Image description

কয়েকদিনের সফরে হঠাৎ করে লন্ডন গেছেন বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা ও সাবেক মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী। তার এই সফরকে ঘিরে সিলেট ও লন্ডনে নানা জল্পনা চলছে। যাওয়ার আগে নগরে নির্বাচনকেন্দ্রিক প্রক্রিয়াও চালিয়েছেন তিনি। তবে কোথায় নির্বাচন করবেন সেটি এখনো স্পষ্ট জানাননি। এজন্যই তাকে ঘিরে সিলেটে রহস্যের অন্ত নেই। তবে তার ঘনিষ্ঠজনেরা জানিয়েছেন, সার্বিক বিষয়ে দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের পরামর্শ নিতে তিনি লন্ডনে গেছেন। তার পরামর্শ নিয়ে এসে সিলেটে দল ও নির্বাচনী মাঠে কাজ শুরু করবেন।

তারা জানিয়েছেন; রোববার লন্ডনের উদ্দেশ্যে সিলেট ছাড়েন আরিফুল হক চৌধুরী। সোমবার গিয়ে সেখানে পৌঁছেন। যুক্তরাজ্যে বসবাসরত বিএনপি, যুবদল ও ছাত্রদলের নেতাকর্মীরা তাকে এয়ারপোর্টে বরণ করেন। এয়ারপোর্টে উপস্থিত থাকা বিএনপি নেতা ও সাংবাদিকদের উদ্দেশ্যে তিনি বলেন, ‘আপনাদের দেখতে আমি লন্ডনে এসেছি। ৪-৫টি দিন লন্ডনে থাকবো। তারপর সিলেটে ফিরে যাবো।’ সরকারের তরফ থেকে সিলেট সিটি করপোরেশনের ভারপ্রাপ্ত মেয়র দেয়ার চিন্তাভাবনা চলছে। এক্ষেত্রে পছন্দের তালিকায় এগিয়ে আছেন সাবেক মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী। এ নিয়ে গত কয়েক দিন ধরে সাবেক এই মেয়রকে নিয়ে সিলেটে নানা আলোচনা ডালপালা মেলেছে।

আরিফুল হকের ঘনিষ্ঠ বিএনপি নেতারা মানবজমিনকে জানিয়েছেন- দুটি মিশনকে সামনে রেখে আরিফুল হক চৌধুরী দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের পরামর্শ নিতে লন্ডনে গেছেন। এর মধ্যে একটি; প্রস্তাব পেলে ভারপ্রাপ্ত মেয়র হবেন কিনা। অপরটি হচ্ছে জাতীয় সংসদ নির্বাচনের প্রস্তুতি নেবেন কিনা। দলের হাইকমান্ডের নির্দেশনার পর তিনি সিলেটে ফিরে পুরোদমে কাজ শুরু করবেন। তার এই সিদ্ধান্ত এখনই নেয়া প্রয়োজন বলে জানিয়েছেন ওই নেতারা। তবে লন্ডনে সোমবার সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে আরিফ বলেন, নির্বাচনী তফসিল ঘোষণা না হওয়া পর্যন্ত আমরা বলতে পারবো না নির্বাচন হচ্ছে। নির্বাচনের দাবি বিএনপি’র সব পর্যায় থেকে করা হচ্ছে। বিএনপি’র মূল টার্গেট হচ্ছে একটি গ্রহণযোগ্য নির্বাচন।

