
বিসিএস স্বাস্থ্য ক্যাডারের কর্মকর্তারা বড় সুখবর পেতে যাচ্ছেন । সহকারী অধ্যাপক , সহযোগী অধ্যাপক ও অধ্যাপক পদে পদোন্নতি দিতে চিকিৎসকদের জন্য হাজার ৩০ টি সংখ্যাতিরিক্ত ( সুপারনিউমারারি ) পদ সৃষ্টি করতে যাচ্ছে অন্তর্বর্তী সরকার । এর মধ্যে অধ্যাপকের ১৫০ টি , সহযোগী অধ্যাপকের ৮৫০ ও সহকারী অধ্যাপকের ২ হাজার ৩০ টি পদ থাকবে । মন্ত্রিপরিষদ সচিব ড . শেখ আব্দুর রশীদের সভাপতিত্বে আগামীকাল রোববার প্রশাসনিক উন্নয়ন-সংক্রান্ত সচিব কমিটির সভায় ৩ হাজার ৩০ টি পদ সৃষ্টির প্রস্তাব অনুমোদনের জন্য উত্থাপনের কথা রয়েছে ।
সচিব কমিটিতে পাঠানো স্বাস্থ্য সেবা বিভাগের প্রস্তাবে বলা হয়েছে , পদের অভাবে পদোন্নতির সুযোগ না থাকায় স্বাস্থ্য ক্যাডারে বিপুলসংখ্যক চিকিৎসককে মেডিকেল অফিসারের পদ থেকেই অবসরে যেতে হচ্ছে । সহকারী অধ্যাপক , সহযোগী অধ্যাপক ও অধ্যাপকের স্থায়ী পদ কম থাকায় মেডিকেল কলেজ , ডেন্টাল কলেজ ও বিশেষায়িত প্রতিষ্ঠানের চিকিৎসা শিক্ষা এবং সেবা কার্যক্রম ব্যাহত হচ্ছে ।
প্রসঙ্গত , যথেষ্ট স্থায়ী পদ না থাকায় সংখ্যাতিরিক্ত পদ সৃষ্টি করে প্রশাসন ও পুলিশ ক্যাডারের কর্মকর্তাদের পদোন্নতি দিয়ে আসছে সরকার । চিকিৎসা শিক্ষার গুণগত মান বাড়ানো, বিপুলসংখ্যক রোগীর বিশেষায়িত ও ক্লিনিক্যাল সেবা নিশ্চিত করা এবং বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকদের কর্মক্ষেত্রের হতাশা দূর করে সামাজিক ও পেশাগত মর্যাদা বাড়ানোর লক্ষ্যে স্বাস্থ্য ক্যাডারের কর্মকর্তাদের জন্য সংখ্যাতিরিক্ত পদগুলো সৃষ্টির প্রস্তাব করেছে স্বাস্থ্য সেবা বিভাগ । এতে স্বাস্থ্য উপদেষ্টার সম্মতি রয়েছে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা ।
স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের আওতাধীন বিভিন্ন শ্রেণিতে চিকিৎসকদের জন্য ৩৬ হাজার ৯২১ টি ক্যাডার পদ রয়েছে । সহকারী অধ্যাপকের পদ রয়েছে ৩ হাজার ৫৯ টি । এ ছাড়া সহযোগী অধ্যাপকের ১ হাজার ৯৬০ ও অধ্যাপকের ১ হাজার ৫৯ টি পদ রয়েছে । অর্থাৎ বিসিএস পাসের পর চিকিৎসক হিসেবে চাকরিতে যোগ দিয়ে ৬ হাজার ৭৮ জন কর্মকর্তার মেডিকেল অফিসার থেকে ওপরের ওই ধাপগুলোতে পদোন্নতির সুযোগ রয়েছে । নতুন ৩ হাজার ৩০ টি পদ সৃষ্টি হলে ৯ হাজার ১০৮ চিকিৎসকের পদোন্নতির সুযোগ তৈরি হবে ।
সূত্র জানায় , চিকিৎসকদের পদোন্নতির জন্য সহকারী অধ্যাপক , সহযোগী অধ্যাপক ও অধ্যাপকের সংখ্যাতিরিক্ত পদ সৃষ্টির প্রস্তাবের পরিপ্রেক্ষিতে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় প্রথম পর্যায়ে এক বছরের জন্য অস্থায়ীভাবে রাজস্ব খাতে ৩ হাজার ৩০ টি পদ সৃষ্টির সম্মতি দিয়েছে । এরপর অর্থ বিভাগের ব্যয় ব্যবস্থাপনা অনুবিভাগও শর্তসাপেক্ষে সম্মত হয়েছে এতে । এ বিষয়ে অর্থ বিভাগের বাস্তবায়ন অনুবিভাগের বেতন গ্রেড ভেটিংও নিয়েছে স্বাস্থ্য সেবা বিভাগ ।
