
বিদেশি নোট ও মুদ্রার ব্যাংক হিসেবে পরিচিতি পেয়েছেন বগুড়ার মাহফুজার রহমান বাচ্চু। নিজেও ছিলেন ব্যাংক কর্মকর্তা। ৬২ বছর ধরেই বিভিন্ন দেশের মুদ্রা সংগ্রহ করে চলেছেন তিনি। এখন পর্যন্ত বাচ্চুর সংগ্রহে রয়েছে ১৩৭টি দেশের নোট ও কয়েন। শুধু তাই নয়, ১৯৬২ সালের পর থেকে বাংলাদেশে যত পয়সা ও নোট চালু হয়েছে সবই রয়েছে তার সংগ্রহে। স্বাধীনতার পর বাংলাদেশের ১ পয়সা থেকে শুরু করে ১ হাজার টাকার নোট পর্যন্ত। পরবর্তী প্রজন্ম যাতে এগুলো দেখতে পারে সেজন্য বৃদ্ধ বয়সেও অব্যাহত রেখেছেন মুদ্রা সংগ্রহ।
বগুড়ার শাহজাহানপুর উপজেলা মাঝিরা ইউনিয়নের জোকা মধ্যপাড়া গ্রামের বাসিন্দা মাহফুজার রহমান বাচ্চু। এক পুত্র ও তিন কন্যাসন্তানের জনক। ২০০৭ সালে জনতা ব্যাংকের চাকরি থেকে অবসর নেন।
জানা যায়, মাত্র সাত বছর বয়স অর্থাৎ তৃতীয় শ্রেণিতে পড়ার সময় থেকেই এক বিশেষ শখের মোহে পড়েন। আর তা হলো বিভিন্ন দেশের কাগজের নোট ও মুদ্রা সংগ্রহ করা। তবে, সেই শখ পূরণ শুরু করেন নানার বইয়ের ভাঁজে রাখা ১০ টাকা সরিয়ে। সেটাও ১৯৬২ সালের ঘটনা। সেই মধুর স্মৃতি রোমন্থনে কালবেলাকে তিনি জানান, নানার মৃত্যুর পর সেই টাকা দেখিয়ে এবং গল্প শুনিয়ে সবাইকে অবাক করে দিয়েছিলাম।
সেই থেকেই শুরু। টাকা সংগ্রহ করে রাখতেন নানার মতোই যত্নে, পুরোনো বইয়ের ভাঁজে। স্বাধীন বাংলাদেশে এ পর্যন্ত যত নোট আর পয়সার প্রচলন হয়েছে তারা সবই রয়েছে তার সংগ্রহে। এ ছাড়া ইরান, ইরাক, সৌদি আরব, আমেরিকা, ইংল্যান্ড, মালদ্বীপ, নেপাল, ভুটান, ভারত, নাইজেরিয়া, সিয়েরা লিওন, ইথিওপিয়া, আফগানিস্তান, ইকুয়েডর, পাকিস্তান, চীন, কুয়েত, কাতার, শ্রীলঙ্কা, ভিয়েতনাম, কম্বোডিয়া, ইন্দোনেশিয়া, রাশিয়া, সুদানসহ ১৩৭ দেশের কাগুজে নোট রয়েছে। বাচ্চুর দাবি, তার সংগ্রহে থাকা বিদেশি মুদ্রার বর্তমান বাজার মূল্য প্রায় ১৯ লাখ টাকা।
তিনি আরও জানান, টাকার খোঁজে দেশের বিভিন্ন প্রান্তে ছুটে গেছেন। কখনো কখনো দুই থেকে তিন গুণ টাকা দিয়েও নোট সংগ্রহ করেছেন। সৌদি আরব ও ভারতে নিজে গিয়ে মুদ্রা সংগ্রহ করেছেন। আর অন্যান্য দেশে থাকা পরিচিতজনের মাধ্যমেও সংগ্রহ করেছেন বেশিরভাগ। জমানো এসব নোট বা মুদ্রা বিক্রির চিন্তা করেননি কখনোই; বরং দিন দিন সমৃদ্ধ করার চিন্তাই তার একমাত্র নেশা। এই বয়সেও সেই নেশা থেমে যায়নি। এখনো সংগ্রহে নেই এমন কোনো শের মুদ্রার খোঁজ পেলে যে কোনো মূল্যে তা নিজের করে রাখতে প্রাণান্ত চেষ্টা করেন। দরকারবোধে কেনার জন্য দূরদূরান্তে ছুটে যান।
মাঝেমধ্যেই ছেলেমেয়ে, নাতি-নাতনিসহ পরিবারের সবাইকে নিয়ে বসেন। পরিচয় করিয়ে দেন মুদ্রার সংগ্রহশালার সঙ্গে। এক এক করে বলতে থাকেন দেশের ও মুদ্রার নাম। গড় গড় বলে দিতে পারেন বাংলাদেশ ব্যাংকের ১০ গভর্নরের নামও।
মাহফুজার রহমান জানান, ছোটবেলায় শখ বড় হয়ে রূপ নেয় নেশায়। সৌদি আরব ও ভারতে গিয়েও মুদ্রা সংগ্রহ করেছি। বিদেশি এক টাকার নোট বাংলাদেশের ৫ হাজার টাকা দিয়েও কিনেছি এমন নজিরও আছে।
তিনি আরও বলেন, বর্তমান ও পরবর্তী প্রজন্ম যেন এগুলো দেখে আমার স্মৃতি মনে করে, সেটাই চাই। মৃত্যুর আগে একমাত্র নাতি নাহিদুর রহমান নাহিদকে গচ্ছিত মুদ্রাগুলো দিয়ে যাবো। চাইব, সে যেন, আমার মতো করেই এগুলো আগলে রাখে।
মেয়ে মহুয়া সুলতানা বলেন, আব্বু অনেক কষ্টের বিনিময়ে এগুলো সংগ্রহ করেছেন। ছোট থেকেই ভাইবোনরা তাকে এগুলা জমাতে দেখছি। তার সংগ্রহে দেশের পাশাপাশি বিপুল বিদেশি মুদ্রা আছে, এটা আমাদের কাছে গর্বের। আমার ধারণা, দেশে তিনিই একমাত্র যার সংগ্রহে এত দেশের নোট আছে। এটা তার শখ বলে পরিবারের সবাই মিলে সবসময় উৎসাহ দিই।