
রাজস্ব নীতি ও ব্যবস্থাপনা অধ্যাদেশের খসড়ায় আয়কর ও কাস্টমস ক্যাডারের মতামত আমলে না নেওয়ায় হতাশ দুই ক্যাডারের কর্মকর্তারা। প্রতিবাদ জানাতে মঙ্গলবার সন্ধ্যায় আগারগাঁও রাজস্ব ভবনে সংস্থাটির চেয়ারম্যানের কক্ষ ঘেরাও করে ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া দেখিয়েছে দুই ক্যাডারের প্রায় দুই শতাধিক কর্মকর্তা। সংস্থাটির জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তারা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনার চেষ্টা করে ব্যর্থ হন। জুনিয়র কর্মকর্তারা এ বিষয়ে অর্থ উপদেষ্টার সঙ্গে উন্মুক্ত স্থানে আলোচনা করার দাবি জানান। আগামীকাল বুধবার এনবিআরের অবস্থান কর্মসূচি পালন করবে তারা।
বিক্ষুব্ধ কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, দাবির মুখে এনবিআর চেয়ারম্যান আইন মন্ত্রণালয়ে খসড়া অধ্যাদেশটির ভেটিং স্থগিত রাখতে শীর্ষ কর্মকর্তাকে টেলিফোনে অনুরোধ জানিয়েছে। একইসঙ্গে এ বিষয়ে দুই ক্যাডারের অ্যাসোসিয়েশনের নেতাদের নিয়ে অর্থ উপদেষ্টার সঙ্গে বৈঠকের আশ্বাস দেন। পরবর্তীতে কর্মকর্তারা এনবিআর চেয়ারম্যানের দপ্তর ত্যাগ করেন।
গোপনে আইন মন্ত্রণালয়ে অধ্যাদেশের খসড়া পাস করার ভেটিং চলছে-এই খবর পেয়ে দুই ক্যাডারের জুনিয়র কর্মকর্তারা বিকাল থেকে এনবিআরে জড়ো হতে থাকে। পরে তাদের সঙ্গে ঢাকার বিভিন্ন কর অঞ্চল, ভ্যাট কমিশনারেট ও কাস্টমস হাউজের জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তারা অংশ নেন। পরিস্থিতি সামলাতে এনবিআর চেয়ারম্যান দুই ক্যাডারের জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তাদের (সদস্য) সঙ্গে বৈঠকের কথা জানান। কিন্তু জুনিয়র কর্মকর্তারা এতে রাজি হয়নি। বাক-বিতণ্ডা শেষে সম্মেলন কক্ষে সব লেভেলের কর্মকর্তাদের উপস্থিতিতে এনবিআর চেয়ারম্যান কথা বলেন।
দুই ক্যাডারের কর্মকর্তারা বলছেন, সারা বিশ্বে রাজস্ব বিভাগ একটি বিশেষায়িত বিভাগ হিসাবে কাজ করে। দীর্ঘদিন ধরে রাজস্ব আদায় ও রাজস্ব নীতি প্রণয়নের সঙ্গে জড়িতরাই শীর্ষ পদে দায়িত্ব পালন করে থাকেন। কেবল ব্যতিক্রম বাংলাদেশে। এদেশে প্রশাসন ক্যাডারের কর্মকর্তারা এনবিআর চেয়ারম্যান হিসাবে দায়িত্ব পালন করেন। ফলে তাদের নীতি প্রণয়ন ও রাজস্ব আদায় সম্পর্কে সম্যক ধারণা কম থাকে। এতে অনেক সময় প্রণীত নীতি ব্যবসার জটিলতা সৃষ্টি করে।
তারা বলছেন, এনবিআরকে দুই ভাগ করার সিদ্ধান্তকে দুই ক্যাডারের কর্মকর্তারা স্বাগত জানায়। অন্তর্র্বর্তী সরকারের শ্বেতপত্র প্রণয়ন কমিটি রিপোর্টে বিস্তারিত বলা আছে, প্রশাসন ক্যাডারের কর্মকর্তারা শীর্ষ পদটি দখলে রাখার নীতি প্রণয়ন ও রাজস্ব আদায়ে জটিলতা বাড়ছে। এমনকি রাজস্ব খাত সংস্কারবিষয়ক কমিটিও দুই সংস্থার শীর্ষ পদে আয়কর ও কাস্টমস ক্যাডারের কর্মকর্তাদের নিয়োগের সুপারিশ করেছে। সে আলোকে দুই ক্যাডার থেকে একটি খসড়ার ড্রাফট উপদেষ্টা পরিষদে পাঠানো হয়। কিন্তু আশ্চর্যজনক বিষয় হচ্ছে, খসড়া অধ্যাদেশে দুই ক্যাডারের মতামতকে গুরুত্ব না দিয়ে প্রশাসন ক্যাডারকে দুই বিভাগের প্রধান হিসাবে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে।
দুই ক্যাডারের কর্মকর্তারা বলছেন, প্রশাসন ক্যাডারের কর্মকর্তারা নিজেদের প্রভাব খাটিয়ে খসড়াটি নিজেদের সুবিধা অনুযায়ী সংশোধন করেছেন। দুটি বিভাগের সচিব তাদের মধ্য থেকেই করার প্রস্তাব এসেছে খসড়ায়। এতে প্রশাসন ক্যাডারের কর্মকর্তাদের মধ্য থেকে আরও দুজন সচিব পদে পদোন্নতি পাওয়ার সুযোগ তৈরি হয়েছে। অন্যদিকে রাজস্ব খাতে দীর্ঘ অভিজ্ঞতা থাকার পরও কর ও কাস্টমস ক্যাডারের কর্মকর্তাদের বঞ্চিত করার ক্ষেত্র প্রস্তুত করা হয়েছে। বর্তমান বাস্তবতায় খসড়া অধ্যাদেশটি দুই ক্যাডার সার্ভিসের অস্তিত্বের প্রশ্ন। কর্মকর্তাদের মাঝে প্রক্রিয়াগত মত-দ্বিমত রয়েছে। তবে অস্তিত্বের প্রশ্নে আমরা সবাই এক। দুই ক্যাডারের দাবি না মানলে প্রয়োজনবোধে গণইস্তফা ও কর্মবিরতির দিকে যাওয়া হবে।