Image description

সিলেটের তৃতীয় সর্বোচ্চ বিদ্যাপীঠ হচ্ছে সিলেট মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়। সিলেটবাসীর কাঙ্ক্ষিত একটি প্রতিষ্ঠান। ৬ বছরের অধিক সময় কেটে গেলেও এখনো কোনো কাঠামোই গড়ে তোলা সম্ভব হয়নি। এর মধ্যে দুই ভিসি চলে গেছেন। তাদের হাত ধরে এগুতে পারেনি নতুন এই বিশ্ববিদ্যালয়। উল্টো নানাভাবে বিতর্কিত হয়েছে। এসেছেন তৃতীয় ভিসি প্রফেসর ডা. ইসমাইল হোসেন পাটোয়ারী। দায়িত্ব নিয়ে তিনিও পড়েছেন চ্যালেঞ্জের মুখে। দুই মাসের মাথায় তাকে নিয়েও বিতর্ক দেখা দিয়েছে। তিনি অস্থায়ী ক্যাম্পাসে অফিসে বসছেন না। ২০১৮ সাল থেকে যাত্রা শুরু করে সিলেট মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়।

নতুন ভিসি হিসেবে নিয়োগ দেয়া হয় আওয়ামী লীগ ঘরানার শিক্ষাবিদ ও সাবেক মন্ত্রী পরিবারের জামাই প্রফেসর ডা. মোর্শেদ আহমদ চৌধুরীকে। তখন নগরের চৌহাট্টাস্থ সিভিল সার্জন কার্যালয়ের পাশে অস্থায়ী দাপ্তরিক অফিস নির্মাণ করে কার্যক্রম শুরু করা হয়। একইসঙ্গে নগরের দক্ষিণ সুরমায় সুনামগঞ্জ বাইপাসে মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ে ভূমি অধিগ্রহণের কাজ শুরু করা হয়। তখনকার মন্ত্রী, এমপিদের নিয়ে বার বার শোডাউন দেন। জানান দেন দ্রুততম সময়ের মধ্যে স্থায়ী ক্যাম্পাস নির্মাণের। কিন্তু কাজের কাজ কিছুই হয়নি। নানা দাপ্তরিক জটিলতায় এখনো ভূমি অধিগ্রহণের কাজটি ঝুলে রয়েছে। তবে বিশ্ববিদ্যালয় সূত্র জানিয়েছে- ভূমি অধিগ্রহণের কাজ চলমান রয়েছে। কিছু কিছু জটিলতা রয়েছে। সেগুলো উতরে দ্রুতই অধিগ্রহণপর্ব সমাপ্ত হবে। অন্যদিকে- স্থায়ী ক্যাম্পাসসহ একাডেমিক ও দাপ্তরিক কার্যক্রম শুরুর বিষয়টি শুরুতেই প্রশ্নবিদ্ধ করে ফেলেন প্রথম ভিসি প্রফেসর ডা. মোর্শেদ আহমদ চৌধুরী। বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি নিয়োগ পাওয়ার পর তিনি নিয়োগ প্রক্রিয়া শুরু করেন। ইউজিসি থেকে তাকে যে গাইডলাইন দেয়া হয়েছিল সেদিকে না গিয়ে ইচ্ছে মতো নিয়োগ দেন। সেখানে তিনি সীমাহীন বাণিজ্যেরও আশ্রয় নেন। এই বাণিজ্যের কারণে মোর্শেদ আহমদ চৌধুরী ও তার লুটপাট সিন্ডিকেটকে নিয়ে তুমুল বির্তক দেখা দেয়।

অভিযোগ উঠেছে- এই নিয়োগ বাণিজ্যে ৬০ থেকে ৬৫ কোটি টাকা বাণিজ্য হয়েছে। ওই সময় তিনি কোনো আইনকানুনের তোয়াক্কা না করেই প্রায় আড়াইশ জন কর্মকর্তা ও কর্মচারীকে নিয়োগ দেন। নিয়োগপ্রাপ্তদের মধ্যে ১৪০ জনের কোনো দাপ্তরিক অনুমতি ছিল না। নিয়োগ বাণিজ্যের অভিযোগ ওঠার পর তাকে নিয়ে বিতর্ক ছড়িয়ে পড়লে ভিসি পদ থেকে তাকে সরিয়ে দেয়া হয়। একইসঙ্গে দুদকের তরফ থেকে তদন্ত শুরু হয়। প্রাথমিক তদন্তে সত্যতা পাওয়ার পর দুদক মামলা করে। সর্বশেষ গত রোববার দুদকের তরফ থেকে সাবেক ভিসি মুর্শেদসহ ৫৮ জনের বিরুদ্ধে আদালতে চার্জশিট দাখিল করা হয়েছে। ফলে দুর্নীতি, তদন্ত শেষ হয়েছে। তবে গলার কাঁটা ভিসি মুর্শেদের নিয়োগপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ও কর্মচারীরা। তাদের ব্যাপারে কোনো সিদ্ধান্ত নেয়া হয়নি। এই অবস্থায় মোর্শেদ আহমদ চৌধুরীর পর ভিসি হওয়া প্রফেসর ডা. এনায়েত হোসেন গত নভেম্বরের অস্থায়ী ক্যাম্পাসে ঘেরাওয়ের মুখে পড়েন। সেনা সদস্যরা এসে তাকে উদ্ধার করে। ১৫ দিনের মধ্যে এ ব্যাপারে করণীয় নির্ধারণ করতে সিন্ডিকেট সভা আহ্বান করা হবে জানিয়েছিলেন ভিসি। ওই মাসের শেষ দিকে সিন্ডিকেট সভা আহবান করে অধ্যাপক ডা. নাজমুল ইসলামকে প্রধান করে একটি কমিটি করেন। একইসঙ্গে নতুন করে একটি বিজ্ঞপ্তিও প্রকাশ করা হয়। ওই বিজ্ঞপ্তির আলোকে ভিসি এনায়েত হোসেন পদত্যাগ করলেও চলতি বছরের ৩১শে জানুয়ারি ও ১লা ফেব্রুয়ারি তারা ভাইভা পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করেনি। পরে তারা একাডেমিক, মানবিকসহ নানা বিষয় বিবেচনা করে একটি রিপোর্ট প্রস্তুত করেন।

