বদরুন্নেসা সরকারি মহিলা কলেজ, সরকারি বাঙ্লা কলেজ ও সরকারি তিতুমীর কলেজ।
এই কলেজগুলো একসময় জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে ছিল। ২০১৭ সালের ১৭ ফেব্রুয়ারি রাজধানীর এই সাত কলেজকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভুক্ত করা হয়েছিল। কিন্তু অধিভুক্ত করার পর থেকে যথাসময়ে পরীক্ষা নেওয়া, ফল প্রকাশসহ বিভিন্ন দাবিতে আন্দোলন করে আসছেন এসব কলেজের শিক্ষার্থীরা।
সাত কলেজের শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের পরিপ্রেক্ষিতে গত জানুয়ারিতে এই সাত কলেজকে আবার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে আলাদা করার কথা জানায় বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। এরপর রাজধানীর সরকারি এই সাতটি বড় কলেজের জন্য পৃথক একটি বিশ্ববিদ্যালয় করার উদ্যোগ নেয় সরকার। এ জন্য ইউজিসি চেয়ারম্যান অধ্যাপক এস এম এ ফায়েজের নেতৃত্বে একটি কমিটি গঠন করা হয়। প্রাথমিকভাবে এই কমিটি নতুন বিশ্ববিদ্যালয়ের নাম ‘জুলাই ৩৬ বিশ্ববিদ্যালয়’ করার বিষয়ে আলোচনা করেছিল। পরে সাত কলেজের শিক্ষার্থীদের সঙ্গে আলোচনা করে বিশ্ববিদ্যালয়ের নতুন নাম ঠিক করা হয় ‘ঢাকা সেন্ট্রাল ইউনিভার্সিটি’।
ইউজিসি সূত্র জানায়, প্রস্তাবিত ঢাকা সেন্ট্রাল ইউনিভার্সিটির প্রশাসক নিয়োগের জন্য এরই মধ্যে সাত কলেজের অধ্যক্ষদের মতামত নেওয়া হয়েছে। সেখানে ঢাকা কলেজের অধ্যক্ষকে বেশির ভাগ অধ্যক্ষ সমর্থন দিয়েছেন। তাঁকে প্রশাসক নিয়োগ করা হতে পারে। তাঁর কলেজটি হবে ঢাকা সেন্ট্রাল ইউনিভার্সিটির হেডকোয়ার্টার্স।