এদিকে, সোমবার রাতে লন্ডনে আরিফুল হক চৌধুরী তার একান্ত ঘনিষ্ঠ শতাধিক নেতাকর্মীকে নিয়ে একটি রেস্টুরেন্টে বৈঠক করেন। ওই বৈঠকে তিনি বর্তমানে মাঠে থাকা রাজনৈতিক প্রতিপক্ষদের নিয়ে বিস্ফোরক মন্তব্য করেন। তিনি মুখে ওই রাজনৈতিক দলের নাম বলেননি। নতুন রাজনৈতিক সংগঠনের কথা সরাসরি বলেছেন। তার বক্তব্যকে ঘিরে সিলেটে জামায়াত ঘরানার রাজনৈতিক নেতারা স্যোশাল মিডিয়ায় সরব হয়ে উঠেছেন। কেউ কেউ প্রশ্ন করেছেন, অন্য পার্টি বলতে সাবেক মেয়র আরিফ কি জামায়াতকে  বোঝাতে চেয়েছেন? ভার্চ্যুয়াল মিডিয়ায় প্রচারিত হওয়া ভিডিওতে আরিফুল হক চৌধুরী বলেন, ‘আমাদের দু-একটা তুচ্ছ ঘটনাকে আমাদের কিছু রাজনৈতিক অন্য পার্টি, অন্য প্ল্যাটফরমে যা আপনারা ভালোভাবেই বুজতেছেন যারা এখনই বর্তমান অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের সময় বিভিন্ন ইউনিভার্সিটি, বিভিন্ন ইনস্টিটিউশন, বিভিন্ন হাই-অফিসিয়াল পোস্টে তারা কিন্তু তাদের মানুষগুলোদের সেটআপ করে ফেলছে। সেখানে আমাদের মানুষগুলো নেই। আমাদের দু-চার জন অ্যাটর্নি জেনারেল, আর দু-চারটা পোস্ট দেখলেই মনে করবেন না সব আমাদের। প্রশাসনের ‘কি’ পোস্টগুলোতে তারা বেছে বেছে ওই সংগঠনের মানুষ সেটআপ করে ফেলছে। তারা ভালো করে জানে ভোটে গেলে বিএনপি’র সঙ্গে কোনোভাবেই রিটার্ন করতে পারবে না। কাজেই তারা ওই ম্যাকানিজম শুরু করেছে সেখানে নির্বাচনকে একটু দূরে ঠেলে দিয়ে বিভিন্ন প্রশাসনে তাদের লোকগুলোকে সেটআপ করা।’

আরিফুল হক বলেন, ‘যেমন নতুন দল এবং আরেকটি দল সবাই বুঝতে পারতেছেন। তারা কখনো আমাদের সঙ্গে, কখনো ফ্যাসিস্টদের সঙ্গে। কখন যে কার সঙ্গে হাত মেলায় তারাই জানে। এরা কিন্তু আমাদের তুচ্ছ ছোটো ঘটনাকে তারা স্যোশাল মিডিয়ার মাধ্যমে সারা বিশ্বে আমাদের অপপ্রচার চালাচ্ছে যে, আমাদের ছেলেরা এসব করছে। হয়তো দু’একজনে করছে, এদের বিরুদ্ধে কিন্তু ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে। এদেরকে দল থেকে বহিষ্কার করা হয়েছে। আরও পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে। কিন্তু তারা এটাকে এমনভাবে প্রোপাগান্ডা করতেছে যেন বিএনপি সব করছে।’ বক্তৃতায় আরিফুল হক চৌধুরী প্রবাসী নেতৃবৃন্দকে আহ্বান জানিয়ে বলেন, ‘আমাদের যেসব ছেলে-মেয়েরা দেশের বাইরে আছে কিংবা দেশে আছে। তাদেরকে স্যোশাল মিডিয়ার মাধ্যমে সঙ্গে সঙ্গে রিপ্লাই দিতে হবে। রিপ্লাই না দিলে বিএনপিকে তারা বিভিন্নভাবে নষ্ট করার পাঁয়তারা চালাচ্ছে।’ সিলেটের রাজনীতিতে আরিফুল হক চৌধুরী এখন বলতে গেলে সিনিয়র নেতা। বর্তমান প্রেক্ষাপটে বিভিন্ন সময় প্রশাসনসহ মাঠে থাকা বিপরীত মেরুর রাজনৈতিক দলগুলো নিয়ে নানা মন্তব্য করছেন। দলীয় নেতারা জানিয়েছেন- আরিফুল হক চৌধুরী বর্তমান সময়ের মন্তব্য খুবই যৌক্তিক। এই সময়ে ভয়ে অনেকেই সত্য উচ্চারণ করছেন না। কিন্তু আরিফ যখন যার প্রশংসা, আবার যখন যার সমালোচনা সবই করে যাচ্ছেন।