
মাথায় এখনো তিনটি রাবার বুলেট। প্রায়ই ব্যথায় অস্থির হয়ে পড়েন। আর ঝিমঝিম ভাব তো আছেই। আঁতকে উঠেন হঠাৎ হঠাৎ। যন্ত্রণা থেকে মুক্ত হওয়ার কোনো পথও খোলা নেই তার। কেননা চিকিৎসা ব্যয় মেটাতে যে টাকা দরকার তা তার নেই।
এভাবেই আমার দেশকে নিজের অনুভূতি ব্যক্ত করলেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে গুরুতর আহত নেত্রকোনার পূর্বধলা উপজেলার সদর ইউনিয়নের কৃষ্ণপুর তারাকান্দা গ্রামের মোহাম্মদ কাইয়ুম।
জানা যায়, কাইয়ুম পেশায় একজন গার্মেন্টকর্মী। দরিদ্র বাবার সংসারের হাল ধরতে ২০২৪ সালের জুনে গাজীপুরের সখিপুর এলাকায় একটি গার্মেন্টে চাকরি নেন তিনি। বেশ ভালোই চলছিল সবকিছু। এমন সময় শুরু হয় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন। আন্দোলন যখন তীব্র হয়ে উঠল তখন ৪ আগস্ট বিকালে সখিপুর আনসার ক্যাম্পের পাশে আন্দোলনে যোগ দেন তিনি। এ সময় আনসারের পোশাক পরিহিত একদল মুখোশধারী ছাত্র-জনতার মিছিলটিকে ছত্রভঙ্গ করতে টিয়ার শেল ও রাবার বুলেট ছোড়ে। রাবার বুলেটের আঘাতে ক্ষতবিক্ষত হন কাইয়ুম।
আরো জানা যায়, কাইয়ুমের মাথায়, পিঠে ও হাতে ৪০-৪৫টির মতো রাবার বুলেট লাগে। এ অবস্থায় তাকে ভর্তি করা হয় স্থানীয় একটি প্রাইভেট হাসপাতালে। সেখানে চিকিৎসক হাতে ও পিঠে বিদ্ধ বুলেট বের করলেও মাথায় রয়ে যায় পাঁচটি বুলেট। সেই বুলেটের যন্ত্রণা নিয়ে কাইয়ুম ভর্তি হন শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে। সেখানে অস্ত্রোপচারের মাধ্যমে মাথা থেকে দুটি বুলেট বের করতে পারলেও এখনো তার মাথায় রয়ে গেছে তিনটি বুলেট।
কাইয়ুম বলেন, সেদিন মৃত্যুর কাছাকাছি গিয়ে ফিরে এলেও সেই ভয়ংকর শব্দ এখনো শুনতে পাই। মাথায় শব্দ ভর করে আছে। কঠিন যন্ত্রণা ভোগ করছি। ডাক্তার বলেছে, বুলেটগুলো বের করতে অপারেশন করতে হবে, অনেক টাকা লাগবে। টাকা তো নেই। তাই অপারেশন হচ্ছে না।
হতাশ কণ্ঠে জুলাইয়ের এ যোদ্ধা বলেন, এরই মধ্যে ধারদেনা করে চিকিৎসার জন্য অনেক অর্থ ব্যয় করে ফেলেছি। অনেক ঋণ করে ফেলেছি। জানি না সেই ঋণ কীভাবে পরিশোধ করব।
কাইয়ুমের বাবা হান্নান মিয়া বলেন, আমার বয়স হয়ে গেছে। কাম-কাজ করতে পারি না। আমার দুই ছেলে ও দুই মেয়ের মধ্যে কাইয়ুম বড় তার কামের ট্যাকা দিয়া আমাদের সংসারটা চলত। আল্লাহই ভালো জানেন কীভাবে চলব। আর কীভাবেই যে অপারেশনের ট্যাকা জোগাড় করব। অপারেশন না করলে আমার ছেলের আরো ক্ষতি হয় নাকি সেই চিন্তায় আছি। কার কাছে গেলে সাহায্য পামু।
পূর্বধলা উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) রেজওয়ানা কবীর জানান, এরই মধ্যে জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে আহত কাইয়ুমসহ প্রত্যেককে ১০ হাজার টাকা করে অনুদান দেওয়া হয়েছে। আহতদের মধ্যে যাদের একেবারেই চিকিৎসা করার সামর্থ্য নেই তারা আবেদন করলে আমরা বিষয়টি দেখব।