স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় বলছে , সংখ্যাতিরিক্ত পদে পদোন্নতিযোগ্য চিকিৎসকেরা ইতিমধ্যে সংশ্লিষ্ট গ্রেডে বেতন - ভাতা পাচ্ছেন । ফলে নতন ৩ হাজার ৩০ টি পদ সৃষ্টি করে তাঁদের পদোন্নতি দিলেও সরকারের বাড়তি কোনো খরচ হবে না ।‘ মহিলা’ শব্দ বাদ, আসছে‘ নারী’: মহিলা ও শিশুবিষয়ক মন্ত্রণালয় , মহিলাবিষয়ক অধিদপ্তর , জাতীয় মহিলা সংস্থা ও উপজেলা মহিলাবিষয়ক কর্মকর্তার পদ থেকে ' মহিলা ' শব্দটি বাদ দিয়ে ‘ নারী ’ শব্দ যোগ করতে যাচ্ছে সরকার । নাম পরিবর্তনের এই প্রস্তাবও প্রশাসনিক উন্নয়ন-সংক্রান্ত সচিব কমিটিতে পাসের জন্য উত্থাপনের কথা রয়েছে ।
সূত্র জানায় , ২০২৪ সালের ২৫ ফেব্রুয়ারি মহিলা ও শিশুবিষয়ক মন্ত্রণালয়-সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির বৈঠকে মন্ত্রণালয়টির নাম পরিবর্তন করে নারী ও শিশুবিষয়ক মন্ত্রণালয় করার প্রস্তাব করা হয় । এরপর গত বছরের ৭ জুলাই তৎকালীন প্রতিমন্ত্রীর সভাপতিত্বে আন্তমন্ত্রণালয় সভা এবং গত ২৭ অক্টোবর মহিলা ও শিশুবিষয়ক উপদেষ্টার সভাপতিত্বে দ্বিতীয় আন্তমন্ত্রণালয় সভায় সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় , অধিদপ্তর ও সংস্থার নাম এবং কর্মকর্তার পদবির ক্ষেত্রে ‘ নারী ’ দিয়ে ‘ মহিলা ’ শব্দটি প্রতিস্থাপন করার সিদ্ধান্ত হয় ।
নারী অধিকার আন্দোলনকর্মীদের অনেকে বলে আসছেন, মহিলা শব্দটি এখন আর সময়োপযোগী নয় এবং জেন্ডার সচেতনতার দৃষ্টিকোণ থেকে অগ্রহণযোগ্য । ১৯৮৯ সালে সমাজকল্যাণ মহিলাবিষয়ক মন্ত্রণালয়কে ভাগ করে সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয় এবং মহিলাবিষয়ক মন্ত্রণালয় — এ দুটি মন্ত্রণালয় গঠন করা হয় । ১৯৯৪ সালে শিশুবিষয়ক কার্যক্রম সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয় থেকে স্থানান্তর করে মহিলাবিষয়ক মন্ত্রণালয়ে অন্তর্ভুক্তির পর এর নামকরণ করা হয় মহিলা ও শিশুবিষয়ক মন্ত্রণালয় ।
আরও কিছু পদ সৃষ্টির প্রস্তাব : এ ছাড়া আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের সাংগঠনিক কাঠামোতে ৩৯ টি পদ সৃষ্টি, পরিকল্পনা বিভাগের সাংগঠনিক কাঠামোতে রাজস্ব খাতে অস্থায়ীভাবে ৮৩ পদ সৃষ্টি , পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সাংগঠনিক কাঠামোতে পররাষ্ট্র ক্যাডারের নবসৃষ্ট ৪৭ পদের বিপরীতে স্বদেশভিত্তিক ৩০ টি পদ রাজস্ব খাতে অস্থায়ীভাবে সৃষ্টি, ৬ টি আধুনিক খাদ্য পরীক্ষাগারের জন্য রাজস্ব খাতে অস্থায়ীভাবে ২৪ পদ সৃজন, সরকারি হওয়া ৬ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষক- কর্মচারীর জন্য ৭৮ টি পদ সৃষ্টি ও নৌপরিবহন কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যানের পদকে গ্রেড - ১ - এ উন্নীত করার প্রস্তাব পাসের জন্য প্রশাসনিক উন্নয়ন- সংক্রান্ত সচিব কমিটিতে উত্থাপনের কথা রয়েছে ।