
রাজধানীর ব্যস্ততম এলাকা নিউ মার্কেট থেকে সায়েন্সল্যাব মোড় পর্যন্ত সড়কজুড়ে প্রায়ই রণক্ষেত্রের চিত্র দেখা যায়। কারণ—মাত্র দেড় কিলোমিটার এলাকার মধ্যে অবস্থিত তিনটি জনপ্রিয় শিক্ষা প্রতিষ্ঠান: ঢাকা কলেজ, সিটি কলেজ ও আইডিয়াল কলেজ। এসব কলেজের প্রায় ২০-২৫ হাজার শিক্ষার্থীর উপস্থিতিতে এলাকা থাকে সবসময় সরগরম। কিন্তু প্রায়শই তুচ্ছ ঘটনার জেরে সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়ছে এসব শিক্ষার্থীরা।
তিন কলেজের শিক্ষার্থীদের মধ্যে হাতাহাতি, ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া, এমনকি রক্তাক্ত সংঘর্ষের ঘটনাও অহরহ। বেশ কিছু ঘটনায় দেখা গেছে—কোচিং সেন্টারে বসা নিয়ে বিতণ্ডা, চায়ের দোকানে কথার লড়াই, প্রেমঘটিত বিষয়, এমনকি ফেসবুক বা টিকটকে মন্তব্য নিয়ে সৃষ্টি হচ্ছে উত্তেজনা। এক ছাত্র বলেন, “কেউ একটু হাত তোলে, তখনই দেখা যায় সিনিয়ররা সেটা নিতে পারছে না। তুচ্ছ কারণেই শুরু হয় ঝগড়া।”
ঘটনার সময় নিউ মার্কেট থেকে সায়েন্সল্যাব পর্যন্ত রাস্তা বন্ধ হয়ে যায়, আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে আশপাশের দোকানপাট, ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ও স্থানীয় বাসিন্দাদের মাঝে। অনেক পথচারীও সংঘর্ষে আহত হন। একজন রিকশাচালক বলেন, “আমরা তো হাটে যাই, রিকশা চালাই—হঠাৎ মারামারি, ইটপাটকেল, তখন বাঁচি কি মরি।”
শিক্ষার্থী ও অভিভাবকরা বলছেন, গুটিকয়েক উচ্ছৃঙ্খল ছাত্রের জন্য কলঙ্কিত হচ্ছে তিন কলেজের সুনাম। “ছেলেরা এত অল্পতেই কেন উত্তেজিত হয়ে পড়ে? এটা আসলে মূল্যবোধ আর শিক্ষার অভাব,” বলেন এক অভিভাবক।
পুলিশ জানায়, ঢাকা কলেজে প্রতি মাসে ৭-৮টি, সিটি কলেজে ৬-৭টি এবং আইডিয়াল কলেজে ৫-৬টি সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। এদের অনেকেই বুঝে না কেন মিছিলে যাচ্ছে, কী কারণে সংঘর্ষে জড়াচ্ছে।
শৃঙ্খলা ফেরাতে তিন কলেজের মধ্যে যৌথ টহল টিম গঠন করা হয়েছে। নিয়মিত ক্লাসে গিয়ে শিক্ষার্থীদের দেওয়া হচ্ছে মোটিভেশনাল বক্তব্য। কলেজ প্রশাসন বলছে, “শৃঙ্খলা ভঙ্গ করলে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে, এমনকি অনেককে টিসিও দেওয়া হয়েছে।”
তবে সমস্যার একটি বড় দিক হলো—এক কলেজ থেকে টিসি পেলে ছাত্র অন্য কলেজে ভর্তি হয়ে যায়। এই কারণে নতুন সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে: “এই এলাকার পাঁচ কলেজ সিদ্ধান্ত নিয়েছে—একবার টিসি পেলে আর কোনো কলেজই তাকে ভর্তি নেবে না।”
বিশেষজ্ঞদের মতে, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, অভিভাবক, আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ও সরকারের যৌথ উদ্যোগ ছাড়া এই সমস্যা থেকে উত্তরণ সম্ভব নয়। “এটা কেবল শিক্ষার ব্যর্থতা নয়, রাষ্ট্রেরও ব্যর্থতা। এখন সময়—সরকারের আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীগুলোকে আরও সক্রিয় হওয়ার,” বলেন এক বিশেষজ্ঞ।
সমাধান কী হতে পারে?
- অভিভাবকদের সচেতনতা বৃদ্ধি
- সামাজিক মাধ্যমের নেতিবাচক প্রভাব রোধ
- কোচিং সেন্টারগুলোর পরিবেশ তদারকি
- শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে সমন্বিত নীতিমালা
- আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর দ্রুত ব্যবস্থা
তিন কলেজের শিক্ষকদের একটাই বার্তা, “আমরা চাই, শিক্ষার্থীরা নিরাপদে পড়াশোনা করুক, ভবিষ্যৎ গড়ুক। না যে তাদের জন্য, না সমাজের জন্য কোনো বিপর্যয় ডেকে আনুক।”