Image description

যশোরে অপহরণের এক মাস পর রেজাউল ইসলাম নামে এক ব্যবসায়ীর মরদেহ উদ্ধার করেছে পুলিশ। রোববার (২৭ এপ্রিল) বিকেলে সাতক্ষীরার আশাশুনি উপজেলার একটি বাগান থেকে পুঁতে রাখা অবস্থায় মরদেহ উদ্ধার করা হয়।

গত ২২ মার্চ রাত সাড়ে ১২টার দিকে ফোন কল পেয়ে বাড়ি থেকে বের হন রেজাউল ইসলাম। তার নিখোঁজের এক মাস পর শনিবার (২৬ এপ্রিল) কোতোয়ালি থানায় মামলা করেন স্ত্রী মমতাজ বেগম। এরপর সন্দেহভাজন দুজনকে চট্টগ্রাম থেকে গ্রেফতার করে পুলিশ।

গ্রেফতারদের স্বীকারোক্তি অনুযায়ী অভিযান চালিয়ে রেজাউলের মরদেহ উদ্ধার করা হয়েছে। এসময় আরও একজনকে পুলিশ আটক করেছে। কোতোয়ালী থানা পুলিশের একটি টিম মরদেহ যশোর নিয়ে যায়।

রোববার সন্ধ্যায় এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন যশোর কোতোয়ালী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আবুল হাসনাত।

 

জানা যায়, দীর্ঘদিন নিখোঁজ স্বামীর সন্ধান না পেয়ে শনিবার যশোর কোতোয়ালী থানায় মামলা করেন শংকরপুর ইসহাক সড়কের রেজাউল ইসলামের স্ত্রী মমতাজ বেগম। মামলায় সাতক্ষীরার আশাশুনি উপজেলার তালতলা বাজার কুড়ি কাওনিয়া গ্রামের হবি গাজীর ছেলে সবুজ ওরফে রবিউল ও যশোর শহরের শংকরপুর গোলপাতা মসজিদ এলাকার মৃত বাদশা মিয়ার ছেলে রিপন হাওলাদারসহ অজ্ঞাত আরও ২-৩ জনকে আসামি করা হয়।

মামলার এজাহারে রেজাউলের স্ত্রী উল্লেখ করেন, রবিউল, রিপন ও তারা শংকরপুর ইসহাক সড়কের একটি বাড়িতে ভাড়া থাকতেন। সে সুবাদে তাদের সঙ্গে তার স্বামী রেজাউলের ভালো সম্পর্ক গড়ে ওঠে। এর মাঝে তারা একসঙ্গে শংকরপুরে রেজাউলের দুই শতক জমির ওপর থাকা একটি একতলা বাড়ি ২১ লাখ টাকায় বিক্রি করেন। ওই টাকা দেওয়ার জন্য ২২ মার্চ রাত সাড়ে ১২টায় মোবাইল ফোনে ডেকে নিয়ে যান। পরে তারা শংকরপুরের ইসহাক সড়কের কামরুলের বাড়ির সামনে কথা বলেন। একপর্যায়ে তাকে অপহরণ করে নিয়ে যাওয়া হয়।

রেজাউলের ছেলে মেহেদী হাসান চয়ন জানান, শংকরপুরে তার বাবার দোকান রয়েছে। সেখানে দর্জির দোকানের সঙ্গে কাপড় বিক্রি করতেন তিনি। পাশেই সবুজের চা ও মুদি দোকান। আরেক আসামি রিপন বেনাপোলে থাকেন। তিনি বিভিন্ন ভারতীয় মালামাল ওই মুদি দোকানে রেখে সাপ্লাই দিতেন। তারাই তার বাবাকে জমি বিক্রি করতে বাধ্য করান এবং ওই টাকা আত্মসাৎ করতে অপহরণ করেছেন বলে তিনি দাবি করেন।

 