গত ২৬শে ফেব্রুয়ারি বিশ্ববিদ্যালয়ের নতুন ভিসি হিসেবে যোগ দেন অধ্যাপক ডা. ইসমাইল হোসেন পাটোয়ারী। তিনি যোগদানের পর গত ১৬ই মার্চ তার কাছে সুপারিশসহ প্রতিবেদন জমা দেন কমিটির সভাপতি অধ্যাপক ডা. নাজমুল ইসলাম। তিনি ২৫শে মার্চ পর্যন্ত উমরাহ পালনের জন্য সৌদি আরবে অবস্থান করবেন বলে লিখিত পত্রের মাধ্যমে ভিসিকে জানানোর পরও তার অনুপস্থিতিতে গত ২৩শে মার্চ বর্তমান ভিসি ১২তম সিন্ডিকেট সভা আহ্বান করেন। কমিটির সভাপতি ডা. নাজমুল ইসলাম উপস্থিত না থাকায় নিয়োগ রিপোর্টটির বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়নি। পরবর্তী সিন্ডিকেটের জন্য বিষয়টি ঝুলিয়ে রাখা হয়। ফলে সিন্ডিকেট আহ্বানসহ কমিটিতে প্রেরণ করা রিপোর্ট পর্যালোচনাসহ নানা বিষয়ে এখন আন্দোলনে রয়েছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের আড়াইশ’ কর্মকর্তা ও কর্মচারী। তারা অভিযোগ করেছেন- নতুন ভিসির প্রথম সিন্ডিকেট সভার পর তিনি চৌহাট্টাস্থ কার্যালয়ে অফিস করেননি। এখনো তিনি আসছেন না। অফিস করছেন সিলেট ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ডিন কার্যালয়ে। তিনি পূর্বের ভিসির রেখে যাওয়া স্বৈরাচার দোসরের মতালম্বী মানুষ দিয়ে দৈনিক মজুরির ভিত্তিতে অফিসিয়াল কার্যক্রম পরিচালনা করছেন। বিশ্ববিদ্যালয়ের একাডেমিক নিয়োগপ্রাপ্ত এক কর্মকর্তা মানবজমিনকে জানিয়েছেন- নতুন দায়িত্বপ্রাপ্ত ভিসিকে এখন সঠিক সিদ্ধান্ত নিতে হবে। তাকে দল-মতের ঊর্ধ্বে থেকে সিলেটের স্বার্থ বিবেচনা করে বিশ্ববিদ্যালয়কে পূর্ণাঙ্গ করার সকল কার্যক্রমকে চালু রাখতে হবে। কিন্তু তিনি সেটি না করে এখন অস্থায়ী ক্যাম্পাসে আসছেন না। এতে করে সঙ্কটের সমাধান হবে না বলে জানান তিনি।

তবে বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি প্রফেসর ডা. ইসমাইল হোসেন পাটওয়ারী মানবজমিনকে জানিয়েছেন- বিষয়টি খুবই জটিল। যারা নিয়োগপ্রাপ্ত হয়েছেন তাদেরকে প্রথমে সরে যেতে হবে। আইন তা বলে। এরপর নতুন নিয়োগ। যেহেতু কমিটির একটি প্রস্তাবনা সেটি নিয়েও ভাবা হচ্ছে। পরবর্তী সিন্ডিকেট সভায় এ নিয়ে আলোচনা হবে। ভিসি বলেন- এটি নামে একটি মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়। এখনো অনেক কাজ বাকি। সুতরাং সবার পরামর্শ নিয়ে এগিয়ে যেতে হবে বলে জানান তিনি।