Image description
যুক্তরাষ্ট্র ২০২১ সালের ডিসেম্বরে এলিট বাহিনী র‌্যাবের ওপর নিষেধাজ্ঞা দেওয়ার পর থেকে সম্পর্কের টানাপড়েন শুরু হয় ঢাকা-ওয়াশিংটনের মধ্যে।
 
এরপর গত মে মাসে নির্বাচন ইস্যুতে বাংলাদেশ নিয়ে ভিসানীতি প্রকাশ করে বিবৃতি দেন দেশটির পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিঙ্কেন। তবে সংশ্লিষ্টরা বলছেন, নিষেধাজ্ঞা দেওয়ার পরও দুই পক্ষের মধ্যে ব্যাপক সম্পৃক্ততা বেড়েছে। যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষ থেকে একাধিক উচ্চ পর্যায়ের সফর হয়েছে। এর মধ্য দিয়ে দুই দেশের মধ্যে টানাপড়েন কমেছে।
র‌্যাবের ওপর নিষেধাজ্ঞা জারির পর যুক্তরাষ্ট্রের রাজনীতিবিষয়ক আন্ডার সেক্রেটারি ভিক্টোরিয়া নুল্যান্ড ২০২২ সালের মার্চে ঢাকায় এসে র‌্যাব ইস্যুতে বলেছিলেন, এ বিষয়ে তাদের কিছু করার নেই। নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহারে নির্দিষ্ট প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে যেতে হবে। এরপর যুক্তরাষ্ট্র প্রশাসনের পক্ষ থেকে আরও উচ্চ পর্যায়ের ব্যক্তির ঢাকা সফর হয়েছে, যেখানে দুই পক্ষের সম্পর্কের একাধিক ইস্যু নিয়ে আলোচনা হয়েছে। গত জানুয়ারিতে যুক্তরাষ্ট্রের দক্ষিণ ও মধ্য এশিয়াবিষয়ক সহকারী পররাষ্ট্রমন্ত্রী ডোনাল্ড লু ঢাকা সফর করেন। ওই সফরে তিনি র‌্যাবের প্রশংসা করেছিলেন। তবে তিনিও আন্ডার সেক্রেটারি ভিক্টোরিয়া নুল্যান্ডের মতো বলেন, নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহারে নির্দিষ্ট প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে যেতে হবে। সর্বশেষ গত সপ্তাহে যুক্তরাষ্ট্রের আন্ডার সেক্রেটারি আজরা জেয়ার নেতৃত্বে একটি প্রতিনিধি দল বাংলাদেশ সফর করে গেছে। এ সফরে র‌্যাব ইস্যুতে তিনি বলেছেন, নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহারে সংস্থাটির সংস্কার প্রয়োজন।
 
ঢাকার কূটনীতিকরা বলছেন, ভাবার কোনো কারণ নেই যে, যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে বাংলাদেশের টানাপড়েন বেড়েছে। মাঝে টানাপড়েন বেড়েছিল; কিন্তু দুই পক্ষের সম্পৃক্ততা আর খোলামেলা আলোচনার মাধ্যমে সম্পর্কের দূরত্ব অনেক কমেছে। সর্বশেষ সফরে যুক্তরাষ্ট্রের আন্ডার সেক্রেটারি আজরা জেয়া নির্বাচন ইস্যুতে বাংলাদেশ সরকারের ওপর যে আস্থা প্রকাশ করেছেন তা সম্পর্কের উন্নতির বিষয়ে অনেক কিছু প্রকাশ করে। নির্বাচন ইস্যুতে নির্বাচনকালীন সরকার বা অন্যান্য ইস্যুতে যুক্তরাষ্ট্রের কোনো চাওয়া নেই। তারা শুধু শান্তিপূর্ণ নির্বাচন দেখতে চায়, যা সরকারের পক্ষ থেকে তাদের শতভাগ আশ্বস্ত করা হয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রের আন্ডার সেক্রেটারি বলেন, তার দেশ বাংলাদেশের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় ইস্যুতে দীর্ঘমেয়াদি শক্তিশালী সম্পর্ক রাখতে চায়। বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়াকে এগিয়ে নিতে যুক্তরাষ্ট্র সহযোগিতা করতে প্রস্তুত। বৈশ্বিক মানবাধিকার পলিসি সমর্থনের অংশ হিসেবে বাংলাদেশে গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়া এগিয়ে নিতে পাশে থাকবে ওয়াশিংটন।
প্রধানমন্ত্রীর বেসরকারি শিল্প ও বিনিয়োগ উপদেষ্টা সালমান এফ রহমান বলেন, মার্কিন প্রতিনিধি দলের সঙ্গে খোলামেলা আলোচনা হয়েছে। ভিসানীতি নিয়ে তারা বলেছেন, এতে কাউকে বা কোনো দলকে টার্গেট করা হয়নি। আসন্ন নির্বাচন সুষ্ঠু করতে ইতিমধ্যে অঙ্গীকার করেছেন প্রধানমন্ত্রী, সেই অঙ্গীকারকে সমর্থন করেই তারা ভিসানীতি প্রকাশ করেছে। মার্কিন প্রতিনিধি দলের এ সফর নিয়ে ঢাকা-ওয়াশিংটন উভয়পক্ষই সন্তুষ্ট। কারণ তারা বলেছে, তারা শান্তিপূর্ণ নির্বাচন চায়, এটা আমরাও বলেছি। তিনি আরও বলেন, দুই দেশের মধ্যে কিছু ভুল বোঝাবুঝি আছে। দুই বন্ধুর মধ্যে ভুল বোঝাবুঝি হতেই পারে। কিন্তু এ ভুল বোঝাবুঝি সংশোধনের পদ্ধতিটা হলো দুই পক্ষের মধ্যে আরও সম্পৃক্ততা বাড়ানো। আমরা যুক্তরাষ্ট্রকে স্বাগত জানিয়েছি। আমাদের মধ্যে ভুল বোঝাবুঝি ছিল র‌্যাবের ওপর নিষেধাজ্ঞা দেওয়া নিয়ে। এর আগে যখন ডোনাল্ড লু এসেছিলেন তখন গুজব ছিল যে তিনি আরও নিষেধাজ্ঞা দেওয়ার বার্তা নিয়ে এসেছেন। কিন্তু তিনি এসে উল্টো র‌্যাবের প্রশংসা করলেন। দুই পক্ষের মধ্যে অনেক সম্পৃক্ততা বাড়ায় যে ভুল বোঝাবুঝি ছিল তার দূরত্ব কমেছে।
 
পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী মো. শাহরিয়ার আলম সময়ের আলোকে বলেন, এর আগে ডোনাল্ড লু এবং এবার আজরা জেয়ার সফর নিয়ে একটি পক্ষ গুজব সৃষ্টি করেছিল যে, তারা এসে আরও নিষেধাজ্ঞা দেবেন। কিন্তু এগুলো তাদের নিয়মিত সফরের অংশ। এগুলো কখনই বিশেষ সফর নয়। তারা শুধু বাংলাদেশের নির্বাচনের এজেন্ডা নিয়ে এ সফরে আসেননি। তারা বাংলাদেশে আসার আগে আরও একটি দেশ সফর করেছেন।
 
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক অধ্যাপক ইমতিয়াজ আহমেদ এ প্রতিবেদককে বলেন, সর্বশেষ সফরের কারণে দুই পক্ষের সম্পর্কে দূরত্ব কমেছে তা বলা মুশকিল। কেননা দুই পক্ষের সম্পর্কে আগে থেকেই টানাপড়েন চলছিল এবং শুরু থেকে যেখানে ছিল এখনও সেখানেই আছে। তবে আমেরিকা তাদের অবস্থান পরিষ্কার করেছে, তারা আসন্ন নির্বাচন অনুষ্ঠান নিয়ে কী চায়। আমেরিকা পরিষ্কার করেছে, সংবিধান পরিবর্তন বা কেয়ারটেকার সরকার এগুলো তাদের বিষয় নয়। তারা চায়, নির্বাচনে যেন ভোটাররা অংশ নিতে পারে, সেখানে কোন দল এলো বা না এলো তা নিয়ে তাদের কোনো মাথাব্যথা নেই।
 
সাবেক পররাষ্ট্র সচিব তৌহিদ হোসেন বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিনিধি দলের সর্বশেষ বাংলাদেশ সফর ভালো হয়েছে। এ সফরে প্রতিনিধি দলটি সরকারকে এমন কোনো বার্তা দিতে পারে, যা এখনও প্রকাশ পায়নি।
 
সাবেক পররাষ্ট্র সচিব শমসের মবিন চৌধুরী এ প্রতিবেদককে বলেন, সর্বশেষ যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিনিধি দল বাংলাদেশ সফরে এসে এ বার্তা দিয়েছে যে, তাদের শত্রু মনে করার কোনো কারণ নেই। তারা বাংলাদেশকে সহযোগিতা করতে পাশে আছে।
 
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক আসিফ সাহান বলেন, আমি আগেই বলেছিলাম, বর্তমান সরকারের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের টানাপড়েন চূড়ান্ত পর্যায়ে পৌঁছেনি। সর্বশেষ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিনিধি দলের সফরে সেটাই দেখা গেছে। তারা সরকারের অঙ্গীকারের ওপর আস্থা প্রকাশ করেছে, যা ইতিবাচক।