Image description

প্রেমের টানে এক তরুণীর বাড়িতে দেখা করতে ক্ষেতলালে এসে আটক হয়েছেন সান্তাহারের খাদ্য পরিদর্শক ইউসুফ আলী (৫০)। প্রেমিকার বাড়িতে দুই দিন আটকে রেখে দেনদরবারের একাধিক ভিডিওচিত্র সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভাইরাল হয়েছে। 

মঙ্গলবার  উপজেলার মামুদপুর ইউনিয়নের সমন্তাহার গ্রামে এ ঘটনা ঘটে। 

আটক ইউসুফ আলী নওগাঁ জেলার সান্তাহার উপজেলা খাদ্য পরিদর্শক হিসেবে কর্মরত রয়েছেন। ইউসুফ আলী সিরাজগঞ্জের শাহজাদপুর উপজেলার ঘোরশাল গ্রামের গোলাম রব্বানী আকন্দের ছেলে। 

জানা গেছে, জয়পুরহাটের ক্ষেতলাল উপজেলার সমন্তাহার গ্রামের এক তরুণীর সঙ্গে প্রেমের সম্পর্ক গড়ে ওঠে বয়স্ক ইউসুফ আলীর। দীর্ঘ চার বছর ধরে চলে তাদের সেই সম্পর্ক। বাড়ি ও অফিসে যাতায়াত ছিল দুজনেরই। মঙ্গলবার দুপুর ২টায় তার এক কিশোরী সঙ্গীনীকে নিয়ে ওই তরুণীর বাড়িতে আসেন ইউসুফ আলী। এরপর ওই তরুণী প্রতিবেশীদের সহযোগিতায় তার বাড়িতে ইউসুফকে আটকে রাখেন এবং মোটা অংকের দেনমোহরে বিয়ে করতে চাপ দেন। ঘটনাটি এলাকায় ছড়িয়ে পড়লে তাদের দেখতে মানুষ জড়ো হন ওই তরুণীর বাড়িতে। 

 

পরে স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরা ঘটনাটি বিয়ের মাধ্যমে সমাধানের জন্য দফায় দফায় বৈঠকে বসেন। ইউসুফ বিয়ে করতে রাজি না হওয়ায় মোড়লরা সমাধানে ব্যর্থ হলে উৎসুক জনতা ক্ষিপ্ত হন। তাদের থামাতে ৯৯৯ নাম্বারে ফোন দিয়ে পুলিশের সহযোগিতা চাইলে রাত ১১টার দিকে তাদের উদ্ধার করতে ক্ষেতলাল থানা পুলিশ ঘটনাস্থলে যায়। তবে উৎসুক জনতার তোপের মুখে পুলিশ ফিরে যায়।

পরের দিন বুধবার বিষয়টি নিয়ে স্থানীয়রা আবার দেনদরবারে বসেন। একপর্যায়ে ১১ লাখ টাকা তরুণীর পরিবারকে দিয়ে রফাদফা করার চেষ্টা করেন; কিন্তু ওই তরুণী বিয়ে ছাড়া কোনো অবস্থাতেই টাকার বিনিময়ে আপস করতে রাজি হচ্ছিলেন না। 

এরপর ঘটনাটি অন্যদিকে মোড় নেয়। স্থানীয় মোড়লরা মোটা অংকের টাকার নেশায় আবার দ্বিতীয়বার থানা পুলিশের আশ্রয় নেন। পুলিশ অভিযোগের ভিত্তিতে বুধবার রাত ১০টায় খাদ্য পরিদর্শক ইউসুফ ও তার সঙ্গীনী কিশোরীকে ওই তরুণীর বাড়ি থেকে উদ্ধার করে থানায় নিয়ে যায়। ইউসুফ আলী ওই তরুণীর বিরুদ্ধে কোনো অভিযোগ না করায় একটি মুচলেকা নিয়ে তাদের ছেড়ে দেয় পুলিশ।

এদিকে ভুক্তভোগী ওই তরুণীর ভিডিও বক্তব্য সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভাইরাল হয়েছে। এতে তিনি বলেছেন, ইউসুফের সঙ্গে আমার দীর্ঘদিনের প্রেমের সম্পর্ক৷ তিনি আমার বাড়িতে বিয়ে করতে আসেন৷ দেনমোহর নিয়ে দরকষাকষি হলে প্রতিবেশী প্লাবন ভাইয়ের শরণাপন্ন হই৷ খবর পেয়ে সন্ধ্যায় স্থানীয় প্যানেল চেয়ারম্যান উপস্থিত হন৷ তিনি বিয়ের ব্যবস্থা না করে টাকার প্রলোভন দেখান। 

পরের দিন একপর্যায়ে প্লাবনের মাধ্যমে ইউসুফের ব্যাংক অ্যাকাউন্ট থেকে ১১ লাখ টাকা তুলে তার বাড়িতে নিয়ে আসেন৷ কোনো সমাধান না হওয়ায় টানা দুদিন আমার বাড়িতেই ইউসুফ অবস্থান করেন। গতরাতে পুলিশ এসে ইউসুফকে নিয়ে গেছে। তার সঙ্গে টাকা ছিল, তারা টাকাপয়সা খেয়ে ইউসুফকে পালিয়ে যেতে সহযোগিতা করেছে। ইউসুফের সঙ্গে আমাকে থানায় নেওয়া হয়নি৷ 

তরুণী আরও বলেন, ‘পুলিশের এ অনিয়মে আমি গভীরভাবে শোকাহত। যারা এর সঙ্গে জড়িত তাদের বিরুদ্ধে মামলা করব’।

খাদ্য পরিদর্শক ইউসুফ আলীর মোবাইলে একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা করেও তার নাম্বারটি বন্ধ পাওয়া যায়।

এ বিষয়ে প্লাবন চৌধুরী বলেন, থানায় নেওয়া ও টাকাপয়সা লেনদেনের বিষয়ে আমি কিছুই জানি না। আমার নামে যদি কেউ বলে থাকে তাহলে তা উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে আমাকে ফাঁসানো হয়েছে।

ওই বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন স্থানীয় ইউনিয়নের প্যানেল চেয়ারম্যান মিলন মণ্ডল। তিনি বলেন, দুই দিন যাবৎ দেনদরবারে সমাধান না হওয়ায় তাকে থানা পুলিশে দেওয়া হয়েছে।

এ বিষয়ে ক্ষেতলাল থানার উপপরিদর্শক ওসি দীপেন্দ্রনাথ সিং বলেন, অভিযোগের ভিত্তিতে সমন্তাহার গ্রামে নওগাঁ জেলার সান্তাহার উপজেলা খাদ্য পরিদর্শক ইউসুফ আলী নামের এক ব্যক্তিকে আটকে রেখেছিলেন। পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে তাকে উদ্ধার করেছে। ওই তরুণীর বিরুদ্ধে কোনো অভিযোগ না থাকায় তাকে মুচলেকা নিয়ে ছেড়ে দিয়েছি। ওই তরুণী অভিযোগ করলে তদন্তসাপেক্ষে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।