
জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের পর মানসিকভাবে বিপর্যস্ত শিক্ষার্থীদের স্বাস্থ্যসেবা প্রদান করতে যাচ্ছে বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন (ইউজিসি)। প্রতিষ্ঠানটি চায় ‘সামাজিক ও মানসিক স্বাস্থ্য সুরক্ষা’ প্রকল্পের আওতায় এই সেবা দিতে। প্রাথমিকভাবে দেশের ২২টি বিশ্ববিদ্যালয়ের (সরকারি-বেসরকারি) ১০ হাজার শিক্ষার্থীকে এই মানসিক স্বাস্থ্যসেবা দেয়ার পরিকল্পনা নেয়া হয়েছে। এই প্রকল্পের জন্য প্রাথমিক কাজও গুছিয়ে এনেছে ইউজিসি। ইউনেসকোর সহযোগিতায় এই কর্মসূচি বাস্তবায়ন করবে ইউজিসি। ইতিমধ্যে ইউনেসকো প্রতিনিধিদলের সঙ্গে একাধিক বৈঠকও হয়েছে। স্বাক্ষরিত হয়েছে চুক্তি। ইউজিসি বলছে, প্রয়োজনে এই প্রকল্পের পরিসর আরও বাড়ানো হবে। প্রকল্প নিয়ে আগামী বৃহস্পতিবার বৈঠক ডাকা হয়েছে। এ বৈঠকে পরিকল্পনা চূড়ান্ত করা হবে বলে ইউজিসি সূত্র জানিয়েছে।
জুলাই-আগস্টে গণ-অভ্যুত্থানে সামনের সারিতে ছিলেন সরকারি-বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়সহ বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা। আন্দোলনে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর গুলি, আওয়ামী লীগের সন্ত্রাসীদের হামলায় বহু শিক্ষার্থী জীবন দিয়েছেন, আহত হয়েছেন। আহত এই শিক্ষার্থীদের কেউ কেউ এখনো পুরো সুস্থ হয়ে উঠতে পারেননি। কারও কারও অঙ্গহানি হয়েছে। এই অবস্থায় আহত শিক্ষার্থীদের অনেকে ট্রমায় ভুগছেন। এ ছাড়া পাশে থেকে সহপাঠী বা সহযোদ্ধাদের শহীদ হওয়ার দৃশ্য দেখেছেন কেউ কেউ। আহত হওয়া শিক্ষার্থীদের হাসপাতালে নেয়া, চিকিৎসা করানোসহ নানা ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী ছিলেন শিক্ষার্থীরা। এসব শিক্ষার্থীও নানা কারণে ট্রমায় ভুগছেন। বিভিন্ন জরিপে এসব তথ্য উঠে এসেছে। ট্রমার কারণে এসব শিক্ষার্থীদের কেউ কেউ এখন মানসিক স্বাস্থ্যের চিকিৎসাও নিচ্ছেন। ট্রমার কারণে শিক্ষার্থীরা ক্লাস পরীক্ষায় অংশ নিতে পারছেন না বলেও তথ্য মিলেছে।
ইউজিসি বলছে, আন্দোলনের সময়ে নানা ঘটনায় ট্রমায় পড়া শিক্ষার্থীদের স্বাস্থ্যসেবার আওতায় আনা হবে। প্রাথমিক অবস্থায় দেশের সব বিভাগের কিছু শিক্ষার্থী নিয়ে এই কার্যক্রম শুরু হবে। ইউজিসি চায়, শিক্ষার্থীদের মানসিক স্থিতিশীলতা। মানসিক স্বাস্থ্য এবং শিক্ষার্থীর ভবিষ্যৎ পথচলা মসৃণ করার লক্ষ্যে প্রয়োজনীয় কাউন্সিলিং করা হবে। আগামী মাস থেকেই এই কাউন্সিলিং শুরু হতে পারে। বর্তমানে শিক্ষার্থীদের কী ধরনের কাউন্সিলিং প্রয়োজন সেই তথ্য সংগ্রহ শেষে বিশ্লেষণের কাজ চলছে। এই কাউন্সিলিং হবে সরাসরি।
প্রকল্পের দায়িত্বপ্রাপ্ত ইউজিসি সদস্য অধ্যাপক আনোয়ার হোসেন বলেন, আমরা ইউনেসকোর সঙ্গে চুক্তির অংশ হিসেবে অনেকগুলো মিটিং করেছি। শিক্ষার্থীদের মানসিক স্বাস্থ্যের জন্য যেটা প্রয়োজন তার নিড এসিস্ট করেছি। সেটাও শেষ হয়ে গেছে। অনেক শিক্ষার্থী ক্লাস করতে পারছে না, ডিপ্রেশনে আছেন। জুলাই মুভমেন্টের কারণে তারা সংঘর্ষ দেখেছে। অনেকেই রক্ত দেখেছে। যার কারণে কী কী সমস্যা হচ্ছে সেগুলো বের করার চেষ্টা করা হচ্ছে। তথ্য সংগ্রহ শেষ এখন রিপোর্ট চলে আসবে কয়েকদিনের মধ্যেই। আশা করছি তথ্য বিশ্লেষণ করে মডিউল তৈরি করে আমরা আগামী মাস থেকে ট্রেনিং শুরু করতে পারবো।
তিনি আরও বলেন, যেসব ইউনিভার্সিটির শিক্ষার্থীরা সবচেয়ে বেশি ভিকটিম হয়েছে বা আন্দোলনে আহত হয়েছে বা যেসব এলাকায় আন্দোলন বেশি হয়েছে সেসব এলাকায় বেশি গুরুত্ব দেয়া হবে। এসব এলাকার কিছু বিশ্ববিদ্যালয় নির্বাচন করা হয়েছে। ঢাকায়, ঢাকার বাইরে ও বিশেষায়িত বিশ্ববিদ্যালয়গুলোকেও নির্বাচন করা হয়েছে। শুরুতে ১০ হাজার শিক্ষার্থী নিয়ে কাজ হবে। এটার ওপর ভিত্তি করে আরও বড় আকারে যাওয়ার পরিকল্পনা রয়েছে।