এদিকে পুলিশ সূত্রে জানা যায়, রেজাউল অপহরণ মামলায় পুলিশ এজাহারনামীয় আসামি সবুজকে শনিবার চট্টগ্রাম থেকে গ্রেফতার করে। এরপর তার সহযোগী রিপনকে গ্রেফতার করা হয়। তাদের দেওয়া তথ্য মতে রোববার সাতক্ষীরায় আশাশুনি উপজেলার দক্ষিণ একসরা গ্রামে অভিযান চালিয়ে রেজাউল ইসলামের পুঁতে রাখা মরদেহ উদ্ধার করা হয়।

পুলিশের সূত্রটি আরও জানিয়েছে, সবুজ ও রিপন যশোর শহরেই রেজাউলকে হত্যা করেন। পরে তার মরদেহ বস্তাবন্দি করে ইজিবাইকে কিছু দূর নিয়ে যান। সেখান থেকে অ্যাম্বুলেন্সে ও পরবর্তীতে বাসে করে সাতক্ষীরায় নিয়ে যান। এরপর সবুজ মরদেহটি তার শ্বশুরবাড়ির পাশে একটি বাগানে পুঁতে রাখেন। কয়েকদিন পর বিষয়টি জানতে পারেন সবুজের শ্বশুর খোকন মোল্লা। তিনি মরদেহটি উত্তোলন করে পাশের আরেকটি বাগানে পুনরায় পুঁতে রাখেন। পুলিশের অভিযানে রোববার দুপুরে ওই বাগান থেকে রেজাউলের মরদেহ উদ্ধার করা হয়। এ ঘটনায় সবুজের শ্বশুর খোকন মোল্লাকেও আটক করা হয়েছে।

স্থানীয় সূত্র জানায়, যশোর শহরের শংকরপুর ইসহাক সড়কের বাসিন্দা ব্যবসায়ী রেজাউল ইসলাম নিজ এলাকাতেই কাপড় ও টেইলার্সের ব্যবসা চালাতেন। তিনি দোকানের পাশেই কামরুল ইসলামের বাড়িতে ভাড়া থাকতেন। এখানে তার পাশের ঘরে বসবাস করতেন একই এলাকার মৃত বাদশা মিয়ার ছেলে রিপন হাওলাদার ও সাতক্ষীরার আশাশুনি উপজেলার তালতলা বাজার এলাকার হবি গাজীর ছেলে সবুজ ওরফে রবিউল। একই বাড়িতে ভাড়া থাকার সুবাদে তাদের মধ্যে ভালো সম্পর্ক গড়ে ওঠে। পরবর্তীতে রেজাউল ব্যবসার জন্য পৈত্রিক সূত্রে পাওয়া বাড়িসহ দুই শতক জমি বিক্রির সিদ্ধান্ত নেন। এরপর সবুজ ও রিপনের সহায়তায় জমিসহ বাড়িটি ২১ লাখ টাকায় বিক্রি করেন। ওই টাকা হস্তান্তরের কথা বলে গত ২২ মার্চ রাত সাড়ে ১২টার দিকে রেজাউলকে মোবাইলে ডেকে নেন সবুজ ও রিপন। এরপর থেকে রেজাউল ইসলাম আর বাড়ি ফেরেননি। এ ঘটনায় তার পরিবার জিডি করেন। খোঁজ না পেয়ে এক সপ্তাহ পর অপহরণ ও গুমের অভিযোগ এনে সবুজ, রিপনসহ অজ্ঞাত ২-৩ জনের নামে থানায় লিখিত অভিযোগ করা হয়।

এ বিষয়ে কোতোয়ালী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আবুল হাসনাত জানান, পুলিশ তথ্য প্রযুক্তির সহায়তায় অপহরণকারীদের শনাক্ত করে। এরপর অভিযান চালিয়ে চট্টগ্রাম থেকে সবুজ ও রিপনকে আটক করে। জিজ্ঞাসাবাদের একপর্যায়ে তারা রেজাউলকে অপহরণ ও হত্যার বিষয়টি স্বীকার করেন। সেখান থেকে বেরিয়ে আসে ঘটনার মূল রহস্য।

তিনি আরও বলেন, পুলিশের পক্ষ থেকে ঘটনাটি নিয়ে ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা ব্রিফ করবেন।