
জুলাই-আগস্টের গণঅভ্যুত্থানে পুলিশ-জনতার ‘মুখোমুখি’ অবস্থানের পর বাহিনীটিকে ‘ঘুরে দাঁড়াতে’ নানা উদ্যোগের মধ্যে এবারের পুলিশ সপ্তাহ শুরু হচ্ছে। ‘আমার পুলিশ আমার দেশ, বৈষম্যহীন বাংলাদেশ’ প্রতিপাদ্যে মঙ্গলবার রাজারবাগ পুলিশ লাইন্সে প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের ভাষণের মধ্য দিয়ে শুরু হয়েছে পুলিশ সপ্তাহের মূল আয়োজন। চলবে আরো তিন দিন।
এবারও ৬২ জনকে বাংলাদেশ পুলিশ মেডেল (বিপিএম) ও প্রেসিডেন্ট পুলিশ মেডেল (পিপিএম) পদক দেওয়া হয়েছে। তবে পদক দেওয়ার আগেই এ নিয়ে সমালোচনা শুরু হয়। পদকের জন্য তালিকা তৈরিতে আওয়ামী ফ্যাসিবাদী ধারাবাহিকতা বজায় রাখার অভিযোগ রয়েছে।
ঊর্ধ্বতন পুলিশ কর্মকর্তাদের পদক দেওয়ার রীতির শুরু হয় ২০১০ সাল থেকে। সাব-অর্ডিনেট অফিসারদের কাজকে নিজের কৃতিত্ব হিসেবে দেখিয়ে অনেক কর্মকর্তা এই পদক বাগিয়ে নেন আওয়ামী লীগ আমলে। বিরোধী দলকে দমন করে শেখ হাসিনার আমলে অনেকে বিপিএম-পিপিএম পদক পান। এ বছরেও জন্য যে ৬২ জনকে বিবেচনা করা হয়েছে, তাদের মধ্যে ২১ জনই উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা। এ ছাড়া ফ্যাসিবাদের দোসর হিসেবে অতীতে যারা শেখ হাসিনার কাছ থেকে পদক নিয়েছেন, তাদের মধ্যের কেউ কেউ এবার প্রধান উপদেষ্টার কাছ থেকেও পদক নিয়েছেন।
এদিকে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জননিরাপত্তা বিভাগের এক প্রজ্ঞানে পদকপ্রাপ্তদের চূড়ান্ত নাম প্রকাশ করা হয়েছে। তবে পরিদর্শক মনিরুল হক ডাবলুর (ওসি দক্ষিণ কেরানীগঞ্জ) নাম পদকের জন্য চূড়ান্ত করার পর গণমাধ্যমে তাকে নিয়ে নেতিবাচক সংবাদ প্রচার হয়। এর পরিপ্রেক্ষিতে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় প্রকাশিত তালিকা থেকে তার নাম বাদ দেওয়া হয়েছে।
এদিকে প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস এবার পুলিশ সদস্যদের পদক তুলে দেন। অনুষ্ঠানে পুলিশের সব ইউনিট ভার্চুয়ালি যুক্ত ছিল। পুলিশ কর্মকর্তারা জানান, এবারের পুলিশ সপ্তাহের আয়োজন থাকছে মোট চার দিনের। তবে এবার পুলিশের বার্ষিক প্যারেড অনুষ্ঠিত হচ্ছে না। বিগত বছরগুলোর মতো রাষ্ট্রপ্রধান, সরকারপ্রধান ও প্রধান বিচারপতির সঙ্গে ঊর্ধ্বতন পুলিশ কর্মকর্তাদের কোনো বৈঠকও থাকছে না। আয়োজনের দ্বিতীয় দিন পুলিশ কর্মকর্তাদের সঙ্গে বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বপ্রাপ্ত উপদেষ্টা ও সচিবদের এবং তৃতীয় দিন আইজিপির সঙ্গে পুলিশ কর্মকর্তাদের সম্মেলন রয়েছে। আগামী শুক্রবার বার্ষিক পুনাক সমাবেশ ও আনন্দ মেলার মধ্য দিয়ে পুলিশ সপ্তাহের অনুষ্ঠান শেষ হবে।
গত বছরের জুলাই-আগস্টে সরকারবিরোধী আন্দোলন দমাতে ছাত্র-জনতার ওপর বেপরোয়া গুলিবর্ষণে ব্যাপক সমালোচনার মুখে পড়ে পুলিশ বাহিনী। এর জেরে গণঅভ্যুত্থানে শেখ হাসিনা সরকারের পতনের দিন ৫ আগস্ট জনতার প্রতিরোধের মুখে পড়েন পুলিশ সদস্যরা। এতে বিভিন্ন থানা, স্থাপনা ও গাড়িতে ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ করা হয়। ওই আন্দোলনে বিভিন্ন থানা থেকে পুলিশের লাশ উদ্ধার করা হয়। এমন পরিস্থিতিতে বাহিনীটির মনোবল ভেঙে পড়ে। তবে অন্তর্বর্তী সরকার দায়িত্ব নেওয়ার পর পুলিশ বাহিনীর মনোবল ফেরাতে নানা উদ্যোগ নেয়।