Image description

বিশ্বের ক্যাথলিক খ্রিস্টান ধর্মের সর্বোচ্চ নেতা পোপ ফ্রান্সিসের মৃত্যুতে গভীর শোক ও সমবেদনা জানিয়েছেন বাংলাদেশের অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূস।

সোমবার (২১ এপ্রিল) এক শোকবার্তায় তিনি বলেন, “আমরা তার মৃত্যুতে এমন এক পোপ যুগের সমাপ্তি দেখলাম, যা ছিল মানবিক মর্যাদা, আন্তঃধর্মীয় সম্প্রীতি ও প্রান্তিক মানুষের ন্যায়বিচার আদায়ের গুণাবলিতে পরিপূর্ণ।

প্রধান উপদেষ্টা আরও বলেন,“তার নেতৃত্ব ধর্মীয় সীমার বাইরে গিয়েও লাখ লাখ মানুষকে আরও অন্তর্ভুক্তিমূলক, সহনশীল ও মানবিক বিশ্ব গড়ে তোলার প্রচেষ্টাকে অনুপ্রাণিত করেছিল।”

অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস বলেন, “আমি পোপ ফ্রান্সিসের সঙ্গে বহুবার দেখা করতে এবং শান্তি, মানবিক মর্যাদা ও পরিবেশ সুরক্ষার লড়াইয়ে তার সঙ্গে ঘনিষ্ঠভাবে কাজ করতে পেরে সম্মানিত বোধ করছি।”

রোমের বিশপ হিসেবে তিনি বিশ্বব্যাপী ক্যাথলিক চার্চ এবং সার্বভৌম ভ্যাটিকান সিটির প্রধান হিসেবে দায়িত্ব পালন করে আসছিলেন। ২০১৭ সালে বাংলাদেশেও এসেছিলেন পোপ ফ্রান্সিস।

সেই সফরের কথা তুলে ধরে প্রধান উপদেষ্টা তার শোকবার্তায় বলেন, “পোপ ফ্রান্সিসের মৃত্যুতে বিশ্ব সম্প্রদায়ের শোকে বাংলাদেশের মানুষও শামিল হয়েছে, যারা তার ২০১৭ সালের আগমনের জন্য সম্মানিত বোধ করে।”

ড. ইউনূস বলেন,“এই দুঃখের সময়ে আমরা ক্যাথলিক চার্চ এবং এ ধর্মে বিশ্বাসী মানুষের সঙ্গে একাত্মতা প্রকাশ করছি। সেই সঙ্গে তার শিক্ষার গভীর প্রভাব এবং সবার প্রতি তার মানবিক আচরণকে স্মরণ করছি।”

প্রধান উপদেষ্টা বলেন, “তার বিদেহী আত্মা চির শান্তিতে থাকুক। তিনি দয়া ও মানবিকতা সম্পন্ন যে ঐক্যবদ্ধ বিশ্ব গড়ার স্বপ্ন দেখতেন, আমরা যেন তার প্রতি শ্রদ্ধা জানানো অব্যাহত রাখতে পারি।”

ভ্যাটিকানের কাসা সান্তা মার্টায় নিজ বাসভবনে সোমবার স্থানীয় সময় সকাল ৭টা ৩৫ মিনিটে মারা যান তিনি।

পোপ ষোড়শ বেনেডিক্ট পদত্যাগ করার পর ২০১৩ সালের মার্চে কার্ডিনাল জর্জ মারিও বার্গোগ্লিও ক্যাথলিক চার্চের নেতৃত্বের জন্য নির্বাচিত হন।

নিউমোনিয়ায় আক্রান্ত পোপ ফ্রান্সিসকে এ বছরের ১৪ ফেব্রুয়ারি হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছিল। পরে বেশ কয়েকবার তার শারীরিক অবস্থা বেশ গুরুতর পর্যায়ে চলে যায়। ভ্যাটিকান জানায়, শ্বাসপ্রশ্বাস-সংক্রান্ত জটিলতার কারণে পোপ ফ্রান্সিসকে ভেন্টিলেশনে রাখা হয়েছিল। কদিন আগে হাসপাতাল থেকে বাড়ি ফেরেন পোপ।

ভ্যাটিকানের দাপ্তরিক ওয়েবসাইট “দি হোলি সি”–এর তথ্যমতে, পোপ ফ্রান্সিসের আগের নাম জর্জ মারিও বারগোগ্লিও। জন্ম ১৯৩৬ সালের ১৭ ডিসেম্বর, আর্জেন্টিনার বুয়েনস এইরেসের। বাবা মারিও আর রেগিনা সিভোরি। ইতালীয় অভিবাসী বাবা মারিও ছিলেন রেলওয়ের হিসাবরক্ষক।

কেমিস্ট হিসেবে প্রশিক্ষণ নেওয়ার পর ধর্মের পথে পা বাড়ান জর্জ মারিও। পরবর্তী সময়ে তিনি দর্শন ও ধর্মতত্ত্বে পড়াশোনা করেন। ১৯৬৯ সাল ধর্মযাজক হন। ১৯৯৮ সালে আর্জেন্টিনায় আর্চবিশপ হন তিনি।

বয়স ও শারীরিক অসুস্থতার কারণে ২০১৩ সালে তৎকালীন পোপ ষোড়শ বেনেডিক্ট পদ ছেড়ে দিলে পোপ নির্বাচিত হন জর্জ মারিও। নতুন নাম নেন ফ্রান্সিস। দক্ষিণ আমেরিকার কোনো দেশ থেকে নির্বাচিত প্রথম পোপ তিনি।

১২ বছর ধরে রোমান ক্যাথলিক চার্চের নেতা হিসেবে দায়িত্ব পালনকালে পোপ ফ্রান্সিস বেশ কয়েকবার হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন। ২১ বছর বয়সে তার একটি ফুসফুসের কিছু অংশ কেটে ফেলতে হয়েছিল।